এক্সপ্লোর
লোকসভা ভোটে বাড়ি বাড়ি প্রচারে বিজেপির ‘টি-২০’ টিম, চা-জলখাবার খেয়ে বিপদে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে ভোটারদের মন জয়ের কৌশল, যা খুশি করুক, মানুষ প্রত্যাখ্যান করবে, পাল্টা তৃণমূল

ত্রিপুরার লাল দুর্গে গেরুয়া ঝড়। মোদি ম্যাজিকে আড়াই দশক পরে বাম দুর্গে পতন। সরকার গঠনের পথে বিজেপি। এখনও পর্যন্ত বিজেপি জোটের প্রাপ্ত ভোট ৫০ শতাংশ। সিপিএমের প্রাপ্ত ভোট এখনও পর্যন্ত ৪৫ শতাংশ। দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসতে চলেছে বিজেপি আইপিএফটি জোট। উত্তর-পূর্বের ছোট্ট এই রাজ্যে বড়সড় রাজনৈতিক পালাবদল ঘটিয়ে কার্যত শূন্য থেকে শিখরে পৌঁছল বিজেপি।
কলকাতা: লোকসভা ভোটে টি-টোয়েন্টি স্ট্র্যাটেজিতে নিতে চাইছে বিজেপি। তাদের লক্ষ্য, প্রতিটি বুথে কুড়ি সদস্যের একটি করে টিম তৈরি করা। ভোটারদের বাড়ি গিয়ে প্রচারের দায়িত্ব থাকবে এই টিমের উপর। ঘর ঘর দস্তক অর্থাত, মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছনো। কয়েক বছর আগে বিহার বিধানসভা নির্বাচনের সময় নীতীশ কুমারের জেডিইউয়ের জন্য এই ফর্মুলা তৈরি করেছিলেন নির্বাচনী রণনীতিকার প্রশান্ত কিশোর। ২০১৯ সালে বাংলা-বিজয়ের লক্ষ্যে এবার ‘পড়শি রাজ্যের সেই ফর্মুলাই’ প্রয়োগ করতে চলেছেন অমিত শাহ। বিজেপি সূত্রে খবর, রাজ্য কমিটিগুলিকে বলা হয়েছে লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রতিটি বুথে কুড়ি জনের একটি টিম তৈরি করতে হবে। দলের সব স্তরের জন প্রতিনিধিদের এই দলের সদস্য হতে হবে। এই কুড়ি জনের কাজ হবে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছনো। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ, এই টি টোয়েন্টি টিমকে অন্তত ৪০০টি বাড়িতে পৌঁছতেই হবে। ভোটের আগে পর্যন্ত এই বাড়িগুলির সঙ্গে নিবিড় ও নিরবিচ্ছিন্ন জনসংযোগ চালিয়ে যেতে হবে। চা-জলখাবার খেয়ে বিপদে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে মন জয় করতে হবে ভোটারদের। আস্থা অর্জনের সঙ্গে সঙ্গেই চলবে রাজনৈতিক প্রচার। বুথ পিছু অন্তত ১০০টি পরিবারের স্মার্ট ফোনে প্রধানমন্ত্রীর নামাঙ্কিত ‘নমো অ্যাপ’ ডাউনলোড করে দিতে হবে। নমো অ্যাপের ভিডিও ও তথ্যের মাধ্যমে ভোটারদের কাছে কেন্দ্রীয় জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের সুফল তুলে ধরবেন বিজেপির টি টোয়েন্টি টিমের সদস্যরা। সেইসঙ্গে মোদি সরকারের আগামী দিনে কী কী প্রকল্প নিতে চলেছে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাও তুলে ধরতে হবে ভোটারদের সামনে। এই কাজের জন্য টিমের বাছাই করা ২০ জন সদস্য প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষণের মধ্যে থাকবেন। ‘টি টোয়েন্টি টিমে’র সদস্যদের মোবাইল ফোনে দেওয়া হবে বিশেষ একটি অ্যাপ্লিকেশন।কী কী বিষয়ে প্রচার করতে হবে, তার সবিস্তার বিবরণ থাকবে ওই অ্যাপে। বিভিন্ন ইস্যুতে বিরোধীদের আক্রমণের জবাব কীভাবে দিতে হবে, কোন তথ্য পরিসংখ্যান পেশ করতে হবে, অ্যাপ খুললেই তা দেখতে পাবেন বিজেপির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা। সরাসরি দিল্লি থেকে এই ‘মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন’ নিয়ন্ত্রণ করা হবে। বিরোধীরা অবশ্য বিজেপির এই কর্মসূচিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কটাক্ষ, টি টোয়েন্টি কেন, যা খুশি করুক। মানুষ ওদেরকে প্রত্যাখ্যান করবে। কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতা মনোজ চক্রবর্তী বলেছেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে কী আর বলবে! মিত্রো বলে কড়া নাড়লেই মানুষ দৌড়ে পালাবে ভয়ে। কটাক্ষের সুরে সিপিএমের বক্তব্য, জনসমর্থনে ভাঁটা পড়ছে দেখেই এখন মরিয়া হয়ে উঠেছে গেরুয়া শিবির। মানুষ এই সরকারের ওপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে। ওরা মরিয়া হয়ে উঠবেই, বলেছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। অনেকেই আবার বলছেন, রাজ্যে বুথ রয়েছে প্রায় ৭২ হাজার। সেক্ষেত্রে প্রতি বুথে ২০ সদস্যের দল তৈরি করতে হলে, ৭২ হাজার বুথের জন্য মোট ১৪ লাখ ৪০ হাজার জন কর্মীর প্রয়োজন! বাংলায় গেরুয়া শিবিরের এই বিপুল সংখ্যক একনিষ্ঠ কর্মী কি আদৌ আছে? অতীতেও তো বুথ স্তরের জন্য যে লক্ষ্যমাত্রা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ঠিক করে দিয়েছিল, তার সম্পূর্ণ বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছিল বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব? এবার কি সেই টার্গেট পূরণ সম্ভব? প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলে।
খবর (News) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে
আরও পড়ুন






















