শিশুপাচারকাণ্ড: নাম জড়িয়ে পড়ায় সরকারি আধিকারিককে শো-কজ, আরও ৪ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ জোগাড় সিআইডি-র
কলকাতা ও জলপাইগুড়ি: জলপাইগুড়ি শিশুপাচারকাণ্ডে এই প্রথম জড়িয়ে গেল সরকারি আধিকারিকের নাম। এই ঘটনায় জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক সাস্মিতা ঘোষকে শো কজ করেছেন জেলাশাসক। পাশাপাশি, এই কাণ্ডে আরও চার চিকিৎসক জড়িয়ে রয়েছেন বলে দাবি করেছে সিআইডি। সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ জোগাড়ের কাজ চালাচ্ছেন গোয়েন্দারা। শিশুপাচারকাণ্ডে ফের মিলল চিকিৎসক-যোগ। সিআইডি সূত্রে দাবি, জলপাইগুড়ির হোম থেকে শিশুপাচারের ঘটনায় চারজন চিকিৎসকের জড়িত থাকার কথা জানা গিয়েছে। এই চিকিৎসকরা কী করতেন? গোয়েন্দা সূত্রে দাবি, ধৃত চন্দনা চক্রবর্তীর হোম অর্থাৎ বিমলা শিশু গৃহে শিশুদের অত্যন্ত অযত্নে ফেলে রাখা হত। তবে এই হোমের ধরাবাঁধা কয়েকজন চিকিৎসক ছিলেন, যাঁরা অপুষ্টিতে ভোগা শিশুগুলিকে শারীরিকভাবে সুস্থ, সতেজ বলে সার্টিফিকেট দিতেন। সেই সার্টিফিকেট দেখিয়েই মোটা টাকার বিনিময়ে শিশুগুলিকে বিক্রি করা হত। জলপাইগুড়ির সিডব্লুসি চেয়ারপার্সন বেবি উপাধ্যায় বলেন, যে শিশুগুলিকে উদ্ধার করি, অপুষ্ট ছিল। নার্সিংহোমে ন’দিন থাকার পরই ওজন বেড়ে যায়। সিআইডি সূত্রে দাবি, এই চিকিৎসকরা চাহিদা অনুযায়ী শিশুগুলির বয়সও লিখে দিতেন। যেসমস্ত অবিবাহিত তরুণীরা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়তেন, তাদের বিভিন্ন নার্সিংহোমে নিয়ে গিয়ে প্রসব করানো এবং তারপর সদ্যোজাতদের হোমে পাচারের কাজও অনেক সময় এই চার চিকিৎসকই করতেন বলে অভিযোগ। এখনও পর্যন্ত জলপাইগুড়ি শিশুপাচারকাণ্ডে কোনও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়নি। গোয়েন্দা সূত্রে দাবি, তার আগে সন্দেহভাজন চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করে নিতে চাইছেন। যেভাবে তাঁরা এগিয়েছিলেন বাদুড়িয়া, কলেজ স্ট্রিট কিংবা বেহালার ক্ষেত্রে। দক্ষিণবঙ্গের শিশুপাচারকাণ্ডেও জড়িয়েছে একাধিক চিকিৎসকের নাম। ইতিমধ্যে এই ঘটনায় সিআইডি যে চার্জশিট দিয়েছে, তাতেও চারজন চিকিৎসকের নাম রয়েছে। এর মধ্যে দু’জন এমবিবিএস। কলেজ স্ট্রিটের শ্রীকৃষ্ণ নার্সিংহোমের চিকিৎসক সন্তোষ সামন্ত এবং সল্টলেকের চিকিৎসক দিলীপ ঘোষ। এছাড়াও দুই হাতুড়ে চিকিৎসকেরও নাম রয়েছে চার্জশিটে। তবে, শিশুপাচারকাণ্ডে যে শিক্ষক ও চিকিৎসকরাই জড়িয়ে রয়েছেন তা নয়। এবার প্রথম জলপাইগুড়ি থেকে শিশুপাচারের নেপথ্যে সরকারি আধিকারিকদের মদত রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। সিআইডি সূত্রে দাবি, প্রাথমিক তদন্তে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। আর এই প্রেক্ষিতে জলপাইগুড়ি জেলার শিশু সুরক্ষা আধিকারিক সাস্মিতা ঘোষকে শোকজও করেছেন জেলাশাসক রোচনা ভগত। তিনি বলেন, (সাস্মিতাকে) শোকজ করেছি। কেন করেছি। ওনার ওপর মনিটরিং ছিল। অভিযোগ ছিল। শোকজের জবাব পেলে পরের পদক্ষেপ। সিডব্লুসি সদস্য সুবোধ ভট্টাচার্য বলেন, সবক’টা বাচ্চাকে বেআইনিভাবে দত্তকের নামে বিক্রি করা হয়েছে বলে নিশ্চিত। জেলাশাসক ওনাকে শোকজ করেছেন ভাল কথা। এতদিন পরে করেছেন। এবং সিআইডি তদন্ত করছে করে দেখুক। সিআইডি সূত্রে দাবি, জলপাইগুড়ির হোম থেকে ১৭ থেকে ২০টি শিশুকে দত্তক দেওয়ার নামে বিক্রি করা হয়েছে। কিন্তু, তার জন্য প্রয়োজনীয় এলএফএ সার্টিফিকেট ছিল না। আর নথি ছাড়া শিশু বিক্রির এই কাজ সাস্মিতা ঘোষের মদতেই হয়েছে বলে অভিযোগ। যদিও, সাস্মিতা নিজে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে অনেকে বলছেন, এই শিশুপাচারকাণ্ডে যে সরকারি আধিকারিকরা জড়িত, সেই ইঙ্গিত তো হোমের কর্ণধারের এই কথাতেই মিলেছে। সিআইডি সূত্রে দাবি, সাস্মিতা ঘোষ অনেক আগে থেকেই হোমের কর্ণধার চন্দনা চক্রবর্তীকে চিনতেন। চন্দনাই প্রভাব খাটিয়ে জলপাইগুড়িতে সাস্মিতার নিয়োগের বন্দোবস্ত করেন। এই প্রেক্ষিতে আরেকটি তথ্যও সামনে এসেছে। জেলার কোন হোম কত সরকারি অনুদান পাবে, পদাধিকার বলে তা ঠিক করতেন শিশুসুরক্ষা আধিকারিক সাস্মিতা। চন্দনার সঙ্গে পরিচিতির কারণে তাঁর হোমকে সাস্মিতা বাড়তি কোনও টাকা পাইয়ে দিয়েছিলেন কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।