(Source: ECI/ABP News/ABP Majha)
Cyclone Yaas Effect: মালদায় ধানের বস্তা চাপা পড়ে মৃত্যু দিদিমা, দুই নাতির
দুর্যোগের রাতে তখন মুহূর্মুহূ গর্জন করছে মেঘ। ভয়ে দিদিমার স্নেহের আঁচলে মুখ লুকিয়েছিল দুই নাতি। জীর্ণ মাটির বাড়িতে দিদিমার আঁচলকে নিরাপদ আশ্রয় ভেবে গভীর ঘুমে তলিয়ে গিয়েছিল তারা।
করুণাময় সিংহ ও অভিজিৎ চৌধুরী, মালদা: দুর্যোগের রাতে মাচার ওপর থেকে ধানের বস্তা পড়ে গিয়ে মৃত্যু হল দিদিমা ও দুই নাতির। মর্মান্তিক এই ঘটনা ঘটেছে মালদার চাঁচোলের লোলিয়াবাড়ি গ্রামে। পরিবার সূত্রে খবর, প্রচণ্ড বৃষ্টিতে মাটির বাড়ির খুঁটি বসে যাওয়ায় ভেঙে পড়ে মাচা। তার জেরেই তিনজনের প্রাণহানি।
বাইরে তখন অঝোর ধারায় চলছে বৃষ্টি। মুহূর্মুহূ গর্জন করছে মেঘ। ভয়ে দিদিমার স্নেহের আঁচলে মুখ লুকিয়েছিল দুই নাতি। জীর্ণ মাটির বাড়িতে দিদিমার আঁচলকে নিরাপদ আশ্রয় ভেবে গভীর ঘুমে তলিয়ে গিয়েছিল তারা।
কিন্তু সেই ঘুম আর ভাঙল না। মাচা থেকে গড়িয়ে পড়ে যাওয়া ধানের বস্তা ঘুমকে বদলে দিল মৃত্যুতে। দিদিমার সঙ্গে প্রাণ হারাল তাঁর দুই আদরের নাতি।
রাজ্যে ইয়াস পরবর্তী প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে এমনই মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার সাক্ষী হল মালদার চাঁচোলের লোলিয়াবাড়ি গ্রাম। মৃত দুই শিশুর বাবা দশরথ টুডু বলেন, ওরা ঘুমিয়েছিল। ধানের বস্তা পড়ে যায় তিনজনের ওপর। তাতেই মৃত্যু হয়।
প্রকৃতির রুদ্ররোষের সামনে দীণদরিদ্রের ভাঙাচোরা বাড়ি খড়কুটোর মতো পলকা। পরিবার সূত্রে খবর, ঘরের মধ্যে মাচা করে ধানের বস্তা তোলা ছিল। প্রবল বৃষ্টিতে খুঁটি বসে যাওয়ায় ধান বোঝাই মাচা ভেঙে পড়ে। আর তাতেই ঘটে দুর্ঘটনা।
একসঙ্গে প্রাণ হারালেন একই পরিবারের তিনজন। দিদিমা তালু সোরেন এবং তাঁর দুই নাবালক নাতি রোহিত টুডু ও রাহুল টুডু।
শুক্রবার সকালে গ্রামে গিয়ে মৃতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক আবদুর রহিম বক্সী। বলেন, ভীষণই মর্মান্তিক ঘটনা। সরকারি ভাবে যা যা সাহায্য করার, সবই করা হবে।
দুর্যোগে গ্রামীণ এলাকায় যখন এতবড় পারিবারিক বিপর্যয়, তখন শহরাঞ্চলেও ভোগান্তি অব্যাহত। রথবাড়িতে পুরসভার পাইকারি বাজার জলমগ্ন। আড়ত ছেড়ে রাস্তায় উঠে এসেছেন মাছ ব্যবসায়ীরা।
বিমল হালদার নামে এক মাছ ব্যবসায়ী বলেন, শহরের নিকাশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পুরো মার্কেট ডুবে গিয়েছে। আরেক মাছ ব্যবসায়ী গোলাম মোর্তাজা বলেন, আমাদের মাছ বাজারে এক কোমর জল, ব্যবসা করা সম্ভব নয়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায় আড়াইশো কোটি টাকার ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে ব্যবসায়ী সংগঠন। মালদা মার্চেন্টস চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদক জয়ন্ত কুণ্ডু বলেন, আমার জেলাতে প্রায় ২৫০ কোটির ক্ষতি হয়েছে। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এই তথ্য তুলে ধরব। অনুরোধ করব, এই ব্যবসায়ীদের যাতে রিলিফ, অনুদান দেওয়া হয়।
ভারী বৃষ্টির জেরে মহানন্দী নদীতে জলস্তর বেড়েছে। পুরাতন মালদার সাহাপুর এলাকায়, মহানন্দা নদীর বাঁধের ওপর রাস্তার একাংশ বসে গিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার সকালে মহকুমা শাসককে সঙ্গে নিয়ে সরেজমিনে এলাকা পরিদর্শন করেন জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র। তিনি বলেন, সময় লাগবে, তবে জল নেমে যাবে। জল বের করা চেষ্টা চলছে। পাম্প বসানো হচ্ছে। সময় লাগবে, কিন্তু আজকেই করা হবে।
কোথাও মৃত্যু, কোথাও প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই--- ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের লেজের ঝাপটাতেই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে অসংখ্য মানুষকে।