Durgapur : মেরামতির জন্য বন্ধ দুর্গাপুর পুরসভার একমাত্র বৈদ্যুতিক চুল্লি, বিপাকে শ্মশানযাত্রীরা
মেরামতির কারণেই চলতি মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে ওই চুল্লি। যার ফলে বেশ বিপাকে এলাকাবাসী। পাশাপাশি এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্কও।
মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর (পশ্চিম বর্ধমান) : করোনা অতিমারির মধ্যে আবার মৃতদেহ সৎকারের সমস্যা দুর্গাপুরে। বীরভানপুর মহাশ্মশানে পুরসভার একমাত্র বৈদ্যুতিক চুল্লি চুল্লির মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের যে কাজের জেরে চলতি মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে ওই চুল্লি। যার ফলে বেশ বিপাকে এলাকাবাসী। পাশাপাশি এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্কও।
দুর্গাপুরের একমাত্র শ্মশানে প্রতিদিন ভোরবেলা থেকে রাত পর্যন্ত চলে মৃতদেহ সৎকারের কাজ। কোভিড পরিস্থিতিতে মৃতদেহ সৎকারের চাপ আরও বেড়েছে। কিন্তু হঠাৎই মেরামতির কারণে শ্মশান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন শ্মশানযাত্রীরা। কারণ, এবার কোভিডে মৃত ব্যক্তিদের দেহ সৎকারের জন্য দুর্গাপুর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে আসানসোলে নিয়ে যেতে হবে পরিজনদের। শুধু কোভিডে মৃতদেহ সৎকারের কাজই নয়, একমাত্র শ্মশান হওয়ায় বিপাকে এলাকার সমস্ত মানুষ।
সূত্রের খবর, প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ২৫টি মৃতদেহ আসে বীরভানপুর মহাশ্মশানে। শুধু দুর্গাপুর থেকেই নয়। দুর্গাপুর এবং তার আশপাশের এলাকা এমনকি বাঁকুড়া থেকেও মৃতদেহ সৎকারের জন্য নিয়ে আসা হয়। মাস দুয়েক আগেও এই শ্মশানের বৈদ্যুতিক চুল্লির ধাতব বডি ভেঙে যাওয়ায় বিপত্তি বেধেছিল। তখনও একইরকম সমস্যা দেখা দিয়েছিল। কোনওরকমে সেই ধাতব বডি সারিয়ে কাজ চলছিল। কিন্তু এরইমধ্যে ফের শ্মশান একেবারেই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফের বিপাকে শ্মশানযাত্রীরা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, একদিকে কাঠে সৎকার করতে খরচা বেশ কয়েক হাজার টাকা। অন্যদিকে প্রায় তিন থেকে চার ঘন্টা লেগে যায় দেহ সৎকার করতে। অন্যদিকে, বৈদ্যুতিক চুল্লি হলে খরচাও কম হয় আর সময়ও কম লাগে।
এই ঘটনায় সুর সপ্তমে চড়িয়েছে জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। দলের জেলা সম্পাদক অভিজিৎ দত্ত অভিযোগ জানিয়েছেন যে, শ্মশানেও সিন্ডিকেট চলছে। দুর্গাপুর বীরভানপুর মহাশ্মশানে সিন্ডিকেট রাজ চালাচ্ছে তৃণমূল। সেজন্য এই সমস্যা মিটছে না। ফলে দুর্ভোগ বাড়ছে সাধারণ মানুষের,আর এর জন্য দায়ী তৃণমূল পরিচালিত দুর্গাপুর নগর নিগম। বিজেপির পাল্টা সুর চড়িয়েছে তৃণমূলও। দুর্গাপুর নগর নিগমের চার নম্বর বোরো চেয়ারম্যান সুনীল চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, 'এটা রাজনীতির কোনো বিষয় নয়। তাই এখানে অহেতুক রাজনীতির রং লাগিয়ে কোনও লাভ নেই। যন্ত্র বিকল হয়ে যাওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। মেরামতির কাজ চলছে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি সমস্যা মিটে যাবে।'
শ্মশানের বৈদ্যুতিক চুল্লি সারাইয়ের দায় নিয়ে দড়ি টানাটানির এই খেলায় এখন বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে কোভিড আক্রান্ত মৃতদের পরিবার। কিভাবে মৃতদেহ সৎকার হবে এখনও তা বুঝে উঠতে পারছেনা কেউ। স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি তুলছেন, আগে গ্রামে গঞ্জে শ্মশানগুলির ভেঙে পড়া পরিকাঠামো ঠিক করুক সরকার বা স্থানীয় পুর প্রশাসন। নাহলে এই সমস্যা চলতেই থাকবে। বীরভানপুরের এই মহাশ্মশানের বৈদ্যুতিক চুল্লি বাম জামানায় তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এখন বেশিরভাগ সময় বৈদ্যুতিক চুল্লির ইলেট্রিক হিটার বিকল হয়ে পড়ে থাকে। বহুদিন ধরেই স্থানীয় বাসিন্দারা দাবী জানাচ্ছেন যে এই শ্মশানের পাশেই আরো একটি চুল্লি তৈরি হোক।