নিখরচার অ্যাম্বুলেন্স, করোনা রোগীদের প্রাণ বাঁচাতে ভ্যান নিয়ে ছুটে চলেছেন ৭০ বছরের বৃদ্ধ
অ্যাম্বুল্যান্সের কালোবাজারির জেরে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারেননি। চোখের সামনে শেষ হয়ে যেতে দেখেছেন নিজের করোনা আক্রান্ত মাকে।
কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান: অ্যাম্বুল্যান্সের টাকা দিতে পারেননি বলে, মাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারেননি। চোখের সামনে মারা যেতে দেখেছেন করোনা আক্রান্ত মাকে। বিনা চিকিৎসায় আর কেউ মারা যাক, চান না বর্ধমানের শেখ রবিউল। করোনা রোগীদের হাসপাতালে পৌঁছতে ভ্যান নিয়েই ছুটছেন ৭০ বছরের বৃদ্ধ।
অ্যাম্বুল্যান্সের কালোবাজারির জেরে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারেননি। চোখের সামনে শেষ হয়ে যেতে দেখেছেন নিজের করোনা আক্রান্ত মাকে। দেখেছেন, করোনা আক্রান্ত বাবাকে ফেলে ছেলেকে পালিয়ে যেতে, দেখেছেন, বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে। এই সব দৃশ্য দেখেই বর্ধমানের বাসিন্দা, ৭০ বছরের শেখ রবিউল শপথ নেন, এভাবে আর কাউকে মরতে দেবেন না।
আর তারপর থেকেই করোনা রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছতে ভ্যান নিয়ে ছুটে চলেছেন তিনি। বর্ধমান শহরের বাবুরবাগের শেখ রবিউল হক পেশায় রিকশাচালক। করোনা রুগিদের বাঁচাতে, তিন হাজার টাকা খরচ করে, নিজের রোজগারের একমাত্র অবলম্বন, রিকশকে ভ্যানে পরিণত করেছেন। সেই ভ্যানের গায়ে পোষ্টার ও মোবাইল নম্বর লিখে শুরু করেছেন পরিষেবা। ফোন পেলেই, নিখরচায় ভ্যানে করে হাসপাতালে পৌঁছে দিচ্ছেন করোনা রোগীকে।
রবিউল জানিয়েছে, 'তারপর রোজার সময় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান নিজের মা। সেই সময় অ্যাম্বুলেন্স করে মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভাড়া চাওয়া হয় তিন হাজার টাকা। হাসপাতালে নিয়ে যাবার আগে মারা যান মা।'
পূর্ব বর্ধমান বাবুরবাগের রিকশ চালক শেখ রবিউল হক বলছেন, হাল ছাড়ব না, মাটি কামড়ে পড়ে থাকব, পিছিয়ে যাওয়ার লোক নই। ফোন এলে খুশি হই। দেখিয়ে দিতে চাই ৭০ বছরের বুড়ো কী না পারে।
তাঁর মাথা গোঁজার আশ্রয় বলতে, অ্যাসবেস্টসের-চাল দেওয়া একটা মাটির ঘর। পরিবারে তিন সদস্য। রবিউল, স্ত্রী ও ছেলে। রোজগার এখন কিছুই নেই, চেয়েচিন্তে সংসার চলছে। তবে তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই বৃদ্ধ রবিউলের।
বর্ধমান শহরের নার্স কোয়ার্টার মোড়ে সারাদিন ভ্যান নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। ডাক পড়লেই ছুটে চলেন করোনা রোগীকে পৌঁছতে। সবমিলিয়ে বুড়ো হাড়ের ভেলকিই এখন সহায়, এলাকার গরিব করোনা আক্রান্তদের।