মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ‘হতবাক’ রাজ্যপাল

কলকাতা: রাজ্যের প্রশাসনিক সদরে বসে সাংবিধানিক প্রধানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু এর আগে ঠিক কী ঘটেছিল?
উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গায় দু’দিন ধরে চলা হিংসার ঘটনা নিয়ে মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ রাজভবনে যায় বিজেপির প্রতিনিধি দল। সঙ্গে ছিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রতিনিধিরা। সূত্রের খবর, অভিযোগের স্বপক্ষে তাঁরা বেশ কিছু স্টিল, ভিডিও রাজ্যপালের হাতে তুলে দেন। সূত্রের খবর, এরপরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করেন কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। বিজেপি সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে রাজ্যপাল বলেন, বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। পুলিশের গাড়িতেও আগুন লাগানো হয়েছে।
প্রত্যুত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি গোটা বিষয়টাই জানেন, সোমবার রাতে ঘুমোতে পারেননি।
রাজ্যপাল তখন প্রশ্ন করেন, আইনশৃঙ্খলা কার হাতে? এটা তো আপনারই তো হাতে! তাহলে আপনি (মুখ্যমন্ত্রী)তা সামাল দিতে পারছেন কই?
এরপরই দু’জনের কথোপকথন শেষ হয়ে যায়। অন্যদিকে, রাজভবন ও নবান্ন সূত্রে খবর, বিজেপি, আরএসএস ও ভিএইচপি প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করার পর দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করেন রাজ্যপাল।
তখন নবান্নর কনফারেন্স রুমে কালীঘাট মন্দিরের সংস্কার নিয়ে বৈঠক করছিলেন মমতা।
মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, শোভন চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের পাশাপাশি বৈঠকে ছিলেন মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনার।
রাজভবন ও নবান্ন সূত্রে খবর, রাজ্যপালের ফোন পেয়েই বৈঠক ছেড়ে বাইরে যান মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যপাল ফোনে তাঁকে প্রশ্ন করেন, বসিরহাটের পরিস্থিতি এরকম খারাপ হল কেন? আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ কেন?
প্রত্যুত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা গোটা বিষয়টি জানি। সোমবার সারারাত জেগে ছিলাম। পুলিশ রাতভর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছে।
রাজভবন ও নবান্ন সূত্রে খবর, এরপরই রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, তাহলে আধা সেনা নামানো হচ্ছে না কেন?
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগে পুলিশ কী করে, সেটা দেখি, তারপর বিষয়টি নিয়ে ভাববে রাজ্য সরকার।
রাজ্যপাল তখন বলেন, প্রশাসন একতরফাভাবে চলছে।
কথোপকথন শেষ করে ফের কনফারেন্স রুমে চলে আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গোটা বিষয়টি মন্ত্রী ও ঘনিষ্ঠদের জানান। আর তারপরই সাংবাদিক বৈঠক! রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠকের প্রতিক্রিয়ায় রাজভবনের তরফে জারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে,সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর ভাষা ও ভঙ্গীতে রাজ্যপাল হতবাক। মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালের কথপোকথন গোপনীয় বিষয়, তা প্রকাশ্যে না আসাই প্রত্যাশিত ছিল। কথপোকথনে এমন কিছু ছিল না, যাতে মুখ্যমন্ত্রীঅপমানিত কিংবা অসম্মানিত বোধ করেন। তাঁকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, এমন ভাবার মতোও কিছু ছিল না কথপোকথনে।
রাজ্যপাল শুধু মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছেন, যে কোনও প্রকারে যেন আইনশৃঙ্খলা ও শান্তি বজায় থাকে। যিনি সাংবিধানিক পদে আসীন তাঁর প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করেন রাজ্যপাল। রাজ্যপাল সামগ্রিকভাবে গোটা রাজ্যের অভিভাবক, কোনও একটি দল বা সমাজের বিশেষ অংশের নন। রাজ্যের কোথাও কোনও গুরুতর ঘটনা ঘটলে, তা মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আনা রাজ্যপালের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। রাজ্যপাল নির্বাচক দর্শক হয়ে থাকতে পারে না।
রাজভবন সূত্রে দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পরই রাজ্যপাল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোন করেন। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালকে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানোর জন্য উদ্যোগ নিতে বলেছিলেন। সেইমতো রাজনাথকে কেশরীনাথ ত্রিপাঠী বলেন, রাজ্য চাইলে বাহিনী পাঠানোর উদ্যোগ নিক কেন্দ্র।
বিজেপি সূত্রে খবর, বাদুড়িয়া-বসিরহাটের পরিস্থিতি নিয়ে এদিন দিলীপ ঘোষের সঙ্গেও ফোনে কথা বলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে যে সংঘাতের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে, তা নিয়েও দু’জনের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। সূত্রের খবর, দিলীপ ঘোষকে রাজনাথ সিংহ বলেছেন, পরিস্থিতির ওপর কেন্দ্রীয় সরকার তীক্ষ্ণ নজর রাখছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে কেন্দ্রের তরফ থেকে যে যে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, তা নেওয়া হবে। ওই এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে।
এর আগে সকালে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন রাজনাথ সিংহ। সূত্রের খবর, দার্জিলিংয়ের পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চান রাজনাথ। তখন খানিকটা উষ্মার সুরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পাহাড়ের জন্য ২০দিন আগে তিনি অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইলেও, এখনও কেন্দ্র তা দেয়নি।






















