দার্জিলিং নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি অতীত, একসুর মমতা-চামলিঙের
সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খেলেন গুরুঙ্গ, খারিজ মামলা অব্যাহতির আবেদন
দার্জিলিংও নয়াদিল্লি: সংঘাতের রেশ কাটিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেদিন সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসলেন, সেদিনই সুপ্রিম কোর্টে জোরাল ধাক্কা খেলেন বিমল গুরুং। শুক্রবার তাঁর আর্জি খারিজ করে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
ইউএপিএ-তে অভিযুক্ত পলাতক গুরুংয়ের আইনজীবী সর্বোচ্চ আদালতে অভিযোগ করেন, রাজ্য সরকার পাহাড়ে গায়ের জোর প্রয়োগ করছে। গুরুং এবং মোর্চা সদস্যদের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ যে মামলাগুলি দায়ের করেছে সেগুলির তদন্তভার সিবিআইকে দেওয়ার আর্জিও জানান গুরুংয়ের আইনজীবী। কিন্তু, সেই আবেদন খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট সাফ জানিয়েছে, পাহাড়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি রাজ্য সরকার।
যা করেছে, তা সাংবিধানিক এবং আইনি গণ্ডির মধ্যে থেকেই করেছে। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব রাজ্যের। সাধারণ মানুষের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা করতে তাদের যথাযথ পদক্ষেপ নিতেই হয়। এটা ভাবা যায় না যে শুধুমাত্র আবেদনকারী (বিমল গুরুঙ্গ) এবং তাঁর সমর্থকদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ নিজের গাড়ি সহ বিভিন্ন সম্পত্তি নষ্ট করবে।রাজ্যের দায়ের করা বিভিন্ন মামলা থেকে অব্যাহতির যে আবেদন গুরুং জানান, তা-ও খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
বিমল গুরুং যেদিন সুপ্রিম কোর্টে বড়সড় ধাক্কা খেলেন, সেদিনই আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করে সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবন চামলিং স্বীকার করে নিলেন, দার্জিলিং ইস্যুতে তাঁর অতীত অবস্থানে ভুল ছিল। এদিন মমতা ও চামলিংয়ের মধ্যে উত্তরকন্যায় প্রায় ৪৫ মিনিট বৈঠক হয়। বৈঠকের পর যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে দুজনই একসুরে বলেন, আমরা চাই দুই রাজ্যের ভালো বোঝাপড়া থাকুক। ছোটখাটো সমস্যাগুলো আমরা মিটিয়ে নেব। দার্জিলিং নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি এখন অতীত।
পৃথক গোর্খালান্ডের দাবিতে গুরুংদের আন্দোলনে দার্জিলিং যখন অশান্ত, তখনই হঠাৎ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে চিঠি পাঠিয়ে বসেন পাশের রাজ্য সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী চামলিং। পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে কার্যত সমর্থন জানিয়ে রাজনাথের হস্তক্ষেপ চান তিনি।
এখানেই শেষ নয়। সূত্রের দাবি ইউএপিএ-তে অভিযুক্ত বিমল গুরুং দীর্ঘদিন চামলিংয়ের রাজ্যে আশ্রয় নেন। এমনকী, পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ গুরুংয়ের সন্ধানে সেখানে গেলে সিকিমের পুলিশ তাঁদের সঙ্গে কোনও সহযোগিতা করেনি বলে অভিযোগ।
এসব নিয়েই সিকিমের ওপর রীতিমতো ক্ষুব্ধ ছিল নবান্ন। সম্প্রতি সিকিমের সঙ্গে পরিবহণ চুক্তিও বাতিল করে তারা। যার জেরে পশ্চিবঙ্গের মধ্যে সিকিমের গাড়ির অবাধ ঘোরাফেরা বন্ধ হয়ে যায়। পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, এই প্রেক্ষাপটে সিকিমের ওপর চাপ বাড়ছিল। তার জেরেই শেষমেশ পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে সন্ধির পথে হাঁটতে হল চামলিংকে। সুসম্পর্কে জোর দিলেন মমতাও। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দুই রাজ্যের উন্নয়ন নিয়ে কথা হয়েছে। দু’রাজ্য একসঙ্গে কাজ করবে। এর পরের শিল্প সম্মেলনে সিকিমকে আমন্ত্রণ।