সিবিএসই-আইসসিতে নম্বরের মেলা, উচ্চ মাধ্যমিকের উত্তীর্ণদের কলেজে ভর্তি নিয়ে সংশয়ে শিক্ষামহল
পরীক্ষার্থীদের হাসি বাঁধ ভাঙলেও, কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে রাজ্যের উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে আঁতকে উঠছে শিক্ষামহলের একাংশ।
কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা: সিবিএসই দ্বাদশে পাশের হার ৯৯.৩৭ শতাংশ। ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশের মধ্যে নম্বর পেয়েছেন দেড় লক্ষের বেশি পরীক্ষার্থী। এই ফলাফলে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণদের কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে অশনি সংকেত দেখছে শিক্ষামহলের একাংশ।
আজই প্রকাশিত হয়েছে সিবিএসই দ্বাদশের ফল। পাসের হার ৯৯.৩৭ শতাংশ। অন্যদিকে, আইএসসি-তে পাসের হার ৯৯.৯৩ শতাংশ। উচ্চ মাধ্যমিকে এবার পাসের হার ৯৭.৬৯ শতাংশ। আবেদনের ভিত্তিতে তারপরেও উচ্চ মাধ্যমিকে অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ পাস করেছেন। সেক্ষেত্রে জোড়া দিল্লি বোর্ড থেকে রাজ্যের উচ্চ মাধ্যমিক, প্রায় সবাই পাস। পরীক্ষার্থীদের হাসি বাঁধ ভাঙলেও, কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে রাজ্যের উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে আঁতকে উঠছে শিক্ষামহলের একাংশ। কারণ, বেশি নম্বর পাওয়া পরীক্ষার্থীদের সংখ্যাতত্ত্বে দিল্লি বোর্ডের তুলনায় বেশ পিছিয়ে পড়েছে এবারের উচ্চ মাধ্যমিক।
শুক্রবার প্রকাশিত হয়েছে সিবিএসই দ্বাদশের ফল। পরিসংখ্যান বলছে, সিবিএসই-র দ্বাদশে এবার সারা দেশে নাম নথিভুক্ত করেছিলেন ১৩ লক্ষ ৪ হাজার ৫৬১ জন পরীক্ষার্থী। তার মধ্যে ৯৫ শতাংশের ওপর নম্বর পেয়েছেন ৭০ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী। দেড় লক্ষের বেশি পরীক্ষার্থী ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশের মধ্যে নম্বর পেয়েছেন। আগেই প্রকাশিত হয়েছে আইএসসি-র ফল। সে ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ থেকে এবার নাম নথিভুক্ত হয়েছিল ২৬ হাজার ৮৫৯ জনের। উত্তীর্ণ হয়েছেন ৯৯.৬৩ শতাংশ পরীক্ষার্থী, যার একটা ভাল অংশ নব্বই শতাংশের ওপর নম্বর পেয়েছেন। সেই তুলনায় উচ্চ মাধ্যমিকে এবার নাম নথিভুক্ত করেছিলেন ৮ লক্ষ ১৯ হাজার ২০২ জন পরীক্ষার্থী। পাস পরেছেন প্রায় ৮ লক্ষ পরীক্ষার্থী।
ফলাফলে দেখা যাচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ শতাংশের মধ্যে নম্বর পেয়েছেন ৯ হাজার ১৩ জন, যা গত বছরের তুলনায় ২১ হাজার ২০৭ জন কম। আবার ৮০ থেকে ৮৯ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন এবার উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৯ হাজার ৩৭০ জন, যা গত বছরের উচ্চ মাধ্যমিকের তুলনায় ৩৫ হাজার ৩৭৬ জন কম। আশি শতাংশের ওপর নম্বর প্রাপকের তালিকায় উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণরা ব্যাকফুটে চলে যাওয়ায়, কলেজে ভর্তি সঙ্কটের আশঙ্কা করছেন অনেকে।
দোসরা অগাস্ট থেকে শুরু হচ্ছে স্নাতক স্তরে ভর্তি প্রক্রিয়া। দ্বাদশ স্তরের সব রেজাল্ট প্রকাশ্যে আসার পর ভর্তির চিন্তা সামনে এসেছে। সরকারি সূত্রের খবর, কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে এবার কোনও প্রবেশিকা হবে না। সরকার তা স্পষ্ট করে দিয়েছে। সেখানে কোন মন্ত্রে এই মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের নম্বর বৈষম্য দূর করা যাবে, তা নিয়ে ধন্দ তৈরি হয়েছে। অনেকে বলছেন, পার্সেন্টাইল দিয়ে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে। শিক্ষাবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ির কথায়, “উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের সঙ্কট তৈরি হবে। সরকারকে কিছু একটা ব্যবস্থা করতে হবে। “
লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ প্রিন্সিপ্যাল শিউলি সরকার বলেন, আমাদের কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন বোর্ডের নম্বরকে আলাদা পার্সেন্টাইল ধরে ভর্তি করা হচ্ছে। সঙ্গে মাধ্যমিকের নম্বরও দেখা হচ্ছে। এই পার্সেন্টাইল না হলে, উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণদের সমস্যা তৈরি হবে।
পার্সেন্টাইল মানে, সংশ্লিষ্ট কোনও বোর্ডের আবেদনকারীর সর্বোচ্চ নম্বরকে ১০০ শতাংশ ধরে তার ভিত্তিতে তৈরি হবে মেধাতালিকা। এখন প্রশ্ন, এই ফরমুলা কি গোটা রাজ্যে লাগু হবে? না হলে নামী কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে দিল্লি বোর্ডের সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণদের বৈষম্য দূর হবে কীভাবে? প্রশ্ন শিক্ষামহলের।