Nepal Unrest: ‘অখণ্ড ভারতে'র পাল্টা 'অখণ্ড নেপালে'র মানচিত্র, নিষিদ্ধ করেন ‘আদিপুরুষ’, ৩৫ বছর বয়সে নেপালের প্রধানমন্ত্রী হবেন বলেন্দ্র?
Balendra Shah: কাঠমান্ডুর মেয়র, বলেন্দ্রর রাজনীতিতে হাতেখড়ি অনেক পরে।

কাঠমান্ডু: উঠতি নেতা হিসেবে দু’বছর আগেই আন্তর্জাতিক খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিলেন। TIME Magazine তাঁকে ‘সেরা উঠতি নেতা যিনি ভবিষ্যতের কারিগর’ হয়ে উঠতে পারেন বলে অভিহিত করেছিলেন। অগ্নিগর্ভ নেপালকে ফের স্থিতাবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এই মুহূর্তে মুখে মুখে ফিরছে সেই বলেন্দ্র শাহেরই নাম। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে ইতিমধ্যেই নেপালের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন কেপি শর্মা ওলি। পদত্যাগ করেছেন দেশের রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পৌড়েলও। সেই আবহে বলেন্দ্র ওরফে বলেনের হাত ধরে নতুন নেপালের স্বপ্ন মাথাচাড়া দিচ্ছে। তাঁর উপর আস্থাবান বিক্ষোভকারীরাও। (Nepal Unrest)
কাঠমান্ডুর মেয়র, বলেন্দ্রর রাজনীতিতে হাতেখড়ি অনেক পরে। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন নেপাল থেকে, স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি হাসিল করেন ভারত থেকে। তিনি সুরকার, কবি, আবার আন্ডারগ্রাউন্ড ব়্যাপারও। গানের মাধ্যমেও সামাজিক অসাম্য, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ২০২০ সালে তাঁর রাজনীতিতে আসা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত ২০২১ সালে নির্দল হিসেবে রাজনীতিতে পা রাখেন বলেন্দ্র। আর প্রথমবার নির্বাচনের ময়দানে অবতীর্ণ হয়েই, ২০২২ সালে কাঠমান্ডু মেয়র নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হন তিনি। দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান, জনপরিষেবা, গণপরিবহণ, আবর্জনা নিয়ন্ত্রণ, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের ডাক দিয়েই জনগণের মন জয় করেন বলেন্দ্র। (Balendra Shah)
সোমবার থেকে নেপালে আন্দোলন চরম আকার ধারণ করলেও, বিক্ষোভকারীদের প্রতি সহানুভূতিই জানিয়ে আসছেন বলেন্দ্র। পুলিশে গুলিতে সোমবার নেপালে ২০ জন পড়ুয়ার মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। আহতের সংখ্য়া কয়েকশো। স্কুলের ইউনিফর্ম পরিহিত পড়ুয়ারও মৃত্যুর খবর মিলেছে। সেই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমবেদনা প্রকাশ করেন বলেন্দ্র। তিনি জানান, এই আন্দোলনে তিনিও শামিল হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু Gen Z-রা ২৮ অনূর্ধ্বের যে মাপকাঠি বেঁধে দিয়েছেন, তার জন্য প্রতিবাদে শামিল হতে পারেননি তিনি। তবে শারীরিক ভাবে উপস্থিত না হতে পারলেও, মানসিক ভাবে আন্দোলনকারীদের পাশে রয়েছেন বলে বার্তা দেন। জানান, দেশের তরুণ প্রজন্মের বক্তব্য শোনা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে হয় তাঁর। আর সেই বলেন্দ্রকেই দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী দেখতে চাইছেন নেপালের Gen Z-রা। (Balen Shah)
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে, সম্প্রতি ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবের মতো ২৬টি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মকে তথ্য়প্রযুক্তি মন্ত্রকের আওতায় নাম নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেয় ওলি সরকার। কিন্তু নির্ধারিত সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও ওই সব সংস্থা নেপাল সরকারের কাছে নাম নথিভুক্ত করায়নি। এর পরই সেগুলিকে নিষিদ্ধ করা হয় দেশে। সেই নিয়ে একটু একটু করে ক্ষোভ বাড়ছিল গত কয়েক দিন ধরে, যা সোমবার বিস্ফোরণে পরিণত হয়। আন্দোলনকারীদের দাবি, শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধকরণের জন্য রাস্তায় নামেননি তাঁরা। দুর্নীতি, পরিবারতন্ত্র, শাসকের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছেন। ওলি সরকার নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও সেই বিক্ষোভ কিন্তু থামেনি।
স্কুলের ইউনিফর্ম, কলেজের ব্যাগ কাঁধে নিয়েও রাস্তায় নামেন হাজার হাজার ছেলেমেয়ে। আন্দোলনকারীরা যদিও কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করেননি, তবে এই আন্দোলনের নেপথ্যে ‘Hami Nepal’ নামের একটি যুব সংগঠনের ভূমিকার কথা উঠে এসেছে। তবে এই মুহূর্তে আন্দোলনকারীদের সিংহভাগই বলেন্দ্রকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে আগ্রহী। মেয়র নির্বাচনে জয়ী হতে বলেন্দ্র সোশ্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগিয়েছিলেন। এই মুহূর্তে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেই তাঁর দ্বারস্থ হয়েছেন বহু মানুষ। তাঁর উদ্দেশে কেউ লিখেছেন, ‘বলেনভাই, এবার নেতৃত্ব দিতে হবে’। কেউ লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপালের মধ্যে পার্থক্য হল, আমাদের মধ্যে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন, যিনি ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে গিয়ে দেশের মঙ্গলের জন্য় কাজ করবেন। বলেনকে প্রধানমন্ত্রী চাই’। অন্য আর একজন লেখেন, ‘প্রিয় বলেন, এখন নেতৃত্বে না এলে, আর হবে না। গোটা নেপাল তোমার পাশে আছে। এগিয়ে এসো’।
বলেন্দ্র নিজে যদিও এখনও পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হওয়া নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তবে ইতিমধ্যেই মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন তিনি। মঙ্গলবারও জায়গায় জায়গায় অগ্নিসংযোগ, অশান্তিতে যখন তপ্ত চারিদিক, রাস্তায় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে উল্লাস করছেন বিক্ষোভকারীদের একাংশ, সেই সময় সকলকে শান্ত হতে আর্জি জানাচ্ছেন তিনি। ওলি পদত্যাগ করার পর বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে তিনি লেখেন, ‘দয়া করে শান্ত হোন। দেশের সম্পত্তিহানিতে আমাদের সকলের ক্ষতি। এই মুহূর্তে সংযম দেখানো প্রয়োজন। এখন, এই মুহূর্ত থেকে আপনাদের প্রজন্মই দেশকে নেতৃত্ব দেবে’।
তবে বলেন্দ্রর হাতে নেপাল কেমন হবে, তা নিয়ে সংশয়ও রয়েছে। কারণ কাঠমান্ডুর মেয়র হিসেবে তাঁর একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। বিশেষ করে হকার উচ্ছেদ ঘিরে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাঁকে। একাধিক মানবাধিকার সংগঠন এবং অন্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হকার উচ্ছেদে বলপ্রয়োগের অভিযোগ তোলে। এমন অনেক ভিডিও-ও সামনে আসে, যেখানে হকারদের ধাওয়া করে, মাটিতে ফেলে মারতে দেখা যায় পুলিশকে। এমনতি তাঁদের জিনিপত্রও সব কেড়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। শহরের দরিদ্র, খেটে খাওয়া মানুষ, যাঁদের উপর নেপালের অর্থনীতির অর্ধেক টিকে, বরেন্দ্র তাঁদের নিয়ে ভাবিত নন বলে অভিযোগ ওঠে সেই সময়। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এক সমাজকর্মী সেই নিয়ে কাঠমান্ডু হলে ১৯৯ ঘণ্টা টানা দাঁড়িয়ে থেকে প্রতিবাদ জানান। বিকল্প ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত যাতে হকাররা কাজ চালিয়ে যেতে পারেন, তার জন্য ওই অভিনব উপায়ে প্রতিবাদ জানান তিনি। শেষ পর্যন্ত দুই পক্ষকেই আপস করতে হয়। কাঠমান্ডপতে ভারতীয় চলচ্চিত্র নিষিদ্ধ করেও খবরের শিরোনামে উঠে আসেন বলেন্দ্র। ‘আদিপুরুষ’ ছবিতে সীতাকে ‘ভারতের কন্যা’ হিসেবে দেখানোয় প্রতিবাদ জানান তিনি। বিষয়টি নিয়ে আইনি লড়াই শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত ওই ছবি দেখাতে নির্দেশ দেয় আদালত। সেই সময় ওলি সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন বলেন্দ্র। ওলি সরকার ভারত সরকারের দ্বারা প্রভাবিত বলে দাবি করেন তিনি। তার জেরে আদালত অবমাননার মামলাও হয় তাঁর বিরুদ্ধে।
এখানেই শেষ নয়, ভারতের সংসদে ‘অখণ্ড ভারতে’র যে মানচিত্র রয়েছে, তাতে নেপালের লুম্বিনী, কপিলাবস্তুকে ভারতীয় ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে দেখানো হলে, তার তীব্র প্রতিবাদ জানান বলেন্দ্র। এর পাল্টা নিজেক দফতরে ‘অখণ্ড নেপাল’ বা ‘Greater Nepal’-এর একটি মানটিত্র বসান, যাতে পূর্ব তিস্তা থেকে পশ্চিম কাংরা পর্যন্ত অঞ্চলকে নেপালের অংশ বলে দেখানো হয়। সেই বলেন্দ্র নেপালের প্রধানমন্ত্রী হলে ভারতের সঙ্গে পড়শি দেশের সমীকরণ নিয়ে নতুন করে জটিলতা দেখা দেবে কি না, সেই প্রশ্নও উঠছে।























