অকেজো দুটো কিডনি, পোষ্য সারমেয়র ‘আদরে’ কোমায়!
লন্ডন: পোষ্য কুকুর চাটার ফলে মৃত্যুপথে এক ব্যক্তি! অবিশ্বাস্য হলেও এমন ঘটনা ঘটেছে ব্রিটেনে।
সংবাদসংস্থা সূত্রে খবর, ডেভিড মোনি নামে প্রাক্তন সেনাকর্মীকে সম্প্রতি আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দেখা যায়, তাঁর ত্বকে বিভিন্ন জায়গায় লাল টেনিস বলের আকারে বড় ফোস্কা হয়েছে।
চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখেন, ওই বীভৎস সংক্রমণ এসেছে ডেভিডের পোষা কুকুরের লালা থেকে। তাঁরা জানান, সংক্রমণটি হল একটি বিশেষ ধরনের ব্যাক্টেরিয়া। নাম ‘ক্যাপনোসাইটোফাগা’। এই ব্যাক্টেরিয়া মূলত কুকুরের মুখ ও লালায় থাকে।
গত পাঁচমাস ধরে হাসপাতালে শয্যাসায়ী ডেভিড। চিকিৎসকরা জানান, তাঁকে যখন ভর্তি করা হয়েছিল, তখন প্রায় ছ’সপ্তাহ ধরে কোমাচ্ছন্ন অবস্থায় ছিলেন তিনি। জানা গিয়েছে, ডেভিডের দুটি কিডনিই অকেজো হয়ে পড়েছে। তাঁর প্রতিদিন তাঁকে ডায়ালিসিস করাতে হচ্ছে।
জানা গিয়েছে, সামরিক বাহিনীতে ডেভিড প্যারাট্রুপার ছিলেন। তিনি আদ্যান্ত পশুপ্রেমী। তাঁর বাড়িতে সাতটি শিকারী কুকুর রয়েছে। অবসরের পর বিভিন্ন রেসে অংশ নেন ডেভিড। চিকিৎসকদের আশঙ্কা, তাঁর শরীরে কোনও কাটার ওপর কুকুর চেটে দিয়েছিল। তা থেকেই এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে।
নিজের অবস্থার কথা সবই জানেন ডেভিড। বললেন, আমি শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েছি। ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারি না। চাকরি হারিয়েছি। প্রায় মৃত্যুমুখে দাঁড়িয়ে আছি। আমার জীবনটাই উল্টে গিয়েছে।
যদিও এত কিছুর পরও, কুকুরের প্রতি তাঁর ভালবাসা আজও অটূট। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, কুকুর ছাড়া তিনি থাকতে পারবেন না। তাই, কুকুরের সঙ্গও ছাড়তে নারাজ এই প্রাক্তন সেনাকর্মী। এমনকী, তাঁকে এ-ও বলতে শোনা গিয়েছে, আমার কোনও কুকুরের থেকে এই সংক্রমণ হয়েছে ভাবতেই অবাক লাগছে।
প্রতীকী চিত্রডেভিড জানিয়েছেন, গত এপ্রিল মাসে প্রথম প্রথম জ্বরের লক্ষণ দেখা দেয়। প্রায় একইসঙ্গে, পায়ে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে, সেখানে তিনি ত্বকে পোড়ার মত জ্বালা অনুভব করেন। একইসঙ্গে, মনে হতে থাকে যেন, কিছু শরীরে বিঁধে দেওয়া হচ্ছে।
এর কিছুদিন পর, মুখে কালো ছোপ দেখা দেয়। সংক্রমণের চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু, দ্রুত শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। ব্যথাও বাড়তে শুরু করে। অন্যদিকে, ত্বকের ওপর ফোস্কা দেখা দিতে থাকে।
বর্তমানে, টেনিস বলের আকারের মত ফোস্কায় শরীর ঢেকে গিয়েছে ডেভিডের। এমনকী, হাতের আঙুলে ছড়িয়েছে, যার ফলে সেগুলির আকার প্রায় তিনগুণ হয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, সংক্রমণ এড়াতে এখন হাতগুলিকে প্লাস্টিক ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখতে হয়
তাতেও কুকুরে নাছোড় ডেভিড। বলেন, ওই ফোস্কায় যা ব্যথা হয়, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তবে, তাই বলে, কুকুরের সঙ্গ ত্যাগ করব না। আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না, আমার এই পরিণতি হয়েছে। তা সত্ত্বেও, আমি মেনে নিয়েছি।