Pakistan: শরীরের সমস্ত হাড়ই গুঁড়িয়ে গিয়েছিল পাকিস্তানে খুন শ্রীলঙ্কার নাগরিকের:ময়নাতদন্তের রিপোর্ট
Sri Lankan National Lynched In Pakistan:পেরাদেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক প্রিয়ন্থার স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে।২০১০-এ তিনি পাকিস্তানে গিয়েছিলেন।২০১২ থেকে সিয়ালকোটের কারখানায় ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন
ইসলামাবাদ: পাকিস্তানে শ্রীলঙ্কার নাগরিক প্রিয়ন্থা কুমারা দিয়াওয়াদানাকে পিটিয়ে, জ্বালিয়ে খুনের ঘটনা ঘিরে নিন্দার ঝড় বইছে। এরইমধ্যে সামনে এল ময়নাতদন্তের রিপোর্ট। ওই রিপোর্টে দেখা গিয়েছে বর্বরতার নমুনা। রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রিয়ন্থার প্রায় সমস্ত হাড়গোড়ই ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাঁর শরীরের ৯৯ শতাংশই পুড়ে গিয়েছিল।
গত শুক্রবার মৌলবাদী তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান (টিএলপি)-র একদল উন্মত্ত সমর্থক পঞ্জাব প্রদেশের একটি বস্ত্র তৈরির কারখানায় হামলা চালায় এবং কারখানার জেনারেল ম্যানেজার প্রিয়ন্থাকে বেধড়ক মারধর করে। এরপর তাঁর দেহে আগুন ধরিয়ে দেয় উন্মত্ত জনতা। জানা গেছে, ধর্ম অবমাননার অভিযোগে এই নৃশংস হামলা চালানো হয়।
পাক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাথার খুলি ও চোয়াল ভেঙে যাওয়াকে তাঁর মৃত্যুর কারণ বলা হয়েছে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে। হিংসাশ্রয়ী জনতার হামলায় পাকস্থলী, যকৃৎ, একটি কিডনি সহ প্রিয়ন্থার শরীরের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অত্যাচারের চিহ্ন তাঁর সারা শরীরেই বিদ্যমান ছিল। তাঁর মেরুদণ্ড ভেঙে তিন টুকরো হয়ে যায়।
ময়নাতদন্তের রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, প্রিয়ন্থার শরীরের ৯৯ শতাংশই পুড়ে গিয়েছে এবং পায়ের পাতা ছাড়া সমস্ত হাড়গোড়ই গুঁড়িয়ে গিয়েছে।
পঞ্জাব পুলিশের মুখপাত্র ময়নাতদন্তের পর জানিয়েছেন, প্রিয়ন্থার দেহ লাহোরে পাঠানো হয়েছে। সেখানে তাঁর দেহ শ্রীলঙ্কার কনস্যুলেটের হাতে তুলে দেওয়া হবে। আইনি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার পর প্রিয়ন্থার দেহ বিশেষ বিমানে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হবে বলে সরকারি আধিকারিককে উদ্ধৃত করে জানানো হয়েছে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে।
এরইমধ্যে ওই ঘটনার দিনের একটি ভিডিও সামনে এসেছে। ওই ভিডিও দেখা গিয়েছ যে, উন্মত্ত জনতা যখন প্রিয়ন্থাকে মারধর করছে, তখন এক ব্যক্তি ঝাঁপ দিয়ে তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁর ওই চেষ্টা সফল হয়নি।
মারধরে প্রিয়ন্থা মারা যাওয়ার পর তাঁর শরীরে আগুন ধরিয়ে না দিতে আর এক ব্যক্তিকে আবেদন জানাতে দেখা যায়। কিন্তু তাঁকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেওয়া হয়।
এই ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাকিস্তান সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে। এরইমধ্যে সন্ত্রাসের অভিযোগে ৮০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং ১৩ মূল অভিযুক্ত সহ এখনও পর্যন্ত ১১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পেরাদেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক প্রিয়ন্থার স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। চাকরি সূত্রে ২০১০-এ তিনি পাকিস্তানে গিয়েছিলেন। ২০১২ থেকে সিয়ালকোটের কারখানায় ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন।
শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্ট, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষ ও প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষ ওই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দোষীদের সাজা দেওয়ার ব্যাপারে তাঁর প্রতিশ্রুতি পালন করবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন।
প্রিয়ন্থা ধর্মের অবমাননা করেছেন বলে অভিযোগ করে গত শুক্রবার কারখানাতে চড়াও হয় প্রায় ৮০০ উন্মত্ত জনতা। প্রিয়ন্থাকে টেনে হিঁচড়ে বের করে বেধড়ক মারধর করা হয়। তিনি মারা যান। এরপরও নৃশংস জনতা থামেনি। তাঁর শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পঞ্জাব পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল রাও সর্দার আলি খান এ কথা জানিয়েছেন।
সর্বস্তরে এই ঘটনার নিন্দা করা হয়েছে। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর জন্য পুলিশেরও তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে।