সরাসরি আলোচনা চায় ওয়াশিংটন, ‘ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা আগ্রাসন নয়’, পাকিস্তানকে বার্তা মার্কিন সেনেটের
উত্তপ্ত শব্দযুদ্ধের মধ্যে ফের একবার শান্তি বজায় রাখার বার্তা দিল ওয়াশিংটন।
ওয়াশিংটন: কোনও মধ্যস্থতাকারীর প্রয়োজন নেই, কাশ্মীর ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘সাহায্য’ নেবে না ভারত। বিশ্ব রাজনীতির ‘সবথেকে শক্তিশালী’ রাষ্ট্রপতি যদিও দাবি করেছেন, ১৩০ কোটি ভারতীয়র প্রধানমন্ত্রী কাশ্মীর ইস্যুতে তাঁর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরানের সঙ্গে বৈঠকে সে কথা সর্বসমক্ষেই জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে ভারত তা অস্বীকার করে। কেন্দ্র স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়, নরেন্দ্র মোদি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এমন কোনও প্রস্তাবই দেয়নি। এমনকি কাশ্মীরের মতো অভ্যন্তরীণ বিষয়ে দেশ কোনও তৃতীয়পক্ষের নাক গলানো-কে একেবারেই পছন্দ করবে না, তাও পরিষ্কার করে দেওয়া হয়।
এরই মধ্যে সংসদের উচ্চ ও নিম্নকক্ষে সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপ ও জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন বিল পাশ করিয়ে নেয় ভারত সরকার। একই সঙ্গে, জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নিয়ে জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ-কে দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করে দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতিও কেন্দ্রের এই বিলে সম্মতি দিয়েছেন। যার ফলে জম্মু-কাশ্মীরের ওপর থেকে সরে গিয়েছে রাজ্যের তকমাও। ‘বাতিল’ হয়েছে ভূ-স্বর্গের নিজস্ব সংবিধান, স্বতন্ত্র পতাকা ব্যবহারের ক্ষমতাও। এই আবহে ভূ-স্বর্গে শান্তি নিশ্চিত করতে কাতারে কাতারে সেনা ও আধাসেনা নিয়োগ করা হয়েছে। বিরোধী দলনেতারাও বন্দি। আম আদমির নিরপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে শৈলশহর এবং জঙ্গিঘাঁটি হিসেবে পরিচিত সোপিয়ান ঘুরে এসেছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালও। এমন পরিস্থিতিতে ইসলামাবাদে ভারতীয় দূত অজয় বিসারিয়াকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান। ইমরান খানের সরকার সমঝোতা এক্সপ্রেসের পরিষেবাও বাতিল করে। প্রতিবেশী দেশ থেকে ক্রমাগত উস্কানিমূলক বার্তাও আসতে থাকে। ইমরান খান ভারত সরকারের ৩৭০ ধারা বাতিলের সিদ্ধান্তকে ‘একতরফা’ এবং ‘অবৈধ’ বলে মন্তব্য করেন। ভারত তার পাল্টা জবাব দিয়ে জানায়, এরপর পাক অধিকৃত কাশ্মীরই দেশের লক্ষ্য। এমন উত্তপ্ত শব্দযুদ্ধের মধ্যে ফের একবার শান্তি বজায় রাখার বার্তা দিল ওয়াশিংটন।
মার্কিন সেনেট থেকে যৌথ বিবৃতি দিয়ে রবার্ট মেনেনদেজ এবং এলিওট এঞ্জেল জানান, তাঁরা ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ‘সরাসরি আলাপ আলোচনার পক্ষে’। কাশ্মীর ইস্যুতে রফাসূত্র বার করতে কথা বলুক দিল্লি ও ইসলামাবাদ, চাইছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। পাকিস্তানকে খানিক কড়া বার্তা দিয়েই এই দুই সেনেট সদস্য বলেন, “প্রতিশোধমূলক এবং আগ্রাসী সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে পাকিস্তানকে বিরত থাকতে হবে। দেশের মাটি থেকে সন্ত্রাসকে নির্মূল করতে তৎপর হওয়া উচিত পাকিস্তানের।” অন্যদিকে ভারতকেও ‘মানবিধকার সুনিশ্চিত’ করার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। দুই মার্কিন সেনেটরের কথায়, “বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্র হওয়ার সুবাদে ভারতের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার সুনিশ্চিত করার সুযোগ রয়েছে। নিজস্ব বিধানসভা, তথ্যের অধিকার এবং নিরপত্তা- আইনি পদ্ধতিতেই এই অধিকার নাগরিকরা পাবেন।”
জম্মু-কাশ্মীরের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় জঙ্গি নাশকতায় ভারতীয় জওয়ানদের মৃত্যু, ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের আকাশসীমা ভেদ করে বালাকোটে ভারতীয় বায়ুসেনার আক্রমণ এবং পাকিস্তানের পাল্টা পরাক্রমে ভারতীয় বায়ুসেনার বিমান মিগ-টোয়েন্টি ওয়ানকে পরাস্ত করে ক্যাপ্টেন অভিনন্দন বর্তমানকে আটক করা- ওয়াশিংটনের নজের রয়েছে এই সব ঘটনাই। পয়লা মার্চ অভিনন্দন বর্তমানকে ভারতে ফিরিয়ে দিয়ে ‘শান্তির বার্তা’ দিয়েছিলেন খোদ পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খেন। পাঁচ মাসের মধ্যেই সম্পর্কের সেই ‘শৈত্য’ উবে গিয়ে তৈরি হয়েছে উত্তপ্ত পরিস্থিতি। এমন অবস্থায় ইউএস থেকে আসা এই বার্তা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মত সংশ্লিষ্টমহলের।