Durga Puja 2024: কাঁকসার এই মন্দিরে আসতেন বহু কাপালিক, হত নরবলি, সাধারণের যেতে কাঁপত বুক, কীভাবে শুরু দুর্গাপুজো ?
Durga Puja 2024 West Bardhaman: কাঁকসার এই জঙ্গলে পা দিতেও ভয় পেত সাধারণ মানুষ, অষ্টমীর সন্ধিক্ষণে অলৌকিক গর্জনে কেঁপে উঠতো গোটা এলাকা
মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিম বর্ধমান: ঝাঁ চকচকে আলো ও থিমকে এখনও টেক্কা দেয় কাঁকসার গড় জঙ্গলের শ্যাম রুপার ৪০০ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজো। ঘন জঙ্গল, বাঘ ও সিংহের গর্জনের মাঝেই দাপটের সঙ্গে রাজত্ব স্থাপন করেছিলেন রাজা লক্ষণ সেন। স্বপ্নাদেশ পেয়ে কাঁকসার গড় জঙ্গলে গড়ে তোলেন শ্যামারূপা দেবীর মন্দির। শুরু হয় পুজো।
এই মন্দিরে সিদ্ধিলাভের আশায় বহু কাপালিকেরও আনাগোনা হতে থাকে। শোনা যায় সেখানে সেই সময় হতো নরবলি। তখন থেকে এই জঙ্গলে পা দিতেও ভয় পেত সাধারণ মানুষ। অষ্টমীর সন্ধিক্ষণে অলৌকিক গর্জনে কেঁপে উঠতো গোটা এলাকা। ইতিহাস বলছে, বাংলার বহু প্রাচীন দুর্গাপুজো শুরু হয়েছিল এইখানে। কাপালিককে শ্যামা মা শ্যামরূপে দর্শন করিয়ে নরবলি প্রথায় দাঁড়ি টেনেছিল কবি জয়দেব। তারপর থেকেই শ্যামারূপা মায়ের নাম হয় শ্যামরূপা। রাজা লক্ষণ সেন জঙ্গল ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় মন্দিরের দায়িত্ব দেন ঢেকুরের রাজা ইছাই ঘোষকে। ইছাই ঘোষ দেবীর আদেশ লঙ্ঘন করে অষ্টমীর সন্ধিক্ষণে যুদ্ধে যান এবং পরাজিত ও নিহত হন। তারপর ইছাই ঘোষের সহচররা মন্দির থেকে অদূরে দীপশায়েরের জলে দেবীর মূর্তি বিসর্জন দেন। তখনই শেষ হয় জঙ্গলের মাঝে রাজাদের আধিপত্য।
তারও কয়েক বছর পর স্থানীয় বাসিন্দারা শ্বেত পাথরের অষ্টধাতুর মূর্তি স্থাপন করে দেবীর পুজো শুরু করেন। হতে তাকে ভক্তদের সমাগম। রাজ্য ছাড়িয়ে দেশ-বিদেশের ভক্তদেরও সমাগম হয়। প্রতিদিন হয় নিত্যসেবা। দুর্গাপুজো চারদিন ৩০ থেকে ৪০ হাজার ভক্তের সমাগম হয়। অন্নকুটের ব্যবস্থা থাকে। সেজে উঠে জঙ্গল। ঝা চকচকে লাইট আর থিমের ভিড়েকেও টেক্কা দিয়ে ইতিহাসের সাক্ষীর সাধ পেতে বাঙালির দুর্গাপুজোর প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠে কাঁকসার গড় জঙ্গলের শ্যামরূপা মন্দির।
আরও পড়ুন, RG কর কাণ্ডের প্রতিবাদে 'অপরাজিতা', হুগলির বনেদি বাড়িতে এবার 'অন্য' দুর্গাপুজো
শারদ উৎসব শুরু হতে আর কয়েকদিন বাকি। অতিবৃষ্টির পর নীল আকাশে এখন সাদা মেঘের ভেলা। জলাশয়ের পাশে হাওয়ায় দুলছে কাশফুল। সর্বত্রই উৎসবের প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে। বারোয়াড়ির পাশাপাশি বাড়ির পুজোতে ও চলছে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা। হরিপাল থানার নালীকুল বড়গাছিতে ২৯৩ বছরের প্রাচীন সিংহ, বসু মল্লিক ও রায় পরিবারের পুজো ঘিরে পরিবারের সদস্যদের ব্যস্ততা চরমে। পুজোর আয়োজনে যেনও কোনও খামতি না থাকে তা নিয়ে বৈঠক চলছে ঠাকুন দালানে। এখনও প্রাচীন রীতিনীতি ও ঐতিহ্য বজায় রেখে নিষ্ঠার সঙ্গে দেবীর আরাধনা করে থাকেন এই তিনটি পরিবার।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।