Gita Quotes : রাগে মাথা স্থির থাকে না? আনন্দে বাঁধনহারা উল্লাস করেন? ঠিক কি? গীতায় কী বলেছেন শ্রীকৃষ্ণ?
Gita Gyan : জিতেন্দ্রিয় যিনি, যে ব্যক্তি সব অবস্থায় প্রশান্তচিত্ত, তিনিই পরমাত্মাকে উপলব্ধি করতে পারেন।
Bhagavad Gita Explains : কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে নিজের গুরুজন ও পরিজনদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতে হবে ভেবে অর্জুনের হৃদয় যখন দ্বিধাগ্রস্থ, তখন তাঁক কর্তব্য নিয়ে সচেতন করেন ভগবান কৃষ্ণ। গীতার বিভিন্ন অধ্যায়ে বিভিন্ন মার্গের সন্ধান দিয়েছেন তিনি। কর্মযোগ’ ও ‘সাংখ্যযোগ' – গীতার এই দুই অধ্যায়ে যেমন ভগ্নহৃদয় পার্থকে পথ দেখিয়েছেন তাঁর সখা, তেমনই ষষ্ঠ অধ্যায়ে ধ্যানযোগের মাধ্যমে শেখানো হয়েছে কীভাবে ইন্দ্রয়গুলিকে সংযত করতে হয়। ধ্যানযোগে শরীর, ইন্দ্রিয়, মন ও বুদ্ধির সংযম করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। শরীর, ইন্দ্রিয়, মন ও বুদ্ধি, যাঁকে একত্রে 'আত্মা'ও বলা হয়। তাই এই অধ্যায়ের নাম 'আত্মসংযমযোগ' ।
এই অধ্যায়ের ৭ নম্বর শ্লোকে ভগবান বলেছেন -
জিতাত্মনঃ প্রশান্তস্য পরমাত্মা সমাহিতঃ।
শীতোষ্ণসুখদুঃখেষু তথা মানাপমানয়োঃ ৷। ৭
এর অর্থ, বিভিন্ন ঋতু অর্থাৎ শীত,গ্রীষ্মে, বিভিন্ন পরিস্থিতি অর্থাৎ সুখ-দুঃখে এবং মান-অপমানে যাঁর মন এক্কেবারে অবিচল, শান্ত, সেই ব্যক্তিই পরমাত্মায় অবস্থান করেন। তাঁদের মনে এই সব পরিস্থিতিতে কোনও হেলদোল সৃষ্টি করে না, তাঁদের জ্ঞানে শুধুই থাকে পরমাত্মা, আর কিছু নয়। জিতেন্দ্রিয় যিনি, যে ব্যক্তি সব অবস্থায় প্রশান্তচিত্ত, তিনিই পরমাত্মাকে উপলব্ধি করতে পারেন। তাঁর কাছে শীত ও উষ্ণ, সুখ ও দুঃখ এবং সম্মান ও অপমান সবই সমান, এই বিষয়গুলি তাঁর চিত্তচাঞ্চল্য সৃষ্টি করতে পারে না।
বাহ্যিক পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, এঁদের শরীর, ইন্দ্রিয় ও মনে কেনও প্রভাব পড়ে না। কোনও সাংসারিক পরিস্থিতি তাঁদের মনে ঢেউ তোলে না। কোনও অনুকূল পরিস্থিতিতেও যেমন তাঁরা অবিচল, তেমনই প্রতিকূল ঘটনাসমূহের মধ্যেও তাঁরা অটল। এঁদের মনে সহজে রাগ, হিংসে, আনন্দ, শোক হয় না। অন্যের প্রতি অসূয়া, কাম, ক্রোধ ইত্যাদিও হয় না। যে কোনও পরিস্থিতিতে এঁদের মন স্থির। চিত্ত সবসময় সম ও শান্ত। এইরকম জিতেন্দ্রিয় ও প্রশান্তচিত্ত ব্যক্তিরাই পরমাত্মাকে উপলব্ধি করতে পারেন।
এর আগে সাংখ্য যোগে প্রকৃত জ্ঞানী কে, তা বোঝাতে এমন উপমাই দিয়েছিলেন ভগবান। সাংখ্য যোগের ৫৬ নম্বর শ্লোকে যেখানে শ্রীকৃষ্ণ বলছেন -
দুঃখেম্বনুদ্বিগ্নমনাঃ সুখেষু বিগতস্পৃহঃ।
বীতরাগভয়ক্রোধঃ স্থিতধীর্মুনিরুচ্যতে৷৷
শ্রীমদভগবদ্ গীতা, (তত্ত্ববিবেচনী) অনুসারে এর অর্থ, দুঃখে অনুদ্বিগ্ন চিত্ত, সুখে স্পৃহাহীন এবং আসক্তি, ভয় ও ক্রোধরহিত মুনিকেই স্থিতপ্রজ্ঞ বলা হয়৷ ত্রিতাপ দুঃখ উপস্থিত হলেও যাঁর মন উদ্ভিগ্ন হয় না, সুখ উপস্থিত হলেও যাঁর স্পৃহা জাগে না এবং যিনি রাগ, ভয় ও ক্রোধ থেকে মুক্ত, তিনিই স্থিতধী ।
আরও পড়ুন :