Kali Puja 2023: শান্ত দেবী বছরে একদিন হয়ে যান উগ্র-এলোকেশী! বিশেষ প্রণালীতে তৈরি মন্দির
Diwali 2023: এবার থেকে হংসেশ্বরী মন্দিরে বলি বন্ধ। কেন? জানাচ্ছেন মন্দিরের পুরোহিত
সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, হুগলি: সারা বছর শান্তরূপে বিরাজ করেন এই দেবী। গোটা বছর এই ভাবেই পূজিতা হন দেবী। কিন্তু কালী পুজোর সময় এলোকেশী উগ্ররূপে পূজিতা হন এই দেবী। হুগলি (Hooghly) বাঁশবেড়িয়ার হংসেশ্বরী মন্দির (Hanseshwari Temple) অত্য়ন্ত জনপ্রিয়। গোটা বাংলা থেকে এই দেবীর দর্শনে আসেন ভক্তরা। ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে এই কালীপুজো। পশু বলি দেওয়ার রীতি ছিল এখানে। শুধু কালীপুজো (Kali Puja 2023) নয়, বছরের বিভিন্ন সময় বলি চলত এখানে। কিন্তু এবারই সেই বলি প্রথায় রদ হয়েছে। পশু বলির নৃশংসতার কথা মাথায় রেখেই এবার থেকে বলি বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই মন্দিরের পুরোহিত। ফলে ছেদ পড়েছে ২০৮ বছরের নিয়মে।
১৮১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই মন্দির। কথিত রয়েছে, স্বপ্নাদেশ পান বাঁশবেরিয়ার জমিদার রাজা নৃসিংহ দেব। তিনিই মা হংসশ্বেরীর মন্দির তৈরি করার সংকল্প নেন। কিন্তু সেই কাজ তিনি শেষ করে যেতে পারেননি। পরে তাঁর স্ত্রী রানি শঙ্করী দেবী এই কাজ শেষ করেন। ষটচক্র ভেদ প্রণালীতে এই মন্দির নির্মিত হয়। মন্দিরটি ৭০ ফুট উঁচু। ৫ তলা ও ১৩ চূড়া বিশিষ্ট এই মন্দির। মানবদেহের ঈরা, পিঙ্গলা, সুষুম্না নাড়ি বিদ্যমান, তারই অনুকরণে সম্ভবত তৈরি এই মন্দির। মন্দিরের চারপাশে প্রতিটি চূড়ার নীচে একটি করে কালো শিবলিঙ্গ রয়েছে। এছাড়াও একটি সাদা শিবলিঙ্গ পূজিত হয়ে আসছে। প্রতিটি চূড়াই পদ্মের আকারের এবং মূল বেদি গোলাকার প্রস্ফুটিত পদ্মের মতো। পঞ্চমুন্ডি আসনের উপর অধিষ্ঠিত হয়ে আছেন দেবী। মূল মন্দিরে কুণ্ডলিনী শক্তি রূপে দেবী হংসেশ্বরী প্রতিষ্ঠিত।
দেবীর শরীরের রঙ নীল, বামহাতে রয়েছে খড়্গ ও নরমুণ্ড এবং ডানহাতে অভয়মুদ্রা ও শঙ্খ। বছরে ৩৬৪ দিন দেবীর শান্ত মূর্তিরূপে নিত্যপুজো করা হয়, কেবল বাৎসরিক পুজোর দিন রূপোর মুখোশ ও সোনার জিভ পড়িয়ে এলোকেশী উগ্র মূর্তি রূপে পুজো করা হয়। তৎকালীন সময়ে বেনারস থেকে ভেসে আসা নিম কাঠের তৈরি এই মূর্তি নীলাভ।
এই মন্দিরের বিশেষ আকর্ষণ হল পাশে থাকা অনন্ত বাসুদেবের টেরাকোটার মন্দির। যা দেখতে বহু মানুষ আসেন। রাজা নৃসিংহ দেবের ঠাকুরদা রাজা রামেশ্বর দেব রায় এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলার টেরাকোটা শিল্প রয়েছে মন্দিরের গায়ে ।এই মন্দিরের গায়ে টেরাকোটার দুর্গা, কালী, শিব ,কৃষ্ণ, রাসলীলা, নৌকা বিলাস এবং নারায়ণের অনন্ত শয্যা নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলা আছে। যদিও এখন টেরাকোটার কাজ নষ্ট হতে বসেছে। পুরাতত্ত্ব বিভাগ কিছুটা রক্ষণাবেক্ষণ করলেও তা সম্পূর্ণভাবে প্রতিস্থাপন করা যায়নি। তাই মন্দিরে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একটি বিষ্ণু মূর্তি পুজো করা হয় এখানে। বহু কাল আগে আসল বিষ্ণুমূর্তি ছিল সেটাও আগেই চুরি হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ।
হংসেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত বসন্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'সারাবছর শান্ত থাকলেও বাৎসরিক কালীপূজার দিন এক রাতের জন্য তিনি এলোকেশী। রাজবেশ পরানো হবে তাঁকে। রুপোর মুখোশ ও সোনার জিভ পরানো হবে।' পরদিন ভোরবেলায় এই রাজবেশ খুলে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: ভবানী পাঠকের হাতেই নাকি শুরু পুজো! কেন নাম গোবরজনা?