Sati Pith: দেবী এখানে পরমাপ্রকৃতি আদ্যাশক্তি, মানস সরোবরেই পড়েছিল সতীর ডান হাত
Sati Pith Manas Sarovar: এই মানুষ সরোবরের সতী পীঠের মাহাত্ম্য এতটাই যে, অনেকে রাত্রে কৈলাস পর্বতের উপরে দুটি আলোকছটা দেখতে পান। মানুষের বিশ্বাস অনুসারে এই আলোক ছটাই আসলে শিব এবং পার্বতীর প্রতিরূপ।
কলকাতা: ৫১ টি সতীপীঠ (Sati Pith) এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সতীপীঠ হল মানস সতীপীঠ (Manas Satipith) অথবা মানস শক্তিপীঠ। যেটি তিব্বতের মানস সরোবরের কাছে অবস্থিত। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে, এখানে সতীর ডান হাত পতিত হয়েছিল। মানস সতী পীঠে অধিষ্ঠিত দেবী হলেন দাক্ষায়ণী এবং ভৈরব হলেন হর। বিভিন্ন মত অনুসারে মানুষ সতীপীঠের ভৈরব এর নাম অমর।
মানস সতী পীঠের মাহাত্ম্যের সবচেয়ে বড় কারণ পার্শ্ববর্তী মানস সরোবর। হিমালয়ের কোলে অবস্থিত সমুদ্র তল থেকে প্রায় ১৬ হাজার ফুট উচ্চতায় বিরাট আকারের এই সমুদ্র সমান হ্রদটি বেশ গভীর। এছাড়াও এই হ্রদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক পৌরাণিক কাহিনী। এছাড়া হিন্দুরা মনে করেন যে, এই কৈলাস পর্বতে মহাদেব শিবের বাসস্থান রয়েছে। তিব্বতে অবস্থিত এই কৈলাস এবং মানস সরোবরকে কেন্দ্র করেই এই মানস শক্তি পীঠটি গড়ে উঠেছে। আর তাই একদিকে সতীর মাহাত্ম্য থাকলেও অন্যদিকে এখানে শৈব মাহাত্ম্যও বিদ্যমান রয়েছে। প্রতিটি তীর্থস্থান মানুষকে ধন্য করে, আর সেই রকম ভাবেই মানস শক্তি পীঠের সঙ্গে ওতোপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে মানস সরোবরের সৃষ্টিতত্ত্ব।
মানস সরোবর কিভাবে সৃষ্টি হল ? তার উত্তরে জানা যায় যে, স্কন্দ পূরণে কথিত আছে যে, ব্রহ্মার মন থেকে সৃষ্ট হয়েছিল একটি বিশাল হ্রদের কথা, তিনি ভেবেছিলেন এমন একটি সরোবর, যে সরোবরে স্নান করলে রজ, তমো গুণ থেকে সাত্ত্বিক গুনে অধিষ্ঠিত হওয়া যায়। আর তাই হিমালয়ের উপরে ৩০ যোজন পরিধি বিশিষ্ট বিশাল একটি হ্রদ তৈরি করলেন তিনি। ব্রহ্মা মানস জাত বলে, এই হ্রদের নাম হলো মানস সরোবর।
এছাড়াও হিমালয়ের বুকে প্রায় ২২ হাজার ফুট উঁচু কৈলাস পর্বতের কাছে এই মানস সরবরের পবিত্র কুণ্ডকেই সতী পীঠ হিসেবে মনে করা হয়। হিন্দুদের বিশ্বাস অনুসারে এই কৈলাস পর্বত শিবের বাসস্থান আবার জৈনদের মত অনুসারে আদিনাথ ঋষভদেব এই পর্বতেই সাধনা করে সিদ্ধি লাভ করেছিলেন।
এই মানুষ সরোবরের সতী পীঠের মাহাত্ম্য এতটাই যে, অনেকে রাত্রে কৈলাস পর্বতের উপরে দুটি আলোকছটা দেখতে পান। যাকে দৈব আলোক জ্যোতিও বলা হয়। সেই আলোক ছটা পরস্পরের অনুগামী। মানুষের বিশ্বাস অনুসারে এই আলোক ছটাই আসলে শিব এবং পার্বতীর প্রতিরূপ।
আরও পড়ুন, সতীর জিহ্বা পড়েছিল এখানেই, জলেও নেভে না, শতাব্দী ধরে অলৌকিকভাবে প্রদীপের শিখা জ্বলছে এই সতীপীঠে!
অনেকের ধারণা অনুসারে জানা যায় যে, রাজা মান্ধাতা এই হ্রদটি প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন, আর তার নাম অনুসারে এই সরোবরের দক্ষিণ দিকে দেখা যায় মান্ধাতা শৈল শ্রেণীকে। তবে আলাদা করে এখানে কোনরকম মন্দির নির্মাণ করা হয়নি। দেবী মহামায়া এখানে পরম প্রকৃতির রূপে ধরা দেন, ভক্তদের কাছে।
তাই এখানে যেমন কোন মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়নি, তেমনি কোনরকম দেবী মূর্তিও এখানে নেই, বলতে গেলে নিরাকার। এই শক্তি আদি শক্তির একটি বিশেষ রূপ হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত। প্রত্যেকটি সতীপীঠ অথবা শক্তি পীঠে দেবী এবং ভৈরব প্রতিষ্ঠিত থাকেন। দেবী হলেন সতীর রূপ আর ভৈরব হলেন দেবীর স্বামী। মানস শক্তিপীঠ মন্দিরটিতে - নবরাত্রি, দুর্গা অষ্টমী, মকর সংক্রান্তি বিশেষভাবে পালন করা হয়ে থাকে।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে