Disappearing Spring in India: শীত যেতে না যেতেই হাজির গ্রীষ্ম, অবলুপ্তির পথে ঋতুরাজ বসন্ত, প্রমাণ নয়া গবেষণায়
Weather Science: ঋতুরাজ বসন্তের অস্তিত্বই এখন সঙ্কটে।
'শুধু এবারের মতো
বসন্তের ফুল যত
যাব মোরা দু'জনে কুড়াতে।
তোমার কাননতলে ফাল্গুন আসিবে বারম্বার,
তাহারি একটি শুধু মাগি আমি দুয়ারে তোমার।'
শুধুমাত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই নন, বসন্তের কবিতায় পাতা ভরিয়েছেন বহু স্বনামধন্য কবিই। কিন্তু সেই ঋতুরাজ বসন্তের অস্তিত্বই এখন সঙ্কটে। তীব্র গরম, অঝোর বর্ষা এবং কনকনে শীতের পেরিয়ে যে সৌম্য ঋতুর অপেক্ষায় দিন গুনতেন সাধারণ মানুষ, সেই বসন্ত বাঙালি তথা ভারতবাসীর জীবন থেকে বিদায় নিচ্ছে বলে এবার উদ্বেগ ধরা পড়ল। (Disappearing Spring in India)
শীত এবং গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময় এযাবৎ বিরাজ করত সৌম্য বসন্ত। কিন্তু গত ৫০ বছরের আবহাওয়ারর সামগ্রিক রেকর্ড বলছে, একটু একটু করে জনজীবন থেকে বিদায় নিচ্ছে সে। পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে যে Climate Trens সংস্থা, তারাই এই উদ্বেগের খবর সামনে এনেছে। ১৯৭০ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত দেশের ৩৩টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মাসিক গড় তাপমাত্রার হিসেব মিলিয়ে দেখে বসন্ত-বিলুপ্তির খবর সামনে এনেছে তারা। (Weather Science)
Climate Trends জানিয়েছে, ১৯৭০ সাল থেকে বর্তমান সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের খুঁটিনাটি দিকগুলি নখদর্পণে রয়েছে সকলের। সমস্ত পরিসংখ্যান নথিবদ্ধ রয়েছে। তার উপর ভিত্তি করেই প্রত্যেক রাজ্য এবং অঞ্চলগুলির মাসিক উষ্ণায়নের সঙ্গে ত্রৈমাসিক আবহাওয়ার তুলনা করে দেখা হয়। এর মধ্যে মণিপুরে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন চোখে পড়েছে, ২.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৯৭০ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত রাজস্থানে ফেব্রুয়ারি মাসের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়েছে ২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আরও পড়ুন: Dream About the Dead: হারিয়েও মুহূর্তের জন্য ফিরে পাওয়া, স্বপ্নে কেন বার বার ফিরে আসেন মৃত ব্যক্তি?
দেশের ৩৪টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে ১২টিতে শীতই দ্রুততম উষ্ণ ঋতু হিসেবে উঠে এসেছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে শরৎ, ১৩টি অঞ্চলে শীত দ্রুততম উষ্ণ ঋতু। অর্থাৎ শীত এবং শরতে ওই অঞ্চলগুলিতে দেশের বাকি অঞ্চলের তুলনায় বেশি গরম থাকে। শীতকালে যেভাবে তাপমাত্রার পরিবর্তন চোখে পড়ছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগের বলে জানিয়েছে Climate Trends. তাদের দাবি, দেশের দক্ষিণ অংশের বেশ কিছু এলাকায় ডিসেম্বর এবং জানুয়ারিতে ভাল গরম থাকছে। ডিসেম্বর এবং জানুয়ারিতে সিকিম এবং মণিপুরের তাপমাত্রা যথাক্রমে ২.৪ এবং ২.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। সেই তুলনায় দিল্লির তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে -০.২১ এবং -০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
ফেব্রুয়ারি আসতে আসতে গোটা দেশের সর্বত্র ভাল গরম পড়ছে ইদানীং কালে। জম্মু ও কাশ্মীরে তাপমাত্রা ৩.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। সর্বনিম্ন ছিল তেলঙ্গানায়, ০.৪ সেলসিয়াস। উত্তর ভারতে জানুয়ারি মাসে ঠান্ডা-গরম দুই-ই থাকছে। ফেব্রুয়ারিতে একধাক্কায় তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। দেশের ন'টি অঞ্চলে জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসের তাপমাত্রার ফারাক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি, এই তালিকায় রয়েছে রাজস্থান, হরিয়ানা, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, হিমাচলপ্রদেশ, লাদাখ, পঞ্জাব, জম্মু ও কাশ্মীর এবং উত্তরাখণ্ড। দেশের বড় অংশ থেকে বসন্ত কার্যত বিদায়ই নিয়েছে বলে মত গবেষকদের।
শীতের মরশুমে দক্ষিণ ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের উষ্ণতা নিয়ে আগেও উদ্বেগ দেখা দেয়। উত্তরে বৃষ্টির পরিমাণ হ্রাস পাওয়া নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন গবেষকরা। ফেব্রুয়ারি মাসে উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে গ্রীষ্মের মতোই তাপমাত্রা বলে দেখা গিয়েছে গবেষণায়। Climate Central সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু পারশিং জানিয়েছেন, উষ্ণায়ন লাগাতার বেড়ে চলেছে। বসন্তের পরই তাপমাত্রা এতটা বেড়ে যাচ্ছে যে সরাসরি গ্রীষ্ম এসে পড়ছে। অর্থাৎ ঋতুর পারস্পরিক সামঞ্জস্যে বিঘ্ন ঘটছে।