Eriksen Health Analysis Exclusive: হার্ট অপারেশনের পর কানু খেলতে পারলে এরিকসেনও পারবে, বলছেন শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত
Dr Santi Ranjan Dasgupta's analysis about heart condition of Christian Eriksen, exclusive report. | হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে ২৯ বছর অবধি খেলতে পারলে আরও কয়েক বছর পারবে এরিকসেন, বলছেন শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত।
কলকাতা: চলতি ইউরো কাপের শুরুতেই ঘটে গেছে এক মর্মান্তিক ঘটনা। ফিনল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচ চলাকালীন হঠাৎই সংজ্ঞাহীন হয়ে মাঠে লুটিয়ে পড়েন ডেনমার্কের তারকা ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন। মাঠেই বেশ কিছুক্ষণ ধরে চিকিৎসার পর তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এই তারকা ফুটবলার এখন স্থিতিশীল। তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন। কিন্তু বিভিন্ন মহল থেকে সংশয় প্রকাশ করা হচ্ছে, তিনি হয়তো আর কোনওদিন পেশাদার ফুটবল খেলতে পারবেন না। কারণ, তাঁর হৃদযন্ত্রের অবস্থা বিশেষ ভাল নয়। এই অবস্থায় মাঠে ফিরলে হয়তো ভবিষ্যতে আরও বড় বিপদ হতে পারে।
অভিজ্ঞ চিকিৎসক শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত অবশ্য সে কথা মানতে নারাজ। কলকাতা ময়দানের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত এই চিকিৎসক। তিনি বহু ফুটবলারের চিকিৎসা করেছেন। ২০০৩ সালে আশিয়ান কাপে ইস্টবেঙ্গলের সেই সময়ের তারকা ফুটবলার দেবজিৎ ঘোষ যখন প্রতিপক্ষের ফুটবলারের সঙ্গে সংঘর্ষে মারাত্মক চোট পেয়েছিলেন, তখন শান্তিরঞ্জনবাবুই তাঁর চিকিৎসা করেছিলেন। ফুটবলারদের শারীরিক গঠন, পেশি, অস্থি, হৃদযন্ত্রের বিষয়ে তাঁর বিশদ জ্ঞান রয়েছে।
এরিকসেনের অসুস্থতার বিষয়ে শান্তিরঞ্জনবাবু জানালেন, ‘আমি টিভিতে দেখলাম, ও একটা থ্রো-ইনের সময় বল রিসিভ করতে গিয়ে হঠাৎ লুটিয়ে পড়ল। ওর ধারেকাছে আর কোনও ফুটবলার ছিল না। ও একাই ছুটছিল। ও হয়তো বুকে বল রিসিভ করতে চাইছিল। কিন্তু ও সংজ্ঞা হারিয়ে পড়ে গেল আর বলটা ওর হাঁটুতে লেগে মাঠের বাইরে চলে গেল। ওর কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছিল। রেফারি সেটা বুঝতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে খেলা থামিয়ে দেয়। রেফারি ওর কাছেই থাকায় সুবিধা হয়। ডেনমার্কের ক্যাপ্টেন ছুটে এসে সিপিআর শুরু করে দেয়। এরপর ওকে যে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেটা অত্যন্ত উন্নত মানের। সব ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে ওই হাসপাতালে। ফলে আমার বিশ্বাস, এরিকসেন খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে।’
এরিকসেনের বিষয়ে শান্তিরঞ্জনবাবু আরও বললেন, ‘আমার মনে হয়, ও মাঠে ফিরতে পারবে কি না, সে বিষয়ে এখনই নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাবে না। হাসপাতালের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ওর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। ওকে আইসিইউ থেকে জেনারেল বেডে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওর যদি শারীরিক অবস্থা জটিল থাকত, তাহলে কোনওদিনই জেনারেল বেডে দেওয়া হত না। ও নিজেও বলছে, এখন অনেকটা ভাল আছে। ফলে ওর মাঠে ফেরা উচিত। ওর হৃদযন্ত্রে যদি সমস্যাই থাকে, তাহলে সেটা নিয়ে যখন ২৯ বছর বয়স অবধি খেলতে পেরেছে, তখন আরও কয়েক বছর খেলতে পারবে।’
এ প্রসঙ্গে নাইজিরিয়ার প্রাক্তন তারকা ফুটবলার নোয়ানকা কানুর কথা উল্লেখ করেছেন শান্তিরঞ্জনবাবু। তিনি প্রাক্তন ফুটবলার দীপেন্দু বিশ্বাস, মইদুল ইসলাম, অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে খেলা ভারতের তরুণ ফুটবলার আনোয়ার আলির হৃদযন্ত্রে সমস্যার কথাও বলেছেন। এই চিকিৎসক জানালেন, ‘কানু যখন হার্ট অপারেশনের পরেও দিব্যি খেলতে পেরেছে, তখন এরিকসেনের কোনও সমস্যা হওয়ার কথাই নয়। দীপেন্দু যখন মাহিন্দ্রায় খেলতে যায়, তখন ওর হার্টের সমস্যা ধরা পড়ে। ওর হল ‘অ্যাথলেটিক হার্ট’। এই ধরনের হার্ট শুধু খেলার সময়ই নয়, মানসিক চাপ বা অন্য কোনও কারণেও যখন-তখন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। মাহিন্দ্রা খেলা ছেড়ে দিতে বলার পর দীপেন্দু যখন কলকাতায় চলে আসে, তখন ওকে দেখে আমি বলেছিলাম, খেলা চালিয়ে যা, কিচ্ছু হবে না। ও এই হার্ট নিয়েই তিন প্রধানে খেলেছে, ২০০-র বেশি গোল করেছে। সত্তরের দশকে আমরা যখন কলেজে পড়তাম, তখন মহমেডান স্পোর্টিংয়ের স্তম্ভ মইদুল ইসলামেরও হার্টে সমস্যার কথা শুনেছিলাম। তাঁকেও খেলা ছেড়ে দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু মনের জোরে তিনি খেলা চালিয়ে যান। তরুণ ফুটবলার আনোয়ার আলিরও হার্টে সমস্যা আছে। ওকেও খেলা ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জানি না ও কী করবে।’
আন্তর্জাতিক ফুটবলের মতোই ভারতে ঘরোয়া ফুটবলেও কয়েকজন মারাত্মক চোট পেয়েছেন। মাঠেই সঞ্জীব দত্ত, জুনিয়রের মৃত্যুও হয়েছে। দেবজিৎকে চোট পেতে দেখেও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন বাংলার ফুটবলপ্রেমীরা। কিন্তু উপযুক্ত চিকিৎসা হওয়ায় এই ফুটবলার সুস্থ হয়ে মাঠে ফেরেন। প্রায় ১৮ বছর আগের সেই ঘটনা প্রসঙ্গে শান্তিরঞ্জনবাবু বললেন, ‘হেড করতে উঠে বিপক্ষের এক ফুটবলারের সঙ্গে সংঘর্ষে দেবজিৎ মাথায় চোট পায়। ওর খিঁচুনি শুরু হয়ে গিয়েছিল। ওর কাছেই ছিল ডগলাস। ও দেবজিতের মুখে মুখ দিয়ে শ্বাস চালু রাখে। তারপর আমি ছুটে যাই। চোটের গুরুত্ব বুঝে ডেকাড্রন ইঞ্জেকশন দিই। তারপর দেবজিৎ সুস্থ হয়ে ওঠে। খেলার সময় কেউ চোট পেতেই পারে। তাই ইউরোপের ফুটবলারদের সিপিআর-এর ট্রেনিং দেওয়া হয়। লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকার ফুটবলারদেরও সিপিআর-এর প্রাথমিক জ্ঞান থাকে। কেউ মারাত্মক চোট পেলে সেটা কাজে লাগে।’
জুনিয়রের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় মোহনবাগানের তৎকালীন গোলকিপার সুব্রত পালকে দোষ দিতে নারাজ শান্তিরঞ্জনবাবু। এ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘সুব্রত পালের কোনও দোষ ছিল না। গোলে বল ঠেলে দেওয়ার পর ওকে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল জুনিয়র। কিন্তু মাটিতে পড়ে গিয়ে ওর কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। এসব ক্ষেত্রে তিন মিনিটের মধ্যে চিকিৎসা শুরু করে দিতে হয়। কিন্তু সেটা হয়নি। সেই কারণেই জুনিয়রের মৃত্যু হয়।’