Ind vs NZ Exclusive: ৭ বছর আগে গ্রিনপার্কেই বাঁচিয়েছিলেন কেরিয়ার, হতাশা কাটিয়ে আলোর পথে শ্রেয়স
ABP LIVE Exclusive: কাঁধের চোট শ্রেয়সকে দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে রেখেছিল। অস্ত্রোপচারও করাতে হয়। সেই সময় হতাশায় ভুগতেন শ্রেয়স, জানালেন আমরে।
![Ind vs NZ Exclusive: ৭ বছর আগে গ্রিনপার্কেই বাঁচিয়েছিলেন কেরিয়ার, হতাশা কাটিয়ে আলোর পথে শ্রেয়স ABP LIVE Exclusive: How Shreyas Iyer made a dramatic comeback at Green Park, Kanpur, reveals coach Pravin Amre Ind vs NZ Exclusive: ৭ বছর আগে গ্রিনপার্কেই বাঁচিয়েছিলেন কেরিয়ার, হতাশা কাটিয়ে আলোর পথে শ্রেয়স](https://feeds.abplive.com/onecms/images/uploaded-images/2021/11/25/969f159a6c8590e130a82b4a3a9aba63_original.jpg?impolicy=abp_cdn&imwidth=1200&height=675)
কলকাতা: জীবন যেমন আঘাত করে, তেমন ফিরিয়েও দেয়। তা নাহলে যে মাঠে একদিন কেরিয়ার বাঁচাতে মাঠে নেমেছিলেন, কানপুরের সেই গ্রিন পার্কেই সুনীল গাওস্করের হাত থেকে শ্রেয়স আইয়ারের (Shreyas Iyer) টেস্ট ক্যাপ নেওয়া আর প্রথম দিনই ব্যাট হাতে শাসনের আর কী-ই বা ব্যাখ্যা থাকতে পারে!
৭ বছর আগে গ্রিন পার্কে উত্তরপ্রদেশের মুখোমুখি হয়েছিল মুম্বই। যে ম্যাচ ছিল শ্রেয়সের অগ্নিপরীক্ষা। রান না পেলে তাঁকে দল থেকে ছুড়ে ফেলার জন্য প্রস্তুত ছিল তথাকথিত 'খরুশ' মুম্বইয়ের ক্রিকেটমহল। ম্যাচের আগে বাধ্য হয়ে মুম্বইয়ের কোচ প্রবীণ আমরে (Pravin Amre) হোটেলে নিজের রুমে ডেকে পাঠিয়েছিলেন শ্রেয়সকে। বলেছিলেন, রান করো। নাহলে তোমার বাদ পড়া আর আমার চাকরি যাওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। কোচের ধমক শ্রেয়সের কাছে বিবেকের দংশনের মতো ছিল। ব্যাট হাতে সেই ম্যাচে নিজেকে চিনিয়েছিলেন মুম্বইয়ের তরুণ। বাঁচিয়েছিলেন নিজের কেরিয়ার।
বৃহস্পতিবার সেই গ্রিনপার্কেই টেস্ট অভিষেক হল শ্রেয়সের। চাপের মুখে অপরাজিত ৭৫ রান করে দলকে সুবিধাজনক জায়গায় রাখলেন। যা দেখে আপ্লুত তাঁর কোচ তথা জাতীয় দলের প্রাক্তন ক্রিকেটার প্রবীণ আমরে। মুম্বই থেকে ফোনে এবিপি লাইভকে বললেন, 'আমি খুব খুশি। এই টেস্ট ক্যাপের জন্য ও খুব পরিশ্রম করেছিল। ২০১৭ সালে জাতীয় দলে ঢুকলেও প্রথম একাদশে সুযোগ পায়নি। তারপর চার বছর অপেক্ষা করতে হল এই দিনটার জন্য। এক মরসুমে প্রায় তেরোশো রান করে মুম্বই ক্রিকেটে ৭৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রান স্কোরার হয়েছিল। প্রচুর পরিশ্রম করেছে। যে কোনও ক্রিকেটারের কাছে এই দিনটা স্পেশ্যাল। টেস্ট ক্যাপ ওর প্রাপ্য় ছিল।'
আমরের স্মৃতিতে ভেসে উঠছে সাত বছর আগে রঞ্জি ট্রফির সেই ম্যাচ। বলছিলেন, '২০১৪ সালের রঞ্জি ট্রফিতে মুম্বইয়ের শুরুটা জঘন্য হয়েছিল। জম্মু-কাশ্মীরের কাছে সরাসরি হেরে যাই। সেটা ছিল প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে শ্রেয়সের অভিষেক ম্যাচ। দুই ইনিংসেই ও ব্যর্থ হয়। তারপর দিল্লিতে রেলওয়েজের বিরুদ্ধে ম্য়াচেও ও ব্যর্থ হয়। দলে থাকা নিয়ে বেশ চাপে ছিল ও। আমারও চাকরি তখন বিপন্ন। অনেকেই শ্রেয়সকে সুযোগ দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিল। আমি ঠিক করি ওকে সমর্থন করে যাব।' যোগ করলেন, 'আমাদের পরের ম্যাচ ছিল কানপুরের গ্রিন পার্কে, উত্তরপ্রদেশের বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচের আগে আমি ওকে হোটেলে আমার ঘরে ডেকে পাঠিয়েছিলাম। বলেছিলাম, এই ম্যাচে রান না পেলে তুমি তো বাদ পড়বেই, আমার চাকরিও থাকলে হয়। কারণ, সকলে বলবে কেন তোমাকে খেলিয়ে যাচ্ছি। ও বুঝতে পেরেছিল যে, এটাই সম্ভবত শেষ সুযোগ। ব্যর্থ হলে ওকে বাদ পড়তে হতো। আবার ফিরে যেতে হতো ক্লাব ও অফিস ক্রিকেটের রগড়ানিতে। তারপরে হয়তো ফের মুম্বই দলে ওর নাম নিয়ে আলোচনা হতে পারে। মানে এক লহমায় অনেকটা পিছিয়ে যাওয়া।'
তবে কোচকে হতাশ করেননি শ্রেয়স। আমরে বলছেন, 'সেই ম্যাচে গ্রিন পার্কে ও ৭০ রান করেছিল। বুঝিয়ে দিয়েছিল, ওর সুযোগ প্রাপ্য় ছিল। পরের ম্যাচে বাংলার বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করে দলে নিজের জায়গা পাকা করে ফেলেছিল। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।'
বৃহস্পতিবার যখন শ্রেয়স ব্যাট করতে নামেন, ভারতের চার উইকেট পড়ে গিয়েছে। অভিষেক টেস্টেই চাপের মুখে রুখে দাঁড়ান তিনি। যা দেখে অবাক নন আমরে। 'প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৪৭০০ রান রয়েছে ওর। ব্যাপারটা মোটেও এই নয় যে, কেউ এক হাজার রান করেছে আর জাতীয় দলে সুযোগ করে নিয়েছে। এরকম চাপের মুখে ও আগেও অনেকবার ব্যাট করেছে,' বলছিলেন আমরে। যোগ করলেন, 'যেটা সবচেয়ে ভাল লেগেছে, গ্রিনপার্কের মন্থর পিচে যেভাবে ও মানিয়ে নিল। এই ধরনের পিচ ওর পছন্দের নয়। কিন্তু সেই পিচেও পরিণতিবোধ দেখিয়ে ব্যাটিং করল। প্রথমে অজিঙ্ক রাহানে ও পরে রবীন্দ্র জাডেজার সঙ্গে দুটো মহা গুরুত্বপূর্ণ পার্টনারশিপ খেলে ম্য়াচের রং পাল্টে দিল।'
কাঁধের চোট শ্রেয়সকে দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে রেখেছিল। অস্ত্রোপচারও করাতে হয়। সেই সময় হতাশায় ভুগতেন শ্রেয়স, জানালেন আমরে। বললেন, 'দু’মাস বাড়িতে বসে থাকতে কোনও খেলোয়াড়েরই ভাল লাগে না। ও-ও ভীষণ হতাশ হয়ে পড়েছিল। মাঠে নেমে পারফর্ম করার জন্য ছটফট করছিল। কাঁধ নাড়াতে পারত না। খুব যন্ত্রণাদায়ক ছিল। তার ওপর অন্য ক্রিকেটারদের খেলতে দেখে আরও হতাশায় ভুগত। এই অভিজ্ঞতা আগে কোনওদিন হয়নি ওর। তাই সেই সময় শরীরের নীচের দিকের পেশিশক্তি বাড়ানোয় জোর দিয়েছিল। ফিটনেস নিয়ে পরিশ্রম শুরু করে। তারপর ধীরে ধীরে ১৫ মিনিট করে ব্যাটিং শুরু করে। শুধু পাঞ্চ করত। শট খেলতে পারত না। প্রত্যেক সেশনের পর ফিজিও পর্যবেক্ষণ করত। মানসিকভাবে ভেঙে পড়লে আর খেলতেই পারত না। তাই ওকে সবসময় ইতিবাচক রাখতাম। আইপিএল ও বিশ্বকাপ খেলা লক্ষ্য ছিল। দুর্ভাগ্যবশত, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুযোগ পায়নি।' আমরে আরও বললেন, 'জুলাই মাস থেকে আইপিএলের প্রস্তুতি শুরু করেছিল। যার পুরস্কার হচ্ছে, আইপিএলে মাঠে নেমে দ্বিতীয় ম্যাচেই ম্য়ান অফ দ্য ম্যাচ স্বীকৃতি। ও সাফল্যের জন্য় মরিয়া ছিল। টেস্ট দলে সুযোগ পেয়ে হয়তো স্বস্তি পেল।'
সুনীল গাওস্কর এদিন শ্রেয়সের হাতে টেস্ট ক্যাপ তুলে দিয়েছেন। আমরে বলছেন, 'সুনীল গাওস্কর ওর নায়ক। গাওস্করের কাছ থেকে টেস্ট ক্যাপ পাওয়া ওকে আরও উজ্জ্বীবিত করে তুলেছে। হয়তো মাঠে আরও ১০ শতাংশ বেশি দেবে।'
আপাতত অভিষেক টেস্টে ছাত্রের সেঞ্চুরির অপেক্ষায় কোচ আমরে।
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
![ABP Premium](https://cdn.abplive.com/imagebank/metaverse-mid.png)