Kolkata Derby: লিগ তালিকার তলানিতে দুই দল, কলকাতা ডার্বিতে আত্মসম্মানের লড়াইয়ে মুখোমুখি ইস্টবেঙ্গল-মহামেডান
East Bengal vs Mohammedan Sporting: ইস্টবেঙ্গল ও মহামেডান স্পোর্টিংয়ের আইএসএল প্রথম ডার্বি গোলশূন্য ড্রয়ে শেষ হয়।
কলকাতা: কলকাতার এক দল আইএসএল শিল্ড জয়ের অপেক্ষায় থাকলেও বাকি দুই দলের বাস্তব পরিস্থিতি একেবারে অন্য রকম। তারা এখন একটাই আশা নিয়ে মাঠে নামছে। লিগ টেবলের একেবারে নীচ থেকে নিজেদের কয়েক ধাপ তুলে চলতি আইএসএলের পরীক্ষা শেষ করা। তবু ডার্বি, ডার্বিই (Kolkata Derby)। এর মেজাজের সঙ্গে আর পাঁচটা ম্যাচের মেজাজের ফারাক অবশ্যই আছে। তাই মহমেডান স্পোর্টিং (Mohammedan Sporting) ও ইস্টবেঙ্গল এফসি (East Bengal) পয়েন্ট টেবলের যেখানেই থাকুক, তাদের দ্বৈরথ মানে আলাদা এক যুদ্ধ, মান সন্মান বাঁচানোর যুদ্ধ।
মনে করে দেখুন নভেম্বরের সেই ম্যাচের কথা। ইন্ডিয়ান সুপার লিগে প্রথম লাল-হলুদ বনাম সাদা-কালো ম্যাচ। সে দিন যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ম্যাচের বয়স আধ ঘণ্টা পেরনোর আগেই ইস্টবেঙ্গলের দুই নির্ভরযোগ্য উইঙ্গার নন্দকুমার শেকর ও নাওরেম মহেশ সিং লাল কার্ড দেখে মাঠের বাইরে চলে যান। পরের ৭৫ মিনিট (বাড়তি সময়-সহ) ন’জনে মিলে লড়াই করে দুর্দান্ত খেলে নিজেদের গোল অক্ষত রাখে লাল-হলুদ বাহিনী এবং এ মরশুমের প্রথম পয়েন্ট অর্জন করে তারা।
সে দিন অমীমাংসিত, এ বার ফয়সালা?
সেই ড্র তাদের কাছে ছিল প্রায় জয়ের সমান। আর মহমেডান স্পোর্টিং-র কাছে সেই ড্র ছিল হারের মতোই। দুর্বল ইস্টবেঙ্গলকে সামনে পেয়েও তাদের রক্ষণে ফাটল ধরাতে পারেনি সাদা-কালো ব্রিগেড। সারা ম্যাচে প্রায় ৭৫ শতাংশ বল পজেশন ছিল তাদের। ১৬টি গোলের সুযোগ তৈরি করে মহমেডান। তা সত্ত্বেও একবারের জন্যও প্রতিপক্ষের জালে বল জড়াতে পারেনি তারা। ন’জনে খেলা ইস্টবেঙ্গল সে দিন প্রায় একশো মিনিটের খেলায় মাত্র একটি শট গোলে রাখতে পেরেছিল। চারটির বেশি গোলের সুযোগও পায়নি তারা। ম্যাচের অধিকাংশ সময় রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলা ছাড়া তাদের কোনও উপায়ও ছিল না।
রবিবার সন্ধ্যায় যখন ফের দুই দল মুখোমুখি হবে, সেই ম্যাচের কথা অবশ্যই মাথায় থাকবে তাদের। আধুনিক ফুটবলে কোচেরা অতীত, ইতিহাসকে গুরুত্ব দিতে চাননা ঠিকই। কিন্তু ফুটবলাররা কি তা পুরোপুরি ভুলতে পারেন? বোধহয় না। রবিবারও বোধহয় তারা প্রথম লিগের সেই ম্যাচের কথা ভুলতে পারবেন না। সে দিন কোনও ফয়সালা হয়নি ঠিকই। কিন্তু এই ম্যাচে ফয়সালা করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে দুই দলই।
এগিয়ে লাল-হলুদ, না সাদা-কালো?
এ পর্যন্ত ১৯ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট পেয়ে পয়েন্ট টেবলের ১১ নম্বরে রয়েছে ইস্টবেঙ্গল। একই সংখ্যক ম্যাচে ১১ পয়েন্ট পেয়ে সর্বশেষ স্থানে মহমেডান স্পোর্টিং। দুই দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সও প্রায় একই রকমের। দুই দলই গত পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে একটি জয় পেয়েছে, একটি ড্র করেছে ও তিনটি ম্যাচে হেরেছে। তবে শেষ তিন ম্যাচের পারফরম্যান্স যদি দেখা যায়, তা হলে এগিয়ে ইস্টবেঙ্গল। এই তিন ম্যাচ থেকে চার পয়েন্ট তুলেছে তারা। কিন্তু শেষ তিন ম্যাচ থেকে মহমেডানের সংগ্রহ শূন্য।
আইএসএলের শেষ পর্বে ভাল খেলার একটা তাগিদও রয়েছে ইস্টবেঙ্গলের এবং তা হল মার্চে তাদের এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের পরীক্ষা রয়েছে, আপাতত যা তাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। আইএসএলে এ বার সেরা ছয়ে থাকার লক্ষ্য নিয়ে মরশুম শুরু করলেও তাদের সেই লক্ষ্য পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। সেই আফসোস ভুলতে এখন এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে ভাল পারফরম্যান্স দেখাতে চায় ইস্টবেঙ্গল এবং তারই প্রস্তুতি হিসেবে আইএসএলের শেষ কয়েকটি ম্যাচকে দেখতে পারে তারা।
এএফসি-র টুর্নামেন্টের কথা ভেবেই সম্প্রতি ভেনেজুয়েলার ফরোয়ার্ড রিচার্ড সেলিস ও ক্যামেরুনের ফরোয়ার্ড রাফায়েল মেসি বৌলিকে সই করিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। আইএসএলের শেষ কয়েকটি ম্যাচে এই দু’জনকে তৈরি করে নেওয়াই এখন লক্ষ্য লাল-হলুদ কোচ অস্কার ব্রুজোনের।
চোট-আঘাত, তাগিদের অভাব!
তবে তাঁর দলের চোট আঘাত সমস্যা কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। এই ম্যাচের আগে যেমন জিকসন সিং ও রিচার্ড সেলিসকে নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। স্প্যানিশ মিডফিল্ডার সউল ক্রেসপো হয়তো রবিবার মাঠে নামবেন। ডিফেন্ডার আনোয়ার আলি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তাঁরও মাঠে নামার সম্ভাবনা রয়েছে। অপর ডিফেন্ডার মহম্মদ রকিপও চোট সারিয়ে ফিরেছেন। গত কয়েকটি ম্যাচে প্রথম এগারো বাছতেই হিমশিম খেয়েছেন কোচ অস্কার ব্রুজোন। এখন অবস্থা কিছুটা ভাল।
ভেনেজুয়েলা থেকে আসা ফরোয়ার্ড রিচার্ড সেলিস ভারতে এসে পরিবেশ ও সতীর্থদের সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিয়েছেন। গত চার ম্যাচে গোল বা অ্যাসিস্ট না করলেও খারাপ পারফরম্যান্স দেখাননি। কিন্তু চোটের জন্য তিনিও অনিশ্চিত। শনিবার আক্রমণে দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকসের সঙ্গে তাঁকে দেখা নাও যেতে পারে তাঁকে। গত সপ্তাহে কলকাতায় এসে পৌঁছন ক্যামেরুনের ফরোয়ার্ড রাফায়েল মেসি বৌলি। প্রথম ম্যাচে আধ ঘণ্টা খেলেছেন। এই ম্যাচে তাঁকে শুরু থেকেই দেখা যেতে পারে।
আগোছালো দল নিয়ে মুম্বইয়ের মাঠে নেমে মুম্বই সিটি এফসি-কে গোলশূন্য ম্যাচে আটকে দেয় মশাল-বাহিনী। সে দিন সারা ম্যাচে ৬২.৪% বলের দখল রাখার পরেও গোল করতে পারেনি মুম্বই। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে এক পয়েন্ট নিয়ে কলকাতায় ফেরে অস্কার-বাহিনী। এই লড়াইয়ের পরে সমর্থকেরা ভেবেছিলেন, চেন্নাইনের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে হয়তো ঘুরে দাঁড়াবে দল। কিন্তু সেই ম্যাচে ০-৩-এ হেরে মাঠ ছাড়ে অস্কার-বাহিনী। সারা ম্যাচে দশটি গোলের সুযোগ তৈরি করে তারা। ২২টি ক্রস দেয় এবং সাতটি কর্নার আদায় করে। তা সত্ত্বেও কোনও গোল করতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল!
(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: প্রতিপক্ষ ওপার বাংলার দল, মলদ্বীপ, ছবির মতো সাজানো শিলংয়ের মাঠে জাতীয় দলের হয়ে খেলবেন গুরপ্রীতরা
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
