লিগের ফিরতি মোহন-ইস্ট ডার্বি খেলতে গুয়াহাটি রওনা হওয়ার আগে সবুজ-মেরুন বাহিনীর কোচ মোলিনা বলেন, 'আমরা শীর্ষে আছি আর ওরা এগারোয় আছে আমাদের দুই দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের জন্য। তবে কালকের ম্যাচে এর কোনও প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না। কাল আমরা কতটা ভাল খেলতে পারব, তার ওপরই নির্ভর করবে সব কিছু। ডার্বিতে কে কোন অবস্থানে আছে, সেটা কোনও ব্যাপার নয়। কলকাতা ডার্বি বরাবরই কঠিন লড়াই। ওরা (ইস্টবেঙ্গল) লড়বে। আমাদেরও লড়ার জন্য তৈরি থাকতে হবে। সেরা খেলাটা দিয়ে জিততে হবে। টানা ৯০ মিনিট আমরা যদি ভাল খেলতে পারি, তা হলে জিতব। আমি জেতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী'।

অক্টোবরে চলতি লিগের প্রথম কলকাতা ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলকে ২-০-য় হারিয়ে লিগ টেবলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে পড়ে গতবারের লিগশিল্ড চ্যাম্পিয়নরা। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের ভরা গ্যালারিতে প্রায় ৬০ হাজার দর্শকের সামনে সেই ম্যাচে অবশ্য দাপট ছিল সবুজ-মেরুন বাহিনীরই। তবে আড়াই মাসে ইস্টবেঙ্গল অস্কার ব্রুজোনের প্রশিক্ষণে তখনকার চেয়ে লড়াকু ও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। তাই এ বার ডার্বির লড়াইয়ে চেনা উত্তেজনা ফিরে আসার সম্ভাবনা প্রবল। কিন্তু অনিবার্য কারণে এ বার ফিরতি ডার্বি কলকাতা থেকে সরিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে প্রতিবেশী রাজ্যের শহর গুয়াহাটিতে।

এর ফলে এ বারের ডার্বি অন্যরকম হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন মোলিনা। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, কলকাতায় না হওয়ায় ডার্বি সম্পুর্ণ অন্যরকম হতে চলেছে। বেশিরভাগ সমর্থকদেরই তো সঙ্গে পাব না আমরা। তবে তাদের অনুরোধ, সবাই এসো, আমাদের আরও উৎসাহ জোগাও ও জিততে সাহায্য করো।

মোলিনা ধরে নিচ্ছেন, এ বার প্রতিপক্ষ ইস্টবেঙ্গলের কাছ থেকে আরও কড়া চ্যালেঞ্জ আসবে। তিনি বলেন, 'প্রথম ডার্বি ছিল ইস্টবেঙ্গলের কোচ অস্কার ব্রুজোনের কাছে প্রথম ম্যাচ। এর মধ্যে দলের সঙ্গে অনেক কাজ করেছেন তিনি। তাই ওদের কাছে এই ডার্বি অন্যরকম হবেই। আমি একই কথা বলব। দলের প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা আছে। সমর্থকদের কাছে এই ম্যাচটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ওদের মুখে হাসি ফোটাতে আমাদের জিততেই হবে'।

ভারতীয় ফুটবলের মহাযুদ্ধে নামার আগে তাই আর কোনও দিক নিয়েই কোনও ভাবনা নেই সবুজ-মেরুন কোচের। তাঁর যাবতীয় ধ্যানজ্ঞান এখন শনিবারের ম্যাচেই। তাই সাংবাদিক বৈঠকে পরের ম্যাচের প্রসঙ্গ উঠলে তিনি তা প্রায় উড়িয়ে দিয়ে বলেন, 'এখন আমরা শুধু এই ম্যাচ নিয়েই ভাবছি। পরের ম্যাচগুলো নিয়ে কোনও ভাবনাই নেই আমার মাথায়। শুধু এটুকু বলতে পারি, আমাদের কাছে প্রতি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে প্রতি ম্যাচেই জিততে হবে আমাদের'।

সম্প্রতি বাগান শিবিরে একাধিক নির্ভরযোগ্য ফুটবলারের চোট-আঘাত ছিল। যা নিয়ে বেশ চিন্তায় ছিলেন মোলিনা। স্কটিশ মিডফিল্ডার গ্রেগ স্টুয়ার্টকে তো একাধিক ম্যাচেই পাওয়া যায়নি। গত ম্যাচে দিমিত্রিয়স পেট্রাটসকেও পায়নি মোহনবাগান। তাঁরা ক্রমশ সুস্থ হয়ে উঠলেও চোট-আঘাতের তালিকায় নতুন সংযোজন মিডফিল্ডার অনিরুদ্ধ থাপা। এই ডার্বিতে তিনি যে নেই, তা স্পষ্ট জানিয়ে দেন তাঁদের কোচ মোলিনা। বলেন দেন, 'থাপাকে কাল পাব না। তবে চোট-আঘাত সমস্যা সামলানোর মতো যথেষ্ট খেলোয়াড় আমাদের হাতে আছে। তারাই সামলে দিতে পারবে'।

আর দুই বিদেশী? তাঁদের নিয়ে মোলিনার বক্তব্য, 'গ্রেগ, দিমিকে পুরো ৯০ মিনিট খেলাব কি না, তা এখনই বলতে পারব না। কাল সকালের আগে সেটা জানা যাবে না। কাল ম্যাচের আগে সিদ্ধান্ত নেব'।

চোট-আঘাত সমস্যায় রয়েছে ইস্টবেঙ্গলও। তাদের মাঝমাঠের দুই নির্ভরযোগ্য বিদেশী মাদি তালাল ও সউল ক্রেসপো নেই। এ ছাড়াও ভারতীয় ফুটবলারদেরও অনেকের চোট। তবে সেই নিয়ে মাথাব্যথা নেই মোহনবাগানের কোচের। বলেন, 'প্রতিপক্ষ শিবিরের কী অবস্থা, তারা কী করবে না করবে, তা নিয়ে আমার কোনও মাথাব্যথা নেই। আমি নিজের দল নিয়েই বেশি ভাবি। আমাদের ৯০ মিনিট সেরা ফুটবল খেলতে হবে, এটাই আমার কাছে শেষ কথা। আর কিছু জানি না'।