শনিবার যুবভারতীতে তাদের অন্যতম চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মহমেডান স্পোর্টিং-কে ৪-০ গোলে হারিয়ে লিগ টেবলের শীর্ষস্থানে তাদের অবস্থান আরও শক্তপোক্ত করে নেয় গতবারের শিল্ডজয়ীরা। পয়েন্ট টেবলের সর্বশেষ স্থানে থাকা মহমেডানের বিরুদ্ধে রীতিমতো দাপুটে ফুটবল খেলা বাগান-বাহিনী হয়তো আরও বড় ব্যবধানে জিততে পারত। কিন্তু একাধিক সুযোগ হাতছাড়া করে তারা। অধিনায়ক শুভাশিস বোস ও মনবীর সিং জোড়া গোল করে দলকে জয় এনে দেন।
এই নিয়ে ১৯টি ম্যাচ খেলে ১৩তম জয় পেল সবুজ-মেরুন বাহিনী। ৪৩ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে থাকা এফসি গোয়ার চেয়ে দশ পয়েন্টের ব্যবধান তৈরি করে ফেলল। এই অসাধারণ জয়ের পর মোহনবাগান কোচ হোসে মোলিনা সাংবাদিকদের বলেন, “আজ দলের পারফরম্যান্সে আমি সত্যিই খুশি। এটা ঠিকই যে অনেক সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও আমরা আজ চারটের বেশি গোল করতে পারিনি। আরও গোল করতে পারলে ভাল লাগত। তবে আগেও বলেছি, গোলের সুযোগ তৈরি করাটাই আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গোল আসবেই”।
তাদের শিল্ড জয়ের সম্ভাবনা নিয়ে বাগান-কোচ বলেন, “এখনও পাঁচটা ম্যাচে আমাদের লড়াই করতে হবে। পরের ম্যাচ আমাদের সামনে পাঞ্জাব। মহমেডানের বিরুদ্ধে খুব ভাল খেলেছে আমাদের দল। পাঞ্জাব খুব ভাল দল। ওরা আজ বেঙ্গালুরুর মতো অসাধারণ দলকে হারিয়েছে। ওই ম্যাচের আগে খেলোয়াড়দের তরতাজা করে তুলতে হবে। ওই ম্যাচে এ রকমই ভাল খেলতে হবে আমাদের”।
ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় জেসন কামিংসও কোচের সঙ্গে একমত। বলেন, “আমরা অবশ্যই শিল্ডের দিকে একধাপ এগিয়ে গেলাম। এখন প্রতি ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে হবে আমাদের। লিগশীর্ষে দশ পয়েন্টের ব্যবধান তৈরি করতে পেরে আমরা খুশি। তবে এ জন্য আবেগে আত্মহারা হয়ে গেলে চলবে না। আমাদের পরিশ্রম করে যেতেই হবে। আত্মতুষ্ট হলে চলবে না। আরও ভাল জায়গায় যেতে হবে, যে জায়গা আমাদের প্রাপ্য। ট্রফিজয় সুনিশ্চিত করতে হবে এখন”।
এই ম্যাচে কামিংসকে গোলদাতার ভূমিকায় কম, গোলের সুযোগ নির্মাতার ভূমিকাতেই বেশি দেখা যায় এবং সেই ভূমিকায় যথেষ্ট সফল তিনি। এই নিয়ে অস্ট্রেলীয় তারকা বলেন, “নতুন ভূমিকা ভালই। জেমি আমার চেয়ে ওপরে খেলছে। আমার কাজ বক্সের মধ্যে বল ফেলা, গোলে সাহায্য করা। জেমি ও অন্যদের সঙ্গে ভাল বোঝাপড়া তৈরি হয়ে গিয়েছে আমার। গোলে অ্যাসিস্ট করাটাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। দলকে জেতানোর জন্য সবই করতে হয় আমাদের”।
দলের নির্ভরযোগ্য অ্যাটাকারের এই নতুন ভূমিকা নিয়ে কোচ মোলিনা বলেন, “জেসন জামশেদপুরের বিরুদ্ধে যে ভূমিকা পালন করেছিল, আজও সেই ভূমিকাই পালন করেছে। ম্যাকলারেন ও জেসনকে একই লাইনে না রেখে একজনকে একটু পিছন থেকে খেলিয়ে লাভই হয়েছে। জেসন যেমন বক্সে ঢুকে গোল করতে পারে, তেমনই বক্সের বাইরে থেকে অ্যাসিস্ট করতেও পারে খুব ভাল। তাই ও এই কাজটাও করছে। খুবই ভাল পারফরম্যান্স ওর। পরে দিমি ও গ্রেগকেও মাঠে নামাই। সবার পারফরম্যান্সে আমি খুশি। ওরা যে কোনও সময়ে গোল পাবে”।
দলের স্ট্রাইকাররা ইদানীং গোল পাচ্ছেন না। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে শেষ গোল পেয়েছিলেন জেমি ম্যাকলারেন। তার পরে চারটি ম্যাচে স্ট্রাইকাররা গোল করতে পারেননি। কিন্তু সুযোগ তৈরি করেছেন প্রচুর। এ জন্য অবশ্য তাদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই কোচের। বলেন, “আমি স্ট্রাইকারদের পাশেই আছি। ওরা গোল করতে না পারলেও গোলের সুযোগ তৈরি করতে পেরেছে। গত কয়েকটা ম্যাচেও ওরা গোল করতে পারেনি। তবে ওরা পরিশ্রম করছে, সুযোগ তৈরি করছে। সে জন্য আমি খুশি”।
শনিবার জোড়া গোল করেন শুভাশিস বোস ও মনবীর সিং। শুভাশিসের এই নিয়ে ছ’টি ও মনবীরের পাঁচটি গোল হল চলতি লিগে। এতদিন যিনি দলের সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন, সেই ম্যাকলারেনকে গোলসংখ্যায় ধরে ফেললেন শুভাশিস। জেসন কামিংসকে টপকে দ্বিতীয় স্থানে চলে এলেন মনবীর। এ ছাড়াও আলবার্তো রড্রিগেজ (৪), লিস্টন কোলাসো (৩), টম অলড্রেডও (২) একাধিক গোল করেছেন। দলের সব বিভাগের খেলোয়াড়রাই যে গোল পাচ্ছেন, সে জন্য খুশি কামিংসও। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের দলে ভাল ভাল খেলোয়াড় আছে। সব পজিশনের খেলোয়াড়রাই গোল করতে পারে। রিজার্ভ বেঞ্চও খুব ভাল। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সে জন্য আমি খুশি”।
শনিবার চতুর্থ হলুদ কার্ড দেখায় পরের ম্যাচে পাঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে (৫ ফেব্রুয়ারি, যুবভারতীতে) খেলতে পারবেন না আপুইয়া ও টম অলড্রেড। যা নিয়ে কোচ মোলিনা বলেন, “আপুইয়া ও অলড্রেড পরের ম্যাচে নেই ঠিকই। তবে আমাদের দলের সবাই ভাল খেলোয়াড়। ওদের পরিবর্তে যারা খেলবে, তারাও নিশ্চয়ই ভাল খেলবে। পাঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে ম্যাচ আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওদের বিরুদ্ধে আমরা ডুরান্ড কাপেও খেলেছিলাম। টাই ব্রেকারে ওদের হারিয়েছিলাম আমরা। দিল্লিতেও ওদের বিরুদ্ধে আইএসএলের প্রথম ম্যাচ বেশ কঠিন হয়েছিল। ওদের একজন লাল কার্ড দেখায় পরিস্থিতি কিছুটা সহজ হয়। এখন থেকে সব ম্যাচই আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে আশা করি, তিন দিনের মধ্যে সব খেলোয়াড়ই তৈরি হয়ে যাবে এবং আমরা আবার জিতব”।
মহমেডান স্পোর্টিং-র সহকারী কোচ মেহরাজউদ্দিন ওয়াডু মেনে নেন, মোহনবাগান যোগ্য দল হিসেবেই জিতেছে। তবে সমালোচনা করেন তাঁর দলের মিডফিল্ডার কাসিমভের, যিনি এ দিন বিরতির আগেই লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন। ওয়াডু বলেন, “মোহনবাগান এসজি যে ভাল দল, ওদের বিরুদ্ধে ম্যাচ কঠিন হবে, তা তো জানাই ছিল। কিন্তু ওরা তিনটে গোল করেছে সেটপিসে। লাল কার্ডও হয়েছে সরাসরি। মোহনবাগানের মতো দলের বিরুদ্ধে একজন খেলোয়াড় কম নিয়ে খেলা যে কত কঠিন, তা নিশ্চয়ই সবাই বুঝতে পারছেন। তবে আমাদের ছেলেরা দ্বিতীয়ার্ধে খুবই ভাল লড়াই করেছে। নিজেদের সেরাটা দিয়েছে। রক্ষণে ওরা শৃঙ্খলাবদ্ধ ছিল, গোলের সুযোগ তৈরি করেছে। কিন্তু সেগুলো গোলে পরিণত করতে পারেনি। মানতেই হবে, মোহনবাগান আজ আমাদের চেয়ে ভাল খেলেছে”।
কাসিমভরে সমালোচনা করে মেহরাজউদ্দিন বলেন, “দলের জন্য খেলছ, অথচ ও ভাবে লাল কার্ড দেখছ, এটা আমি আশা করতে পারিনি। আরও দায়িত্ববান হওয়া উচিত ছিল কাসিমভের। ওর মাথায় রাখা উচিত ছিল যে কোনও দলের পক্ষেই মোহনবাগানের মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে দশ জনে খেলা কত কঠিন”।
এক্সপ্লোর
Mohammedan vs Mohun Bagan: ডার্বিতে চারে চার, লিগ শীর্ষে ১০ পয়েন্টের লিড, তাও শিল্ড জিততে আরও পরিশ্রমের প্রয়োজন, দাবি মোহনবাগান কোচের
Kolkata Derby: কলকাতা ডার্বিতে মহামেডানের বিরুদ্ধে ৪-০ বিরাট স্কোরলাইনে জয় পেয়েছে ভারতীয় দল।

ডার্বিতে দাপট মোহনবাগানের (ছবি: আইএসএল)
Source : https://www.indiansuperleague.com/photos/photos-isl-2024-25-matchweek-20-mohammedan-sc-vs-mohun-bagan-sg-vivekananda-yuba-bharati-krirangan-kolkata
কলকাতা: শনিবার মহমেডান স্পোর্টিং-কে (Mohammedan Sporting) চার গোলে হারিয়ে চলতি লিগ শিল্ড জয়ের দিকে মোহনবাগান (Mohun Bagan Super Giant) আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল ঠিকই। কিন্তু এখনই এই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে রাজি নন সবুজ-মেরুন বাহিনীর কোচ হোসে মোলিনা ও তাদের অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকার জেসন কামিংস। তাঁদের মতে, শেষ পাঁচটি ম্যাচে এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখাই এখন তাঁদের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এবং এ জন্য তাঁদের আরও পরিশ্রম করতে হবে।
(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: দলের লড়াইয়ে গর্বিত ইস্টবেঙ্গল কোচ, গোলখরা কাটিয়ে দ্রুত ফর্মে ফিরবেন দিয়ামান্তাকস আশাবাদী অস্কার
খেলার (Sports) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে
আরও দেখুন
Advertisement
ট্রেন্ডিং
Advertisement
Advertisement
সেরা শিরোনাম
আইপিএল
জেলার
জ্যোতিষ
ব্যবসা-বাণিজ্যের
Advertisement
