IPL 2022: ঋষভ পন্থ, শার্দুল ঠাকুর, প্রবীণ আমরেকে কী শাস্তি দিল আইপিএল?
রাজস্থান রয়্যালস (RR) বনাম দিল্লি ক্যাপিটালসের (DC) ম্যাচে ঋষভ পন্থের (Rishabh Pant) তাঁর দলের ক্রিকেটারদের মাঠ থেকে চলে আসার নির্দেশ। নো বল বিতর্ক নিয়ে এদিন তার শাস্তি ঘোষণা করল আইপিএল কর্তৃপক্ষ।
নয়াদিল্লি: শুক্রবার আইপিএলের (IPL 2022) রাজস্থান রয়্যালস (Rajasthan Royals) বনাম দিল্লি ক্যাপিটালস (Delhi Capitals) ম্যাচে জয়-পরাজয়ের থেকেও খবরের শিরোনামে উঠে আসে এক 'নো বল' বিতর্ক (No Ball Controversy)। আর তাকে কেন্দ্র করেই দিল্লি ক্যাপিটালসের তরুণ অধিনায়ক ঋষভ পন্থের (Rishabh Pant) মাঠ থেকে তাঁর দলের ক্রিকেটারদের চলে আসার নির্দেশ। পাশাপাশি দিল্লি ক্যাপিটালসের কোচও কিনা ম্যাচ চলাকালীন ঢুকে পড়লেন মাঠে আম্পায়ারদের সঙ্গে কথা বলার জন্য। এই সমস্ত কিছু নিয়ে যেভাবে বিতর্ক দানা বেঁধেছিল, এদিন তার শাস্তি ঘোষণা করল আইপিএল কর্তৃপক্ষ।
কী শাস্তি দেওয়া হল দিল্লি ক্যাপিটালসের অধিনায়ক ঋষভ পন্থ ও সহকারী কোচ প্রবীণ আমরেকে?
এদিন আইপিএলের পক্ষ থেকে সংবাদমাধ্যমের কাছে যে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে লেখা রয়েছে, ২২ এপ্রিল মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে হওয়া রাজস্থান রয়্যালস বনাম দিল্লি ক্যাপিটালসের ম্যাচে আইপিএল কোড অফ কনডাক্টের ২.৭ ধারায় লেভেল টু অপরাধ হিসেবে ঋষভ পন্থের ম্যাচ ফি-র ১০০ শতাংশ জরিমানা করা হল। দিল্লি ক্যাপিটালসের আর এক ক্রিকেটার শার্দুল ঠাকুরকেও আইপিএল কোড অফ কনডাক্টের ২.৮ ধারায় ম্যাচ ফি-র ৫০ শতাংশ জরিমানা করা হল। এছাড়াও দিল্লি ক্যাপিটালস দলের সহকারী কোচ প্রবীণ আমরেকেও ম্যাচ ফি-র ১০০ শতাংশ টাকা জরিমানা করা হল। প্রবীণ আমরের ক্ষেত্রে আইপিএল কোড অফ কনডাক্টের ২.২ ধারায় এই জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রবীণ আমরেকে একটি ম্যাচের জন্য নির্বাসিতও করা হয়েছে।
রাজস্থান রয়্যালস বনাম দিল্লি ক্যাপিটালসের ম্যাচে ঠিক কী হয়েছিল?
আইপিএল ২০২২-এর ৩৪ নম্বর ম্যাচে রাজস্থান রয়্যালসের মুখোমুখি হয়েছিল দিল্লি ক্যাপিটালস। পয়েন্ট টেবলে দিল্লি ম্যাচ শুরুতেই পিছিয়ে ছিল রাজস্থানের কাছে। তাই, ঋষভ পন্থের দলের কাছে এই ম্যাচে জয় ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ম্যাচ শুরুর আগেই জানা যায়, করোনার কারণে নিভৃতবাসে রয়েছেন রিকি পন্টিং। এই অবস্থায় টস জিতে প্রথমে রাজস্থানকে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিলেন দিল্লির অধিনায়ক ঋষভ পন্থ। জস বাটলার, দেবদত্ত পাড়িকাল এবং সঞ্জু স্যামসনের দাপটে ২২ এপ্রিল ২ উইকেটে ২২২ রান তোলে রাজস্থান রয়্যালস। প্রতিযোগিতায় তিন নম্বর সেঞ্চুরি এল জস বাটলারের। এই বিরাট বড় স্কোর তাড়া করতে নেমে মোটে গুটিয়ে ছিল না দিল্লি ক্যাপিটালসও। স্কোর তাড়া করে নাগাড়ে চাপে রাখছিল দিল্লিও। যদিও ১৯তম ওভারে এসে রাজস্থানের হয়ে দারুণ বল করে যান প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা। ফলে দাঁড়ায়, শেষ ওভারে জিততে গেলে দিল্লিকে করতে হবে ৬ বলে ৩৬ রান। সেই সময় ব্যাট হাতে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলেন দিল্লির রোভম্যান পাওয়েল। ২০তম ওভারের প্রথম তিনটে বলই উড়িয়ে দিলেন গ্যালারিতে। আর ওই তিন নম্বর বলটি যাতে ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন পাওয়েল, সেই বলটি পাওয়েলের কোমরের বেশি উচ্চতায় এসেছে বলেই দাবি করে দিল্লি ক্যাপিটালস ডাগআউট। ম্যাচ চলাকালীন দেখা যায়, দিল্লি ক্যাপিটালসের অধিনায়ক ঋষভ পন্থ দলের সহকারী কোপ প্রবীণ আমরে এবং শার্দুল ঠাকুর রীতিমতো উত্তেজনায় ফুটছেন ডাগআউটে। এরপরই ঋষভ পন্থকে দেখা যায় ক্রিজে থাকা দুই ব্যাটারকে ইশারায় ডেকে নিতে। তিনি ইশারা করে যেন বলতে চান যে, 'আর খেলতে হবে না।' যদিও সেই সময় দিল্লি ক্যাপিটালসের ডাগআউটে থাকা শেন ওয়াটসন ঋষভ পন্থকে খানিকটা শান্ত করেন। যদিও সেই সময় দিল্লি অধিনায়কের কথা অনুয়ায়ী মাঠে যান প্রবীণ আমরে। এবং আম্পায়ারকে অনুরোধ করেন যে, তৃতীয় আম্পায়ারকে দিয়ে নো বলটি পরীক্ষা করার জন্য। যদিও মাঠে থাকা দুই আম্পায়ার তাঁদের কথায় কর্ণপাত করেননি এবং খেলা চালিয়ে যান।
অনেকেই মনে করেন সাময়িক কয়েক মিনিট খেলা বন্ধ থাকায় রোভম্যান পাওয়েলের মনঋসংযোগ নষ্ট হয়ে যায় তখন। ফলে প্রথম ৩ বলে ৩ ছক্কা মেরে যে আত্মবিশ্বাস পেয়ে গিয়েছিলেন পাওয়েল, তাও নষ্ট হয়ে যায়। ১৫ রানে ম্যাচ হারে দিল্লি। ম্যাচ শেষে এই বিষয়ে ঋষভ পন্থকে জিজ্ঞাসা করা হলে দৃশ্যতই উত্তেজিত ঋষভ পন্থ বলেন, 'মাঠে প্রবীণ আমরেকে পাঠান একেবারেই ঠিক কাজ হয়নি। যদিও আমাদের সঙ্গে যেটা হয়েছে, সেটাও ঠিক হয়নি।' কেভিন পিটারসেনের মতো প্রাক্তন ক্রিকেটার সঙ্গে সঙ্গে ঋষভের সমালোচনায় সরব হন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলে লেখেন, 'নিশ্চিত ডাগআউটে রিকি পন্টিং থাকলে এমন ঘটনা ঘটত না। ঋষভ পন্থদের এভাবে মাঠে কোচকে পাঠান উচিত হয়নি। আমরা ভদ্রলোকের খেলা খেলি। আর প্রত্যেকের মাথায় রাখা উচিত, মানুষ মাত্রই ভুল হয়।' সম্প্রচারকারী চ্যানেলে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন ক্রিকেটার ইরফান পাঠান। তিনিও বলেন, 'অবশ্যই টিভি রিপ্লে দেখে আমার বলটা নো বল লেগেছে। ম্যাচে তৃতীয় আম্পায়ার অনেক কিছু দেখেন। তাহলে কেন তৃতীয় আম্পায়ার একবার দেখে নেবে না। প্রযুক্তির সুবিধা যখন নেওয়াই হয়, তখন ছোট-ছোট ভুল-ত্রুটিগুলো শুধরে নেওয়াটাই ভাল। যদিও ঋষভ পন্থের তাঁর দলের ক্রিকেটারদের মাঠ থেকে চলে আসার নির্দেশ একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না।' সুতরাং, কেভিন পিটারসেন থেকে ইরফান পাঠান, সকলেরই মত, অধিনায়ক হিসেবে ঋষভ পন্থ আরও একটু সংযত হলেই ভাল করতেন।