এক্সপ্লোর

সকলের অলক্ষ্যে অবসর, কেকেআরের প্রথম ট্রফি জয়ের নায়ককে এখনও শিহরিত করে শাহরুখের প্রশংসা

আট বছর আগে চেন্নাইয়ের এক রাত। এমএ চিদম্বরম স্টেডিয়ামে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের কার্যত হাতের মুঠো থেকে আইপিএল ট্রফি ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। আর চেন্নাই সুপার কিংস শিবির অপার বিস্ময়ে দেখেছিল যে, গৌতম গম্ভীর বা জাক কালিসের মতো কোনও বড় নাম নয়, তাদের ডেরায় এসে বাজিমাত করে বেরিয়ে গেল এক অখ্যাত নাম। মনবিন্দর বিসলা।

কলকাতা: একটা ম্যাচ তাঁকে খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছে দিয়েছিল। রাতারাতি হয়ে গিয়েছিলেন নায়ক। আট বছর আগে চেন্নাইয়ের এক রাত। এমএ চিদম্বরম স্টেডিয়ামে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের কার্যত হাতের মুঠো থেকে আইপিএল ট্রফি ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। আর চেন্নাই সুপার কিংস শিবির অপার বিস্ময়ে দেখেছিল যে, গৌতম গম্ভীর বা জাক কালিসের মতো কোনও বড় নাম নয়, তাদের ডেরায় এসে বাজিমাত করে বেরিয়ে গেল এক অখ্যাত নাম। মনবিন্দর বিসলা। সিএসকের ১৯০ রান তাড়া করতে নেমে ২ বল বাকি থাকতে নাটকীয়ভাবে ম্যাচ জিতেছিল কেকেআর। আর ৪৮ বলে ঝোড়ো ৮৯ রান করে সেই জয়ের ইমারত সাজিয়ে দিয়েছিলেন বিসলা। রাতারাতি হয়ে উঠেছিলেন বিখ্যাত। আপামর নাইট সমর্থকদের নয়নের মণি।
সেই বিসলা আপাতত আইপিএল গ্রহের বাইরে। সকলের অলক্ষ্যেই ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন! শনিবার গুরগাঁও থেকে মোবাইল ফোনে এবিপি আনন্দকে ৩৫ বছরের বিসলা বললেন, ‘ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছি। আইপিএলের পর ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন লিগে ব্রাদার্স ইউনিয়নের হয়ে খেলেছি। এয়ার ইন্ডিয়ায় চাকরি করি। সেই সূত্রে অফিস ম্যাচও খেলেছি তারপর। তবে একদিন তো খেলা ছাড়তেই হতো।’ ২০১২ সালের সেই স্বপ্নের রাতের কথা উঠতেই এখনও বিসলার গলায় মুগ্ধতা। বলছিলেন, ‘ফাইনালের কথা ভাবলে খুব গর্ব হয়। আমরা খুব পরিশ্রম করেছিলাম। কেকেআর প্রথমবারের জন্য আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ব্যক্তিগতভাবে নিজের পারফরম্যান্সেও আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। কারণ, ভীষণ পরিশ্রম করেছিলাম আর সেটাকে পারফরম্যান্সে রূপান্তরিত করতে পেরেছিলাম।’
চেন্নাই প্রথমে ব্যাট করে ১৯০ রান তোলার পর ভেবেছিলেন এত বড় স্কোর তাড়া করে ম্যাচ জেতা যাবে? বিশেষ করে ফাইনালের চাপ সামলে? তাও আবার সিএসকের ঘরের মাঠে, হোমটিমের জন্য প্রবল জনসমর্থনের বিরুদ্ধে লড়াই করে? বিসলা বলছেন, ‘রান তাড়া করতে নামার সময় আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। গোটা টুর্নামেন্টে আমরা ভাল ক্রিকেট খেলেছিলাম আর লিগ পর্বে সব দলকেই হারিয়েছিলাম। আমরা বিশ্বাস করেছিলাম, যে লক্ষ্যমাত্রাই সামনে থাকুক না কেন, তা টপকে যেতে পারব। ওরা যেভাবে শট খেলছিল, বুঝতে পেরেছিলাম উইকেট খুব ভাল। আমাদের স্পিনারদেরও ওরা বেশ মেরেছিল। বুঝে গিয়েছিলাম, উইকেটে বোলারদের জন্য সেরকম কিছু নেই। আমাদের ব্যাটিংটাও দুর্দান্ত ছিল। গৌতম গম্ভীর দারুণ ফর্মে ছিল। তারপর জাক কালিস, মনোজ তিওয়ারি, ইউসুফ পাঠানরা ছিল। সকলেই ছন্দে ছিলাম। মনোজ-ইউসুফরা দারুণ কিছু ইনিংস খেলেছিল। কোয়ালিফায়ারে লক্ষ্মীরতন শুক্ল দারুণ খেলেছিল। একে অপরের দক্ষতায় আস্থা ছিল। জানতাম জেতা সম্ভব।’
" কোনও ক্রিকেটারই চাইবে না এক ম্যাচের জন্য লোকে তাকে মনে রাখুক। কেউ একটা ম্যাচে স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে এত বছর ধরে পরিশ্রম করে না। "
-মনবিন্দর বিসলা
ফাইনালের আগে শেষ মুহূর্তে বিসলাকে জানানো হয়েছিল যে, তিনি প্রথম একাদশে খেলছেন? বড় ম্যাচের আগে মানসিক প্রস্তুতির সুযোগই তো পাননি! ‘একদিক থেকে শাপে বর হয়েছিল। স্নায়ুর চাপ টের পাওয়ার সময়ও পাইনি,’ বলছিলেন বিসলা। যোগ করলেন, ‘আমি বেশিরভাগ ম্যাচে শুরুটা ভাল করছিলাম। তবে বড় রান পাচ্ছিলাম না। নিজেকে বলেছিলাম, ভাল ব্যাট করছি। শুধু একটা বড় ইনিংস খেলতে হবে।’
ট্রফি জেতার পর শাহরুখ খান কতটা উত্তেজিত ছিলেন? বিসলা বলছেন, ‘শাহরুখ ভীষণ উত্তেজিত ছিলেন। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর উনি যখন ড্রেসিংরুমে আসেন, আমি ফোনে বাবার সঙ্গে কথা বলছিলাম। শাহরুখ জিজ্ঞেস করেন, কাকে ফোন করছ? তারপর আমার হাত থেকে ফোন নিয়ে বাবার সঙ্গে কথা বলেন।’ বিসলা যোগ করলেন, ‘শাহরুখ সেদিন রাতে বলেছিলেন, তোমরা মেহনত করেছো। তারই সুফল পেয়েছো। আমাকে বলেছিলেন, গোটা দলকে গর্বের মুহূর্ত উপহার দিয়েছো তুমি। গোটা শিবির তোমার জন্য আপ্লুত। শাহরুখের সেই প্রশংসা আমার জীবনের অন্যতম সেরা প্রাপ্তি। এখনও ভাবলে শিহরিত হই।’
গুরগাঁওতে বাবা-মা, স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে সংসার বিসলার। ২০১২ সালের সেই রূপকথার ফাইনালের পর আর আপনাকে খুঁজে পাওয়া গেল না কেন? বিসলা বললেন, ‘কোনও ক্রিকেটারই চাইবে না এক ম্যাচের জন্য লোকে তাকে মনে রাখুক। কেউ একটা ম্যাচে স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে এত বছর ধরে পরিশ্রম করে না। আমি সব ম্যাচেই নিজের একশো শতাংশ দিয়েছি। অনেক ম্যাচে ভাল শুরু করেও রান পাইনি। কেকেআরে থাকাকালীন দুবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। ২০০৯ সালে চ্যাম্পিয়ন ডেকান চার্জার্সের দলে ছিলাম। ২০১৩ সালে কেকেআরের প্রায় সব ম্যাচ খেলেছি। তবে ২০১৪ সালে আর প্রথম একাদশে নিয়মিত হয়ে উঠতে পারিনি। রবিন উথাপ্পা এসে গিয়েছিল। ও ভাল খেলছিল।’ তাঁর স্বীকারোক্তি, ‘হ্যাঁ, আরও ভাল খেলতে পারতাম। নিজের সেরাটা দিয়েও অনেকসময় যেটা চাই সেটা হয় না। এই নয় যে আমি খারাপ খেলেছি। তবে ভাল শুরুগুলোকে কাজে লাগাতে পারিনি। অবশ্যই ধারাবাহিকভাবে আরও ভাল খেলা উচিত ছিল। তবে মাঝে মধ্যে এসব মেনে নিতে হয়।’
কেকেআর থেকে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরে গিয়েছিলেন। স্বল্প সুযোগে সাফল্য পাননি। ২০০২ সালে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান ছিলেন বিসলা। তবে অধিনায়ক পার্থিব পটেল টুর্নামেন্টে উইকেটকিপিং করেন। বিসলা বলছিলেন, ‘নেটে বল করতাম। কোচ বলবিন্দর সান্ধু বলেছিলেন, মাঝে-মধ্যে ম্যাচেও বল করো। তাই সেই বিশ্বকাপে বলও করেছিলাম। পাশাপাশি টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলাম।’ অবসরের পর জীবন কেমন? বিসলা বললেন, ‘সময় খুব ভাল কাটছে। ঘরোয়া ক্রিকেটের টিভি ধারাভাষ্যকার হিসাবে কাজ করেছি। গত বছরের আইপিএলে কয়েকটা ম্যাচেও কমেন্ট্রি করেছি। কোচিং করাতে চাই। পরের বছর বোর্ডের কোচিং কোর্সও করব। এবছরই করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির জন্য সব বন্ধ রয়েছে। তাই সেটা সম্ভব হয়নি।’ প্রায় ৬ মাস পরে আইপিএলে মাঠে নেমে ক্রিকেটারদের সমস্যা হবে না? ‘অনেকদিন সকলে ক্রিকেটের বাইরে। তবে ফিটনেস ট্রেনিং করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে গিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে। কয়েকটা ম্যাচ খেললেই সবাই ছন্দ পেয়ে যাবে। সমস্যা হবে না। শুরুটা হয়তো মন্থর হবে। তবে ২-১টা ম্যাচ খেললেই সকলে সড়গড় হয়ে উঠবে,’ বলছিলেন বিসলা।
২০১২ সালের আইপিএল ফাইনালের কোনও মেমেন্টো? ফোন রাখার আগে বিসলা বললেন, ‘প্রচুর ছবি রয়েছে ২০১২ সালের সেই স্বপ্নের রাতের। যে ব্যাটটা দিয়ে ফাইনালে খেলেছিলাম, সেটা যত্ন করে সাজিয়ে রেখেছি। ইউটিউবে মাঝে-মধ্যে সেই ম্যাচটা দেখি।’ স্মৃতিটুকুই সম্বল ‘প্রাক্তন’ ক্রিকেটারের।
আরও দেখুন
Advertisement
Advertisement
Advertisement

সেরা শিরোনাম

Junior Doctors Protest: ফের রাজ্যজুড়ে পূর্ণ কর্মবিরতিতে জুনিয়র ডাক্তররা
ফের রাজ্যজুড়ে পূর্ণ কর্মবিরতিতে জুনিয়র ডাক্তররা
Weather Update : দেবীপক্ষের শুরুতেই ভিজবে ৭ জেলা, হলুদ সতর্কতায় আপনার জেলাও?
দেবীপক্ষের শুরুতেই ভিজবে ৭ জেলা, হলুদ সতর্কতায় আপনার জেলাও?
India vs Bangladesh Live: শেষ দিনে শেষ হাসি হাসবে কে? রানে এগিয়ে ভারত, ম্যাচ জিতবে কি বাংলাদেশ?
শেষ দিনে শেষ হাসি হাসবে কে? রানে এগিয়ে ভারত, ম্যাচ জিতবে কি বাংলাদেশ?
Rajanya Haldar : দলের বড় কোপ রাজন্যার উপর, সরানো হল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের TMCP-র কমিটি থেকেও
দলের বড় কোপ রাজন্যার উপর, সরানো হল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের TMCP-র কমিটি থেকেও
Advertisement
ABP Premium

ভিডিও

RG Kar:আজকে নিরাপত্তার অভাবের কারণেই RG কর, সাগর দত্ত, রামপুরহাটে এই ঘটনাগুলি ঘটেছে:জুনিয়র চিকিৎসকRG Kar News: 'যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারাই তো এখনও স্বপদে বহাল!'  অভিযোগ উঠল সুপ্রিম কোর্টেRG Kar Doctors Protest: বিচারের দাবিতে রাত দখল, ভোর দখলের পর মহালয়া মহামিছিল | ABP AnandaRG Kar News: অবিলম্বে সাসপেন্ড বা ছুটিতে পাঠানোর দাবি উঠল আর জি কর মামলায় সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে

ফটো গ্যালারি

ব্যক্তিগত কর্নার

সেরা প্রতিবেদন
সেরা রিল
Junior Doctors Protest: ফের রাজ্যজুড়ে পূর্ণ কর্মবিরতিতে জুনিয়র ডাক্তররা
ফের রাজ্যজুড়ে পূর্ণ কর্মবিরতিতে জুনিয়র ডাক্তররা
Weather Update : দেবীপক্ষের শুরুতেই ভিজবে ৭ জেলা, হলুদ সতর্কতায় আপনার জেলাও?
দেবীপক্ষের শুরুতেই ভিজবে ৭ জেলা, হলুদ সতর্কতায় আপনার জেলাও?
India vs Bangladesh Live: শেষ দিনে শেষ হাসি হাসবে কে? রানে এগিয়ে ভারত, ম্যাচ জিতবে কি বাংলাদেশ?
শেষ দিনে শেষ হাসি হাসবে কে? রানে এগিয়ে ভারত, ম্যাচ জিতবে কি বাংলাদেশ?
Rajanya Haldar : দলের বড় কোপ রাজন্যার উপর, সরানো হল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের TMCP-র কমিটি থেকেও
দলের বড় কোপ রাজন্যার উপর, সরানো হল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের TMCP-র কমিটি থেকেও
Mithun Chakraborty: সিনেমা জগতে অসামান্য অবদান, দাদাসাহেব ফালকে সম্মান পাচ্ছেন মিঠুন চক্রবর্তী
সিনেমা জগতে অসামান্য অবদান, দাদাসাহেব ফালকে সম্মান পাচ্ছেন মিঠুন চক্রবর্তী
RG Kar Case : কাল চিকিৎসক-মিছিলে অনুমতি কোর্টের, 'বলতে পারবেন পুজোয় কতজন আসবেন', রাজ্যকে পাল্টা প্রশ্ন আদালতের
কাল চিকিৎসক-মিছিলে অনুমতি কোর্টের, 'বলতে পারবেন পুজোয় কতজন আসবেন', রাজ্যকে পাল্টা প্রশ্ন আদালতের
Mahalaya Weather : মহালয়ার ভোরে তুমুল বৃষ্টি নাকি নীল আকাশে ভাসবে মেঘের ভেলা, আবহাওয়া বদলের বড় সঙ্কেত
মহালয়ার ভোরে তুমুল বৃষ্টি নাকি নীল আকাশে ভাসবে মেঘের ভেলা, আবহাওয়া বদলের বড় সঙ্কেত
Sandip Ghosh Court Production : হবে সন্দীপ ঘোষের নার্কো অ্যানালিসিস ?
হবে সন্দীপ ঘোষের নার্কো অ্যানালিসিস ?
Embed widget