![ABP Premium](https://cdn.abplive.com/imagebank/Premium-ad-Icon.png)
Tokyo Olympic Exclusive: অলিম্পিক্সে পদকের দৌড়ে ছেলে ও বৌমা, জিতলে চিংড়ির মালাইকারি খাওয়াবেন মা
অলিম্পিক্সে বাংলার যাবতীয় আক্ষেপ দূর করে দেওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন তিরন্দাজ দম্পতি। অতনু দাস ও দীপিকা কুমারী।
![Tokyo Olympic Exclusive: অলিম্পিক্সে পদকের দৌড়ে ছেলে ও বৌমা, জিতলে চিংড়ির মালাইকারি খাওয়াবেন মা ABP LIVE EXCLUSIVE interview Aditi Das son Atanu Das daughter-in-law Deepika Kumari reach pre quarterfinal Tokyo olympic Tokyo Olympic Exclusive: অলিম্পিক্সে পদকের দৌড়ে ছেলে ও বৌমা, জিতলে চিংড়ির মালাইকারি খাওয়াবেন মা](https://feeds.abplive.com/onecms/images/uploaded-images/2021/07/29/1a9ac198c00efb246f5266c947cf10f8_original.jpg?impolicy=abp_cdn&imwidth=1200&height=675)
কলকাতা: জিমন্যাস্টিক্সে প্রণতি নায়েক পারেননি। টেবিল টেনিসে সুতীর্থা মুখোপাধ্যায় ফিরেছেন খালি হাতে। অলিম্পিক্সে বাংলার যাবতীয় আক্ষেপ দূর করে দেওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন তিরন্দাজ দম্পতি। অতনু দাস ও দীপিকা কুমারী। দুজনই ব্যক্তিগত বিভাগের প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গিয়েছেন।
টোকিওয় ছেলে ও বৌমার পারফরম্যান্স দেখে গোটা দেশের মতোই আশায় বুক বাঁধছেন অদিতি দাস। তিরন্দাজ অতনু দাসের মা। গত বছরের জুন মাসের পর থেকে অদিতির আরেকটা পরিচয় হল, তিনি তিরন্দাজ দীপিকা কুমারীর শাশুড়িও।
বৃহস্পতিবার সকালে অতনু কোরিয়ার দুবারের অলিম্পিক্স চ্যাম্পিয়ন প্রতিপক্ষকে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে হারিয়ে তিরন্দাজির ব্যক্তিগত বিভাগের প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পর এবিপি লাইভকে অদিতি বললেন, 'উফফ... যা একটা ম্যাচ হল। ভীষণ স্নায়ুর চাপে ভুগছিলাম। কোরিয়ার এই তিরন্দাজের খেলা আগেও দেখেছি। তিরন্দাজিতে কোরিয়াকে হারানো মানে বিশাল ব্যাপার। অতনু নিজেও সে কথা বলছে। পাঁচ সেটে ম্যাচের ফয়সালা না হওয়ায় যখন শুট অফ শুরু হল, আমার মনে সংশয় ছিল। অতনুর জন্য প্রার্থনা করছিলাম। খুব টেনশন হচ্ছিল। তার ওপর অতনু বুধবারই ফোনে বলেছে যে, প্রচণ্ড হাওয়া চলছে টোকিওয়। ও হয়তো নিশানা করছে ১০, যাচ্ছে ৯-এ। এত হাওয়ায় ওদের সমস্যা হচ্ছে।'
শেষ পর্যন্ত অবশ্য ফেভারিট প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছেন বাংলার তিরন্দাজ। যা দেখে হাঁফ ছেড়েছেন অদিতি। সেই সঙ্গে তাঁকে সাহস জোগাচ্ছে বৌমা যেভাবে ছেলেকে সমর্থন করছেন, সেই ছবিও। বৃহস্পতিবার অতনুর ইভেন্ট চলাকালীন দীপিকাকে দেখা গেল গ্যালারি থেকে চিৎকার করে সমর্থন জানাচ্ছেন। অদিতি বলছেন, 'দীপিকা যা চিৎকার করছিল, মাস্ক নামিয়ে গলা ফাটাচ্ছিল, এই সমর্থনটা ভীষণ দরকার। অতনুর মনোবলও বেড়ে গিয়েছিল। ম্যাচের পরেও কথা হয়েছে। অতনু বলল, দীপিকার সমর্থন ভীষণ উৎসাহ দিচ্ছে। কোরিয়াকে হারিয়ে তৃপ্ত। বলেছে, মা, তুমি প্রার্থনা করো কোরিয়ার বিরুদ্ধে যে খেলাটা খেলেছি সেটা যেন প্রি কোয়ার্টার ফাইনালে জাপানের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে খেলতে পারি। হার-জিত পরের কথা। নিজের সেরাটা দিতে পারলেই খুশি।'
টোকিও অলিম্পিক্সে স্বামী-স্ত্রী মিক্সড ইভেন্টে খেলবেন বলে আশা করেছিলেন। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। যে কারণে অতনু ও দীপিকা, দুজনেরই মন খারাপ। অদিতি বলছেন, 'শুরুতে সেই সম্ভাবনা না থাকলেও পরে অতনু খেলতে পারত। এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যে, এক ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ব তিরন্দাজি সংস্থাকে নাম জানাতে হতো। কিন্তু অতনুর নাম আর জমা পড়েনি।'
ছেলে-বৌমার খেলা দেখার জন্য শুধু নয়, ভারতের সমস্ত অ্যাথলিটদের পারফরম্যান্স দেখবেন বলে ভোরবেলা থেকে টেলিভিশনের সামনে বসে পড়ছেন অতনুর বাবা অমিত ও মা অদিতি। বাংলার তিরন্দাজের মা বলছেন, 'সব খেলাই দেখছি। তবে তিরন্দাজির কোনও ম্যাচ মিস করছি না।'
যদিও কোনওদিন গ্যালারি থেকে ছেলের খেলা দেখা হয়নি। কেন? অদিতি বলছেন, 'আমি বা ওর বাবা গ্যালারিতে বসে থাকলে ও চাপে পড়ে যাবে। তাই ও কোনওদিনও চায় না আমরা স্টেডিয়ামে গিয়ে ওর খেলা দেখি। ওর কোনও টুর্নামেন্টে গ্যালারিতে বসিইওনি। শুধু সাইয়ের (স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া) ট্রায়াল দেখেছিলাম। সেটাও ওকে না জানিয়ে। দূর থেকে।'
ছেলে ও বৌমার জন্য উচ্ছ্বসিত অদিতি। বলছেন, 'যেই জিতুক, আমরা জানব আমাদের ঘরে পদক এসেছে। দুজনেই সাফল্যেই সমান খুশি হব। দীপিকা আমার বাড়ির মেয়ের মতো। ওর পারফরম্যান্স নিয়েও আমরা রোমাঞ্চিত।' যোগ করলেন, 'দীপিকার মা-বাবার সঙ্গে কয়েকদিন আগেই কথা হয়েছে। তবে ওঁরা অনেক শান্ত, সংযত। আমাদের মতো এত উত্তেজনার বহিঃপ্রকাশ হয় না। দীপিকা নিজে বলছে, তোমরা টেনশন কোরো না। তির তো ছুঁড়ছি আমি আর অতনু।'
দীপিকা বাংলা বলতে শিখছেন। কী বলেন? 'আমি বুঝতে পারছি, কী রান্না করছ... এরকম বাক্য় বলতে পারে ও,' হাসতে হাসতে বলছিলেন অদিতি। যোগ করলেন, 'ও রান্না করতে ভালবাসে। বাঙালি পদ রাঁধা শিখছে। আমাকে কয়েকদিন আগেই বলছিল মাছের ডিম দিয়ে, পটল দিয়ে কীভাবে রাঁধব। ডিমের ডালনা থেকে শুরু করে ঘুগনি, পোস্তর বড়া, পোস্ত, মোচা, থোড়, পেঁয়াজকলি সবরকম আনাজ রাঁধতে শিখে গিয়েছে। চিংড়িমাছের মালািকারি ও চিংড়ি মাছের রসা ওদের প্রিয় পদ। অলিম্পিক্স থেকে ফিরলে সেগুলোই রান্না করে খাওয়াব।'
দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে অতনুকে। অদিতির কথায়, 'বাঁশের তৈরি তির-ধনুক দিয়ে তিরন্দাজিতে হাতেখড়ি হয়েছিল ওর। অনেক কষ্ট করে একটা ফোর্থ হ্যান্ড ধনুক কিনে দিয়েছিলাম। সেটির দাম নিয়েছিল প্রায় ৮৫ হাজার টাকা। সেটিও তখন বেশ বড়সড় অঙ্ক ছিল আমাদের কাছে। আমাদের কাছে তা কোটি টাকার সমান। দামি জুতো কিনে দিতে পারতাম না। কেডস কিনে দিতাম। তা ছিঁড়ে যেত। ছেঁড়া জুতো পরেই প্র্যাক্টিস করত।' ইন্ডিয়ান অ্যালুমিনিয়াম ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন অতনুর বাবা অমিত। সেখান থেকে ভিআরএস নিয়ে নিতে বাধ্য হন। অদিতি বলছেন, 'অতনু তখন ক্লাস টুয়ে পড়ে। ওর খরচ চালানো দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছিল প্রায়। খাবারের খরচ জোগানই দুষ্কর হয়ে পড়েছিল। পরিবারের সদস্যরা খুবই সাহায্য করেছেন।'
অতনু ও দীপিকা, দুজনই চাকরি করেন একই সংস্থায়। দীপিকা পুণেতে পোস্টেড। অতনু কলকাতায়। বরানগরের বাড়িতে আর থাকেন না। এখন আনন্দপুরে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন অতনু-দীপিকা। দুজনের বিয়ের এক বছর হল সদ্য।
ছেলে-বৌমার প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচের সময় কী করবেন? অদিতি বলছেন, 'আমি গোপাল নিয়ে থাকি। সারাক্ষণ ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছি। পদকের প্রার্থনা করছি না। শুধু বলছি যেন ওরা ভাল খেলাটা খেলতে পারে।'
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
![ABP Premium](https://cdn.abplive.com/imagebank/metaverse-mid.png)