Tulsidas Balaram: রহিম সাহেবের ডাকার ধরনে ক্ষুব্ধ হন, পরে কিংবদন্তি কোচের নয়নের মণি হয়ে ওঠেন বলরাম
Indian Football: দুটি অলিম্পিক্সে ও ১৯৬২ সালের এশিয়ান গেমসে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন বলরাম। পিটার থঙ্গরাজ, পি কে বন্দ্যোপাধ্যায় ও চুনী গোস্বামীর সঙ্গে জুটি বেঁধে এশীয় চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন ভারতকে।
কলকাতা: সেকেন্দরাবাদ। ১৯৫০। নীচের দিকের ডিভিশনের ফুটবল ম্যাচ খেলছিলেন এক ঝাঁক তরুণ। যাঁরা জানতেনই না যে, দূর থেকে তাঁদের দিকে লক্ষ্য রেখেছেন সৈয়দ আব্দুল রহিম (Syed Abdul Rahim)। ভারতের কিংবদন্তি ফুটবল কোচ। প্রতিভা খুঁজে আনতে যাঁর জুড়ি মেলা ভার। তবে রহিম সাহেব চাননি যে, তাঁর পরিচয় জেনে যান তরুণরা। তাই নিঃশব্দ পর্যবেক্ষণ।
খেলা শেষ হতে এক তরুণকে আঙুলের ইশারায় ডাকলেন রহিম। কিন্তু ডাকার ধরন পছন্দ হল না তরুণের। তবু ধীর লয়ে এগিয়ে গেলেন প্রবীণের কাছে। রহিম স্যার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে চাইলেন তরুণের বয়স, কোথায় থাকেন, কতদিন খেলছেন। অবশেষে নিজের পরিচয় দেন রহিম স্যার। জাতীয় শিবিরে যোগ দিতে বলেন তরুণকে।
সেই শুরু। ভারতীয় ফুটবল পেল এক এমন প্রতিভাকে, পরের কয়েক বছরে যিনি জাতীয় দলের সেরা ফুটবলার হয়ে উঠবেন। তুলসীদাস বলরাম (Tulsidas Balaram)। সেকেন্দরাবাদের আম্মাগুড়ায় জন্ম। বেড়ে ওঠা। পরে হায়দরাবাদের এক অনুষ্ঠানে বলরাম নিজেই জানিয়েছিলেন রহিম স্যারের নজরে পড়ার সেই ঘটনা। বলেছিলেন, 'রহিম স্যার আমাকে খুঁজে পেয়েছিলেন। আমাকে তৈরি করেছিলেন। আমি যা হয়েছি, রহিম স্যারের জন্যই। উনি না থাকলে আমি কিছুই হতে পারতাম না।'
দুটি অলিম্পিক্সে ও ১৯৬২ সালের এশিয়ান গেমসে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন বলরাম। পিটার থঙ্গরাজ, পি কে বন্দ্যোপাধ্যায় ও চুনী গোস্বামীর সঙ্গে জুটি বেঁধে এশীয় চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন ভারতকে। এবং সেটাও জাপান, কোরিয়ার মতো শক্তিশালী দেশকে হারিয়ে। এখন যে দুই দেশ ফুটবল বিশ্বকাপে নিয়মিত খেলে। আর ভারত বিশ্বকাপের মানচিত্রেই কার্যত আসতে পারে না। কেউ কেউ আক্ষেপ করেন, বলরামের মতো ফুটবলারই বা এখন কোথায়!
ভারতীয় ফুটবলের সোনালি পর্বের অন্যতম তারকা। সেন্টার ফরওয়ার্ড পজিশনে খেলতেন। প্রাক্তন ফুটবলাররা বলে থাকেন, বলরাম ছিলেন অলরাউন্ডার। ড্রিবল দুর্দান্ত, দু পায়ে শট নিতে পারতেন। হেডিং ভাল। নিখুঁত পাস বাড়ান। বলা হতো, নিজের সময় এশিয়ার সেরা ফুটবলার ছিলেন।
ইস্টবেঙ্গলে খেলার সময় ১৯৫৯ সালে ২৩ গোল করে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন। ১৯৬১ সালে লাল-হলুদ শিবিরকে নেতৃত্ব দেন বলরাম। সেবার ২৩ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন। লিগের সেরা ফুটবলারের স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। পরে অবশ্য ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে বলরামের সম্পর্কে তিক্ততা তৈরি হয়েছিল। এমনকী, বলরাম বলে দিয়েছিলেন, তাঁর মৃত্যুর পর মরদেহ যেন ক্লাবে না নিয়ে যাওয়া হয়।
কেরিয়ারে পরের দিকে অসুস্থতা ভুগিয়েছে বলরামকে। অকালে শেষ হয়ে গিয়েছিল কেরিয়ার। পরে কোচিং শুরু করেন। ছাত্রদের রহিম সাহেবের কাছে শেখা মন্ত্রে দীক্ষা দিতেন। বিএনআর ও কলকাতা মেয়র দলকে কোচিং করিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার প্রয়াত হলেন কিংবদন্তি বলরাম (Tulsidas Balaram)। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় দীর্ঘদিন ভর্তি ছিলেন হরাসপাতালে। জীবনযুদ্ধে পরাজিতই হতে হল ১৯৬২ সালের এশিয়ান গেমসে স্বর্ণপদকজয়ী তারকা ফুটবলারকে। পি কে বন্দ্যোপাধ্যায়-চুনী গোস্বামীর পর এবার চলে গেলেন তাঁদের দীর্ঘদিনের সঙ্গী। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।