Amartya Sen: 'দখল করে রয়েছেন', জমি বিতর্কে অমর্ত্য সেনকে চিঠি বিশ্বভারতীর
Visva Bharati: মঙ্গলবার অধ্যাপক সেনকে নোটিস দিয়ে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অমর্ত্য সেন অবৈধভাবে বিশ্বভারতীর ১৩ ডেসিমেল জমি দখল করে আছেন।
কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা: নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন অবৈধভাবে বিশ্বভারতীর জমি দখল করে রয়েছেন। অতি শীঘ্র ১৩ ডেসিমেল জমি বিশ্ববিদ্যালয়কে ফেরত দিতে হবে। এই মর্মে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নোটিস ঘিরে শুরু হয়েছে জোরাল বিতর্ক। বাড়ির জমির একটা অংশ বিশ্বভারতীর থেকে লিজ নেওয়া, কিছুটা জমি কেনা। বানানো, মিথ্যে কথা বলছেন কর্তৃপক্ষ। ওদের রুচিতে এমনটাই মানায়। এবিপি আনন্দকে কড়া প্রতিক্রিয়া নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের।
বাংলার গর্ব, সারা বিশ্বে সমাদৃত। নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে কবিগুরুর শান্তিনিকেতন। তাঁর নামও রেখেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই শান্তিনিকেতনেই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের বাড়ি ঘিরে আবার ঘনাল বিতর্কের মেঘ। তাও আবার তিনি এখানে থাকাকালীনই!
মঙ্গলবার অধ্যাপক সেনকে নোটিস দিয়ে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অমর্ত্য সেন অবৈধভাবে বিশ্বভারতীর ১৩ ডেসিমেল জমি দখল করে আছেন। এই জমি যত দ্রুত সম্ভব বিশ্ববিদ্যালয়কে ফেরত দিন। আপনি যদি চান বিশ্ববিদ্যালয় এবং আপনার সার্ভেয়ার বা আইনজীবীর উপস্থিতিতে যৌথভাবে জমির জরিপ করা হবে।
কর্তৃপক্ষের দাবি, ভবিষ্যতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ যাতে সমস্যার মুখে না পড়েন, সেই তাগিদ থেকেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশ্বভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বলেন, "এই চিঠিটার মূল বক্তব্য হচ্ছে এটাই যে, অধ্যাপক সেন, কাগজ অনুযায়ী কিছু জমি উনি বেশি নিয়েছেন। যে জমিটা ওনার পাওয়ার কথা ছিল, তার থেকে কিছু বেশি জমি ওনার আয়ত্তে আছে। সেই জমিটার ব্যাপারে আমরা আগেও ওনাকে লিখেছিলাম যে, জমিটা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। যেহেতু উনি এখন শান্তিনিকেতনে আছেন, সেইজন্য হাতে হাতে একটা চিঠি দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। আমরা এ নিয়ে আলোচনা করতেও প্রস্তুত। উনি যদি কালকে আমাদের ডাকেন, আজকে চিঠিটা ওনার হাতে পৌঁছান হয়েছে। আমরা এ নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত। আমরা এই সমস্যাটার সমাধান করতে চাই। কারণ উনি একজন নমস্য ব্যক্তি, জগত বিখ্যাত একজন অর্থনীতিবিদ। আমরা খুব গর্বিত উনি শান্তিনিকেতনে থাকেন। তাই আমরাও চাই না এই ব্যাপারটা নিয়ে ভবিষ্যতে কোনও সমস্যার মধ্যে উনি পড়েন।"
আরও পড়ুন, মমতার প্রশংসা, এবার কি তৃণমূলের পথে রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সহ সভাপতি চন্দ্র বসু?
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই নোটিস পাওয়ার পরপ্রতিক্রিয়া দিয়েছেন অধ্যাপক অমর্ত্য সেন। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জানিয়েছেন, আমার বাড়ির জমির একটা অংশ বিশ্বভারতী থেকে লিজ নেওয়া। বাকি অংশ কেনা হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য বানানো, মিথ্যে কথা। ওদের রুচিতে এমনটাই মানায়। আগেও এমন মিথ্যে কথা বলেছে। আমার আইনজীবী তার জবাব দিয়েছেন। এবারও আইনজীবী জবাব দেবেন।
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে দাবি, ১৯৪৩ সালে অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের বাবা আশুতোষ সেনকে ১২৫ ডেসিমেল জমি ৯৯ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয়। ২০০৬ সালে অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের আবেদনের ভিত্তিতে, সেই লিজ জমি তাঁর নামে হস্তান্তর করা হয়।
কর্তৃপক্ষের দাবি, রেকর্ড ও সমীক্ষা থেকে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বভারতীর ১৩ ডেসিমেল জমি অমর্ত্য সেনের লিজ পাওয়া জমির মধ্যে থেকে গেছে। যদিও ঘনিষ্ঠ মহলে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জানিয়েছেন, তাঁর বাবা ওই অতিরিক্ত জমি কিনেছিলেন। তাঁর প্রশ্ন, এতদিন পর কেন এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ?
বছর দুয়েক আগেও অমর্ত্য সেনের বাড়ির জমি নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল।যার প্রতিবাদে সেইসময় কলকাতায় মিছিল করেছিলেন বিদ্বজনেদের একাংশ। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, "অমর্ত্য সেনের মতো যারা গর্ব, যারা বহুত্ববাদের কথা তুলে ধরছেন, তাদেরও টার্গেট করেছে ওরা।"
পাশে দাঁড়ানোর জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠিও দেন অমর্ত্য সেন। এরপর মঙ্গলবার, অমর্ত্য সেন শান্তিনিকেতনে থাকাকালীন ফের কেন সেই বিতর্ক সামনে আনা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।