Anubrata Mondal : 'পুলিশ সব টাকা খেত' ইলামবাজারের গরু হাটে যেতেই বেরিয়ে এল পাচার সংক্রান্ত বিস্ফোরক তথ্য !
Anubrata Mondal Case Update : গরুপাচারের টাকা কোথায়, কীভাবে পৌঁছত? এবার তার হদিশ পাওয়ার চেষ্টা করছে সিবিআই।
সন্দীপ সরকার, বীরভূম : গরু পাচার মামলায় ( Cow Smuggling Case ) সিবিআইয়ের (CBI ) তদন্তে উঠে এসেছে ইলামবাজারের গরু হাটের কথা। কোন কোন জায়গা থেকে এই হাটে গরু আসত? হাট থেকে কোন পথে বাংলাদেশ সীমান্তে পৌঁছোত? তারপর কাদের মদতে সেই গরু সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে যেত? এবিপি আনন্দর ( ABP Ananda ) অন্তর্ততদন্তে তা নিয়ে উঠে এসেছে বিস্ফোরক তথ্য। গরু পাচার মামলায়, সিবিআইয়ের চার্জশিটে, ইলামবাজারের গরু-হাটের উল্লেখ রয়েছে। যা এই পাচারকাণ্ডের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু বলে অভিযোগ। ইলামবাজারের সেই হাটে, পৌঁছেছিল এবিপি আনন্দ।
একেক দিনে কোটি কোটি টাকার কারবার!
হাজার হাজার গবাদি পশুর কেনাবেচা! একেক দিনে কোটি কোটি টাকার কারবার! আর যেখানে এত লাভের গুড়, সেখানে পিঁপড়ে আসবে না, তা কি হয়! ইলামবাজারের পশু-হাটেও তাই বেড়েছিল পিঁপড়ে থুড়ি দালালদের আনাগোনা! গরু পাচার মামলায়, সিবিআইয়ের শেষ সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে যে আব্দুল লতিফের নাম রয়েছে, তিনিও পশু-হাটের এরকমই একজন দালাল বলেই খবর।
কীভাবে চলত এই বেআইনি কারবার?
কীভাবে কোটি কোটি টাকা কামাত দালালরা? তা জানতেই এবিপি আনন্দ পৌঁছেছিল ইলামবাজারের পশু-হাটে। পশু-ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, রাজস্থান, গুজরাত, ঝাড়খণ্ড, বিহার, মধ্যপ্রদেশ থেকে গরু আসত ইলামবাজারের হাটে। গরুগুলো কোন কোন রাজ্য থেকে আসত ? এই প্রশ্ন করতেই পশু-হাটের এক ব্যবসায়ী জানালেন, 'ওরা বিদেশ থেকে আসত না ... রাজস্থান, গুজরাত আমাদের ইন্ডিয়ার মধ্যে গুজরাত, যেমন রাঁচি আছে, মধ্যপ্রদেশ আছে, ঝাড়খন্ড আছে, বিহার। ওই সব গরু এদিকে আসত। ওদিকেও গরু পাচারকারী বহুৎ আছে। বিহারে কম আছে নাকি? প্রচুর আছে। ওরাই তো গরু ধরে ধরে নিয়ে আসত এখানে, গাড়ি করে।'
সব এদের সাথে সেটিং থাকত? পশু-হাটের ব্যবসায়ী জানালেন, ' আপনি যদি নিয়ে আসেন, আপনার কাছ থেকে আমি কিনে নেব। সেটিং ফেটিং এগুলো ব্যাপার নয়। গরু হাটে এলেই আমি কিনব। গরু পছন্দ হলে আমি কিনে নেব। টাকা দিয়ে, আমি বেচবো। আপনি কোথা থেকে আনছেন আমার দেখার দরকার নেই।'
আরও জানা গেল, গুজরাত, রাজস্থান থেকে গরু নিয়ে আসছে যারা তাদের যোগাযোগ আছে থানার সঙ্গে। 'গুজরাত এখান থেকে কম রাস্তা? ৪-৫ দিনের রাস্তা আছে।'
স্থানীয় এক খড়ের আড়তের মালিক আমাদের জানালেন, ইলামবাজার হাট থেকে কেনা গরু, মুর্শিদাবাদ হয়ে, বাংলাদেশে পাচার করত দালালরা। আরও জানা গেল, এদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকত পুলিশের। ' পুলিশ সব টাকা খেত, সব টাকা দিয়ে লাইনে থাকত। '
হাট মালিকদের বক্তব্য, পশু-হাট থেকে দেওয়া চালান দেখিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে গরু নিয়ে যাওয়া যায়। হাটের মালিক রাজু মণ্ডল জানালেন, ' প্রত্যেকটার জন্য নেওয়া হয় ৪০ টাকা। চালান কেটে দেওয়া হয়। লেখা থাকে - কে বিক্রি করল। কাকে বিক্রি করল। কী পশু। গায়ের রঙ থাকবে। '
কিন্তু, হাটের চালান দেখিয়ে গরুকে সীমান্ত পার করানো যায় না। এই কাজটা করে দালালরা। মোটা টাকার বিনিময়ে তারা সীমান্ত-পারে গরু পাচারে সাহায্য করে। অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসন-রাজনৈতিক নেতা-BSF’এর একাংশের সঙ্গে আঁতাঁত করে, এই কারবার চালায় দালালরা। গরু পাচারের বিপুল টাকা এদের প্রত্যেকের কাছে পৌঁছোয় বলে অভিযোগ।
এখন গরু পাচারের তদন্তে সিবিআইয়ের স্ক্যানারে ইলামবাজারের এই পশু-হাট। এই সূত্র ধরে কোন প্রভাবশালীদের হদিশ মিলবে? সেটাই দেখার।
গরুপাচারের টাকা কোথায়, কীভাবে পৌঁছত? এবার তার হদিশ পাওয়ার চেষ্টা করছে সিবিআই। সূত্রের খবর, বীরভূমের মণ্ডল পরিবারের বিভিন্ন কোম্পানির ব্যালান্স শিট খতিয়ে দেখে জানা গেছে, মর্টগেজ ছাড়াই বিশাল অঙ্কের টাকা ঋণ হিসেবে বিনিয়োগ করা হয়েছে। যেমন, ANM অ্যাগ্রোকেম ফুড প্রাইভেট লিমিটেডের ক্ষেত্রে ২০১৮ সালে ঋণ দেওয়া হয়েছিল ৪ কোটি ২ লক্ষ টাকা। ব্যালান্স শিট তৈরি করা হয়েছিল কোচবিহারের চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টকে দিয়ে। সিবিআই সূত্রে দাবি, প্রভাবশালীদের কাছে গরু পাচারের টাকা নগদে পৌঁছনোর পাশাপাশি, প্রভাবশালীদের সংস্থায় ঋণ হিসেবে বিনিয়োগ করে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে।