Bolpur Murder Case: কেন এই নৃশংস পরিণতি? ইলামবাজারে পলিটেকনিক পড়ুয়ার মৃত্যুতে বাড়ছে রহস্য
Bolpur Student Murder: সলমনকে জেরা করে সেটাই জানতে চাইছে পুলিশ। ইতিমধ্যেই ইলামবাজারের চৌপাহাড়ি এলাকায় পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে।
আবির ইসলাম, বোলপুর: ইলামবাজারে পলিটেকনিক পড়ুয়া সৈয়দ সালাউদ্দিনকে কি একাই খুন করেছিল বন্ধু শেখ সলমন? না কি খুনে জড়িত আরও অনেকে? এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছে পুলিশ। কারণ, ঘটনাস্থল ধল্লার জঙ্গলে মিলেছে ৪টি গ্লাস, চিপস, বিরিয়ানির প্যাকেট। প্রশ্ন উঠছে, খুনের আগে মদের আসরে সালাউদ্দিন, সলমন ছাড়া আর কে কে ছিল। সলমনকে জেরা করে সেটাই জানতে চাইছে পুলিশ। ইতিমধ্যেই ইলামবাজারের চৌপাহাড়ি এলাকায় পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। নমুনা সংগ্রহ করতে আজ ঘটনাস্থলে যাবে ফরেন্সিক দল। পাশাপাশি, পলিটেকনিক পড়ুয়া খুনে ধৃত শেখ সলমনকে নিয়ে আজ ঘটনার পুনর্নির্মাণ করাতে পারে ইলামবাজার থানার পুলিশ।
শনিবার রাতে ইলামবাজারে হাড়হিম করা খুনের ঘটনা ঘটে। ধল্লার জঙ্গল থেকে উদ্ধার হয় পলিটেকনিক পড়ুয়ার গলার নলি কাটা, ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ। ৩০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে ওই পড়ুয়াকে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। খুনের অভিযোগে গতকালই গ্রেফতার করা হয় মূল অভিযুক্ত শেখ সলমনকে।
বাগুইআটিকাণ্ডের ছায়া এবার বীরভূমে। ৩০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে ফোন। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পলিটেকনিক পড়ুয়াকে গলা কেটে খুন! বীরভূমের ইলামবাজারের ধল্লার জঙ্গল থেকে উদ্ধার হল ছাত্রের রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত দেহ। আর এই খুনের অভিযোগে, নিহত ছাত্রেরই ছোটবেলার এক বন্ধুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, মৃত সৈয়দ সালাউদ্দিন ওরফে জয়, আসানসোলের একটি পলিটেকনিক কলেজের ফাইনাল সিমেস্টারের ছাত্র। বাড়ি বীরভূমের মল্লারপুরে। তাঁর বাবার পাথরের ব্যবসা। তবে, তাঁদের আদি বাড়ি, বীরভূমের খয়াশোল ব্লকের আহম্মদপুর গ্রামে।
সেখানেই, বাড়ি খুনে অভিযুক্ত শেখ সলমনের। দু’জনেই ছোটবেলার বন্ধু। মৃতের পরিবারের অভিযোগ, শনিবার বিকেল থেকে খোঁজ মিলছিল না, পলিটেকনিক পড়ুয়া সৈয়দ সালাউদ্দিনের।
এরপর রাত ১২টা নাগাদ, সালাউদ্দিনেরই মোবাইল ফোন থেকে তাঁর বাবার কাছে ফোন আসে। ৩০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। পুলিশকে জানালে ছেলেকে ফিরে পাওয়া যাবে না বলে হুমকি দেয় অপহরণকারী।
মৃত ছাত্রের বাবা সৈয়দ আব্দুল মতিন জানিয়েছেন, আমার ছেলে সোলেমানের সঙ্গে বেরিয়েছিল। রাত ১২-১ টা নাগাদ ফোন করে। ৩০ লক্ষ টাকা দিতে হবে বলে। না দিলে সেরকম ব্যবস্থা করল। বলে পুলিশকে না জানাতে। পরপর ৭ বার আসে, মুক্তিপণ চেয়ে ফোন। রাত ২টোর মধ্যে টাকা নিয়ে হাজির হতে বলা হয়। এরপরই মল্লারপুর থানায় অভিযোগ জানান, ছাত্রের পরিবার।
মৃত ছাত্রের মা বসিরা বেগমের কথায়, রাত ১২টার সময় একজন ফোন করে। ওর বাবাকে ফোন করে। বলছে আপনি কে? বলছে বাবা আমার কাছে স্ত্রী আছে, বলছে, কিডন্যাপ করেছে। বলেছে, ২ টোর মধ্যেই আসে হবে। ৩০ লাখ। আমরা বলেছি, টাকা তাই দেব। ছেলের যেন কিছু না হয়.. ওদের জন্য ভালো শাস্তি চাই।
পরিবারের দাবি, তারপরও আসে হুমকি ফোন। এরপরই ছেলের মোবাইল ফোনটি সুইচড অফ হয়ে যায়। ইলামবাজার থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে মল্লারপুর থানার পুলিশ। মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে রাতেই ইলামবাজারের জঙ্গলে তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। ভোর সাড়ে ৩টে নাগাদ উদ্ধার হয় ছাত্রের রক্তাক্ত মৃতদেহ।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, দেনার দায়েই বন্ধুকে খুন করেছেন শেখ সলমন। পুলিশ সূত্রে দাবি, ইটভাটার ব্যবসার জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন অভিযুক্ত। বাজারে শেখ সলমনের প্রায় ২০ লক্ষ টাকা দেনা হয়ে গেছিল। সেই টাকা শোধ করতে না পারায়, বন্ধু সালাউদ্দিনের কাছে টাকা চান ওই যুবক।
মৃতের পরিবারের অভিযোগ, মাসখানেক আগে সালাউদ্দিনের কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা ধার চান সলমন। সালাউদ্দিনের বাবা ধার দিতে রাজি না হওয়ায়, আক্রোশ বেড়ে যায় তাঁর। এরপরই অপহরণ করে, ৩০ লক্ষ টাকা হাতানোর ছক কষে অভিযুক্ত। শনিবার ভোররাতে, ইলামবাজার থেকেই অভিযুক্তকে পাকড়াও করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, প্রথমে, পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করলেও, পরে, জেরায় বন্ধুকে খুনের কথা স্বীকার করেন অভিযুক্ত শেখ সলমন।
ইলামবাজারের ঘটনায় পরতে পরতে রয়েছে বাগুইআটি কাণ্ডের ছায়া। সেখানেও অপহরণ করে খুন করা হয় ২ ছাত্রকে। সেখানেও টাকা পয়সা নিয়ে বিবাদ। সেখানেও মূল অভিযুক্ত, ছাত্রদের পরিচিত। যদিও সেই ঘটনায় উঠেছিল পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ। তবে, মল্লারপুরের ঘটনায় প্রথম থেকেই সক্রিয় ছিল পুলিশ। খুনের কয়েকঘণ্টার মধ্যেই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ।