Durga Puja Special : দুবরাজপুরে কবিরাজদের চামুণ্ডা মন্দিরে বলি হলে, তবেই অন্যত্র বলি হয়
অষ্টমীর দিন সন্ধিপূজা চলাকালীন একটি বিশেষ ক্ষণে মায়ের অঙ্গ থেকে একটি ফুল ঘটের সামনে পড়ে।
গোপাল চট্টোপাধ্যায়, বীরভূম : এই জেলার কবিরাজ পরিবার মা চামুণ্ডা মন্দিরের পুজো খুবই প্রসিদ্ধ। গোয়ালিয়াড়া পঞ্চায়েতের মুক্তিপুরের বাসিন্দা কর্মসূত্রে দুবরাজপুরে থাকাকালীন কবিরাজ পরিবার মা চামুণ্ডার মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করে। দেবীর আশীর্বাদে পুজো শুরু করে। আনুমানিক সাড়ে তিনশো বছর আগে শুরু হয় এই পুজো। মা চামুণ্ডার মূর্তি অষ্ট ধাতুর তৈরি। বংশ পরম্পরায় কবিরাজ পরিবারের সদস্যরাই এই পুজো চালিয়ে যান। মা চামুণ্ডা পুজোর বৈশিষ্ট্য হল, অষ্টমীর দিন সন্ধিপূজা চলাকালীন একটি বিশেষ ক্ষণে মায়ের অঙ্গ থেকে একটি ফুল ঘটের সামনে পড়ে। রীতি অনুসারে, সেই ফুলকে মায়ের আশীর্বাদ হিসেবে মনে করা হয়, তারপরই বলিদান হয়। এই চামুণ্ডা মায়ের মন্দিরের বলিদান হবার পরই শহরের বিভিন্ন পূজোয় বলিদান করা হয়।
প্রথামাফিক সপ্তমীতে অন্নভোগ, অষ্টমীতে লুচি, নবমীতে চিড়ে এবং দশমীতে পান্তা ভাত সঙ্গে বাসি মাংসের ভোগ নিবেদন করা হয়ে থাকে। দশমীর দিন সন্ধ্যায় প্রথা ও নিয়ম মেনে দোলা বিসর্জন দেয়া হয়।
পুজোর চারদিন পরিবারের আত্মীয় স্বজন সমাবেশে জমজমাট থাকে কবিরাজ পরিবার।
অন্যদিকে, রভূমের খয়রাশোল থানা এলাকার পাথরকুচি গ্ৰামেও চলছে আসন্ন দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি। এই গ্রামের আকর্ষণ কবিরাজ ও মন্ডল পরিবারের ‘সাত মা’-র পুজো। আনুমানিক প্রায় তিনশো বছরের পুরনো এই পুজো। গ্ৰামে এই পুজোকে ঘিরেই যত উদ্দীপনা ও আনন্দ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, কবিরাজ ও মন্ডল পরিবারের প্রথমে দুটি পুজো থাকলেও, বংশবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কালক্রমে পুজোর সংখ্যাও বেড়েছে। পরপর সাতটি মন্দির আছে, প্রতিটি মন্দিরেই আছে মাটির প্রতিমা।
যাবতীয় আচার-বিধি মেনেই এখানে দুর্গাপুজো হয়। সপ্তমীর সকালে নির্ঘণ্ট মেনে আটটি পালকি ও ১৬ টি ঘট নিয়ে দোলা আনতে যাওয়া বা নবপত্রিকা স্নানের যাত্রায় সামিল হন পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন সহ গ্ৰামের বাসিন্দারা। অষ্টমীতে প্রতিটি মন্দিরে শ্বেত ছাগ বলি দেওয়া হয়। দু’টি মন্দিরে কুমারী পুজো হয়ে থাকে। দশমীতে দোলা বিসর্জন এবং একটি মন্দিরের প্রতিমা নিরঞ্জন করা হলেও, একাদশীর দিন বাকি ৬টি মন্দিরের প্রতিমা বিসর্জন করা হয়।
কবিরাজ ও মন্ডল পরিবারের আত্মীয়স্বজনরা সকলেই আসেন এই পুজোয়। চারদিন একসঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠেন সকলেই। গ্ৰামবাসীরা এই চার দিন নিজেরাই বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে থাকেন। তবে করোনা পরিস্থিতির জন্য গত বছর থেকে অনুষ্ঠানে কাটছাঁট করা হয়েছে। যদিও পুজোর আনন্দ তাতে বিন্দুমাত্র ম্লান হয়নি।