SSC Scam: নিয়োগ হলে নির্বাচনে তৃণমূলের সুবিধা হতে পারে বলেই কি SSC-নিয়ে বার বার মামলা? ব্রাত্য বললেন…
Bratya Basu on SSC Case: বৃহস্পতিবার যখন সাংবাদিক বৈঠক করেন ব্রাত্য, তার আগেই তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা।

কলকাতা: দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর নতুন করে নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশের পরীক্ষা নিয়েছিল SSC. সুষ্ঠভাবে পরীক্ষা মিটে যাওয়ার পর শুরু হয়ে গিয়েছে ইন্টারভিউ পর্বও। কিন্তু সেই আবহেই শিক্ষক নিয়োগ মামলার জটিলতা আরও বেড়ে গিয়েছে। ২০১৬ সালের চাকরিহারাদের সঙ্গে কেন নতুন প্রার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া হল, কেন নতুন বিধি তৈরি করা হল, সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট। সব মামলা কলকাতা হাইকোর্টে আসার পর পরীক্ষার কী হবে, সেই নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছেন বিচারপতি অমৃতা সিনহাও। এই দোলাচলের মধ্যেই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। জানালেন, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর তাঁরা। পাশাপাশি, নিয়োগ আটকাতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই বার বার মামলা হচ্ছে কি না, তা নিয়েও মুখ খোলেন। (Bratya Basu on SSC Case)
বৃহস্পতিবার যখন সাংবাদিক বৈঠক করেন ব্রাত্য, তার আগেই তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা। এক আইনজীবী SSC-র একটি মামলার শুনানি আগামী কাল করতে আবেদন জানালে তিনি বলেন, "পরীক্ষার কী হবে, কেউ জানে না, আর আপনি নথি যাচাই নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন?" যদিও সাংবাদিক বৈঠকে ব্রাত্য জানান, অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে পরীক্ষা নিয়েছে SSC. দেশের আর কোনও কমিশন এমনটা করে দেখাতে পারেনি। তাই সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া সময়সীমার মধ্যেই নিয়োগ সম্পূর্ণ করা সম্ভব হবে বলে আশাপ্রকাশ করেন তিনি। (SSC Scam)
গতকাল সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন করলে ব্রাত্য বলেন, "নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যাতে কোনও ভাবে কেউ বাধা না সৃষ্টি করে, তা রায়ে বলা রয়েছে। তাই SSC কী ভাবে করবে, তা SSC-র উপরই ছাড়ুন না! SSC যেভাবে পরীক্ষা নিয়েছে, গোটা দেশের কোথাও আর কোনও স্কুল সার্ভিস কমিশন এভাবে পরীক্ষা নিয়েছে বলে জানা নেই। প্রশঅনপত্রের সঙ্গে কার্বন পেপার দেওোয়া, উত্তরপত্রের পুরো মডিউল আপলোড করা, সেটিকে চ্য়ালেঞ্জের জন্য সময় দেওয়া, কাদের ডাকা হবে, কার পূর্ণাঙ্গ তালিকা তুলে ধরা মার্কস তুলে ধরা, তাও আবার অ্যাকাডেমিকস ও ইন্টারভিউয়ের মার্কস-সহ...পুরোটা তুলে ধরা হয়েছে। আমার মনে হয়েছে, স্বচ্ছতার সঙ্গে, নিরপেক্ষতার সঙ্গে পরীক্ষা নেওয়ার কাজ করেছে SSC. ভারতের অন্য কোনও কমিশন করেছে কি না, দেখাতে পারলে ভাল হয়।"
চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষকদের অতিরিক্ত ১০ নম্বর দেওয়া নিয়েও মামলা হয়েছে আদালতে। সেই নিয়ে ব্রাত্যর বক্তব্য, "আগেও বলেছি, বিচারপতি মামলা গ্রহণ করলে সওয়াল জবাব হবে! বিচারক ভেদে, আদালত ভেদে আইন পাল্টায় বলে মনে করি না আমি। যদি না কোনও বিচারকের নির্দিষ্ট রাজনৈতিক পক্ষপাত এবং অভিসন্ধি থাকে। আমাদের রাজ্যে এই ধরনের রাজনৈতিক পক্ষপাত, অভিসন্ধি বা উদ্দেশ্য কারও কারও ক্ষেত্রে দেখেছি আমরা, যা পরবর্তীতে প্রমাণিতও হয়েছে। তবে সব বিচারপতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে আমার মনে হয় না। ফলে কে, কোথায় মামলা করেছে...মামলা হলে হবে। SSC-র আইনজীবীরা লড়বেন!"
২০১৬ সালের চাকরিহারাদের সঙ্গে কেন নতুন প্রার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া হল, গত কাল তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে সুপ্রিম কোর্ট। নতুন বিধি চালু করা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। কিন্তু SSC-কি কখনও আলাদা আলাদা পরীক্ষা নেওয়ার কথা ভেবেছিল? ব্রাত্য জবাব দেন, "সরকার এবং SSC-র নির্দিষ্ট কিছু ক্ষমতা রয়েছে। ফলে আপনাকা কী ভাবছেন, তার উপর আমাদের ভাবনা নির্ভর করবে না। SSC যে বিধি চালু করেছে, তার বিরুদ্ধে মামলাই গ্রহণ করেনি আদালত। এমনকি বিধি নিয়েও আপত্তি জানায়নি। ফলে প্রশ্নই থাকে না।" সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ ও রায়ের মধ্যে ফারাক আছে বলেও জানান তিনি। বলেন, "কোথায় রায় দেখান? অবজার্ভেশনকে এক এক জন এক এক রকম ভাবে বড় করে দেখাতে পারেন। তর্ক-বিতর্কের সময় আদালত পর্যবেক্ষণ জানাতেই পারে। সেটা দিয়ে আদালতের বাইরে কিছু যায় আসে বলে মনে হয় না। রায়ের প্রভাব নিয়ে কথা বলতে পারি। এই ধরনের রায় কি আছে? উত্তর হল, নেই।"
সুপ্রিম কোর্ট SSC সংক্রান্ত সমস্ত মামলা হাইকোর্টে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে। এতে কি ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ করতে পারবে SSC? ব্রাত্য বলেন, "আমরা গভীর ভাবে আশাবাদী যে সুপ্রিম কোর্ট যেভাবে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে, যে রায় দিয়েছে, আদালত নজর রেখেছে, যাতে যোগ্যরা ক্ষতিগ্রস্ত না হন। তাঁদের দ্বিতীয় লাইফলাইন দিতে চেয়েছিল আদালতই। তাঁদের যাতে অসুবিধা না হয়, খেয়াল রাখা হয়। বিরোধীরা যদি বলেন, ওঁরা চাকরি পাবেন না বা চাকরি পাওয়া নিয়ে ধন্দ আছে, তা মানতে রাজি নই আমরা। আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গে পরীক্ষা নিয়েছি। আমাদের কাজ হচ্ছে, SSC যেন নির্বিঘ্নে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে পারে।"
SSC যখন নতুন করে নিয়োগে সচেষ্ট, সেই সময় পর পর মামলা দায়ের নিয়ে একাধিক প্রশ্নও উঠে এসেছে। প্রশ্ন উঠেছে, নিয়োগ প্রক্রিয়া সুষ্ঠ ভাবে সম্পন্ন হয়ে গেলে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সুবিধা হয়ে যেতে পারে জেনেই কি বিরোধীরা মামলা করে নিয়োগ আটকাতে চাইছে? ব্রাত্যর জবাব, "সেটা বিরোধীদের কাজ। আমাদের কাজ স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ দেওয়া। আমি বলছি, আর একটা স্কুল সার্ভিস কমিশন দেখান, যারা কার্বন কপি দিচ্ছে, উত্তরপত্র আপলোড করছে। আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করতে চেয়েছি। বিরোধীরা ওদের কাজ করবে। আমি মনে করছি না, বিচারক বা আদালত ভেদে আইন বা বিচার বদলায়। কেউ ভাবতেই পারেন যে হাইকোর্টে মামলা এসেছে...আমি মনে করি না কোনও বিচারপতি পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারেন। কারণ সেটা আইন। আইন নিয়ে কথা হবে। বিরোধীদের রাজনৈতিক অভিসন্ধি থাকতে পারে, তৃণমূলকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্য থাকতে পারে তাদের। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী যে কাজ করছেন, রাজ্য সরকার ও SSC স্বচ্ছতার সঙ্গে যাতে নিয়োগ দিতে পারে, তা নিশ্চিত করব।"
এর আগে, দাগিদের হয়ে সওয়াল করার অভিযোগ উঠেছিল রাজ্যের বিরুদ্ধে। যদিও ব্রাত্যর দাবি, আদালত দাগিদের রাখা যাবে না বলেছিল। সেই অনুযায়ীই কাজ হয়েছে। আজ দাগিদের পূর্ণাঙ্গ তালিকাও বের করে দেবে SSC. ছ'সাত বছর আগে কী হয়েছে, তা নিয়ে আজকের বিচার চলে না বলেও দাবি করেন তিনি।























