Buddhadeb Bhattacharjee: হাসপাতালে গেলে বাড়ি ফিরতে চাইতেন, আর ফিরবেন না কোনওদিন
Buddhadeb Bhattacharya: আড়ম্বরহীন জীবনই ছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ইউএসপি। তাঁর রাজনৈতিক সততার কথা বারবার শোনা গিয়েছে বিরোধী মতাদর্শের দলের নেতাদের মুখেও।
কলকাতা: বাংলার রাজনীতিতে যে কয়েকজন কিংবদন্তীর কথা বলা হয়ে থাকে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। দীর্ঘদিনের অসুস্থতার কারণে রাজনীতির জীবন থেকে দূরে ছিলেন বহুদিন। বারবার অসুস্থ হয়েছেন কিন্তু ঠিক ফিরে এসেছেন। হাসপাতাল নয়, বাড়িতেই থাকতে চাইতেন তিনি। বারবার ফিরতে চাইতেন বাড়িতে- ঘরভর্তি বইয়ের মাঝে। প্রাণাধিক প্রিয় সেই ছোট্ট ২ কামরার ফ্ল্যাটের সেই ছোট্ট ঘরেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি। একেবারেই আচমকা।
এর আগে যখন তাঁর অসুস্থতার খবর পাওয়া গিয়েছে, যখন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন- আশঙ্কায় বুক কেঁপে উঠেছিল অসংখ্য গুণমুগ্ধ-অনুরাগীর। তাঁর জন্য প্রার্থনা করেছে অসংখ্য মানুষ। কিন্তু আশঙ্কা উড়িয়ে বারবার বাড়ি ফিরে এসেছিলেন তিনি। এবার আর হাসপাতালে যেতেই হল না, বাড়িতেই চিরঘুমের দেশে চলে গেলেন তিনি। গত লোকসভা নির্বাচনেও দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী সায়রা শাহ হালিম তাঁর বাড়ি গিয়েছিলেন আশীর্বাদ চাইতে। সেই সময় তাঁর মীরা ভট্টাচার্য জানিয়েছিলেন, আগের থেকে ভাল ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তিনি অসুস্থ শরীরেও খোঁজখবর রাখতেন। এই লোকসভা নির্বাচনে তরুণ ব্রিগেডের উপর ভরসা রেখেছিল সিপিএম। তা নিয়েও না কি উৎসাহী ছিলেন প্রাক্তন সিপিএম মুখ্যমন্ত্রী।
রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই সাহিত্য-অন্ত প্রাণ ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। লিখেছেন অসংখ্য কবিতা-নাটক, করেছেন বিদেশি সাহিত্য়ের অনুবাদ। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনও সেই কাজে খামতি ছিল না। মুখ্য়মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার পরে যেন আরও বেশি করে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন সাহিত্যে। ২০১৩-২০১৪ সালেও দলের হয়ে দাপিয়ে প্রচার করেছেন তিনি। তিনিই ছিলেন সিপিএমের প্রচারের মুখ। কিন্তু বাদ সাধে স্বাস্থ্য। ক্রমশ ভেঙে পড়া স্বাস্থ্যের কারণে ক্রমে ক্রমে দল থেকে, সক্রিয় রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। ডুবে গিয়েছিলেন বইয়ে- কিন্তু চোখের সমস্যার কারণে শেষদিকে সেটাও পারতেন না। তাঁকে প্রতিদিন বই পড়ে, খবরের কাগজ পড়ে শোনাতে হতো। টিভিতে শুধু খবরের চ্যানেল চানিয়ে তা শুনতেন। একাধিক সময়ে এই কথা জানিয়েছেন তাঁর স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য।
যতবারই হাসপাতালে ভর্তি হতেন। ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের খবর, তিনি না কি একেবারেই থাকতে চাইতেন না হাসপাতালে। গত কয়েক বছরে বারবার অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। যমে-মানুষে টানাটানির পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছিল বারবার। গত বছরের জুলাই মাসে বাড়াবাড়ি রকমের অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল তাঁকে। প্রায় ২ সপ্তাহের কাছাকাছি ভর্তি ছিলেন। তারপরে বাড়ি ফিরে এলেও কার্যত ঘরবন্দি হয়ে পড়েন তিনি। কড়া নিয়মকানুন মেনে চলতে হয় তাঁকে। পাম অ্য়াভিনিউয়ের ছোট্ট ফ্ল্যাটেই হাসপাতালের মতো বিছানা, আরও নানা যন্ত্রের ব্য়বস্থা করতে হয়। বহুদিন ধরেই COPD-আক্রান্ত বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, একসময় চেন-স্মোকার ছিলেন। ২০২০ সালে একবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সেবারও হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল কয়েকদিন। প্রবল কোভিড সংক্রমণের ঢেউয়ের মাঝে ২০২১ সালে কোভিড আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি ও তাঁর স্ত্রী। সেবারও সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন। এবার আর শেষ রক্ষা হল না। রাত থেকেই বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। আজ, বৃহস্পতিবার কীভাবে চিকিৎসা এগোবে তাই নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিল বলে সূত্রের খবর। কিন্তু সেই সময় দিলেন না- হাসপাতাল না-পসন্দ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য শেষবারের মতো ঘুমোলেন নিজের প্রিয় ঘরের কোণেই। রেখে গেলেন একঘর বই, নানা প্রজন্মের অসংখ্য অনুরাগী এবং রাজনৈতিক মূল্যবোধের চেতনা।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে
আরও পড়ুন: চোরাচালান রোখায় অস্ত্র নিয়ে হামলা, পাল্টা গুলি চালিয়ে দুষ্কৃতী তাড়ালেন মহিলা BSF জওয়ান