Buddhadeb Bhattacharjee : শববাহী শকটে বাড়ি ছাড়লেন বুদ্ধদেব, দূরে দাঁড়িয়ে রইল সাদা অ্য়াম্বাসাডর, কী কী ঘটনার সাক্ষী সে?
Buddhadeb Bhattacharjee Death : বৃহস্পতিবার লাল পতাকায় মুড়ে পাম অ্যাভনিউয়ের বাড়ি থেকে বেরলেন তিনি। এবার শববাহী গাড়িতে। ভিড় থেকে দূরে দাঁড়িয়ে, দীর্ঘদিনের বন্ধুকে হয়তো শেষ বিদায় জানাল প্রাক্তন মুখ্য়মন্ত্রীর এক নির্বাক সঙ্গীও।
আবির দত্ত, কলকাতা : বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর পথচলা থামল। একা পড়ে রইল তাঁর এক ছায়াসঙ্গী। তাঁর বাহন। বৃহস্পতিবার পাম অ্য়াভিনিউয়ের বাড়ি থেকে শেষবারের মতো বিদায় নিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। শববাহী শকট যখন তাঁকে নিয়ে চলে যাচ্ছে, তখন দূরে দাঁড়িয়ে প্রাক্তন মুখ্য়মন্ত্রীর দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত সঙ্গী, সেই সাদা অ্য়াম্বাসাডর। সিপিএম নেতা, মুখ্য়মন্ত্রী কিংবা প্রাক্তন মুখ্য়মন্ত্রী, যে পদেই থাকুন, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর পছন্দ ছিল সাদা অ্যাম্বাসাডরটি। বৃহস্পতিবার বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর প্রয়াণে একা হয়ে গেল সেই বাহন। ঊনষাট, A, নম্বর পাম অ্য়াভিনিউয়ের ফ্ল্য়াট হেক বা আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের অফিস, যখন যেখানে থেকেছেন সঙ্গে থেকেছে এই গাড়িটি। শেষবার রাজনৈতিক সভায় গিয়েছিলেনও এই গাড়িটি চড়ে। বহুদিন বাড়ি থেকে বেরনো বন্ধ হয়ে গেলেও সবসময় অন-ডিউটি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর এই গাড়ি।
বৃহস্পতিবার লাল পতাকায় মুড়ে পাম অ্যাভনিউয়ের বাড়ি থেকে বেরলেন তিনি। এবার শববাহী গাড়িতে। ভিড় থেকে দূরে দাঁড়িয়ে, দীর্ঘদিনের বন্ধুকে হয়তো শেষ বিদায় জানাল প্রাক্তন মুখ্য়মন্ত্রীর এক নির্বাক সঙ্গীও। সেই দুধসাদা বুলেটপ্রুফ অ্য়াম্বাসাডর। সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি, সাদা চুলের বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর সাদামাটা জীবনের, আরেক সফেদ সঙ্গী, যে কোনও গন্তব্য়ে পৌঁছে দিতে তাঁর বিশ্বস্ত বাহন।
এই অ্য়াম্বাসাডর শুধু বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর গাড়ি নয়, ব্র্য়ান্ড বুদ্ধর আরেক পরিচিতি হয়ে উঠেছিল। তিনি পাম অ্য়াভিনিউয়ের বাড়ির বাইরে পা রাখলেই, গরগর করে উঠল গাড়ির ইঞ্জিন। যেন সওয়ারিকে স্বাগত জানাতে। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের পার্টি অফিস হোক বা ব্রিগেডের ময়দান, দূর থেকে সাদা গাড়ি আর নম্বর প্লেটটা (WB-02 0001) চোখে পড়লেই সবাই বুঝে যেত, তিনি আসছেন।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বহু দায়িত্ব পালন করেছেন। সিপিএম নেতা, মন্ত্রী, উপমুখ্য়মন্ত্রী, মুখ্য়মন্ত্রী, প্রাক্তন মুখ্য়মন্ত্রী। কিনতু, বাহন হিসেবে তাঁর সঙ্গে থেকে গেছে এই সাদা অ্য়াম্বাসাডরই। মন্ত্রী বা মুখ্য়মন্ত্রী থাকাকালীন সকালে পাম অ্য়াভিনিউ থেকে রাইটার্স বিল্ডিং। দুপুরে মধ্য়াহ্নভোজের জন্য় রাইটার্স থেকে বাড়ি। সন্ধেয় আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে দফতর কিংবা কখনও সখনও নন্দন। এই দুধসাদা অ্য়াম্বাসাডরের অন্দরেই স্বচ্ছন্দ্য় ছিলেন তিনি।
২০১১ সালে শেষবার মুখ্য়মন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়ে যখন রাজভবন ছাড়েন, তখনও এই অ্য়াম্বাসাডরে। ২০১৯ সালে অক্সিজেনের নল নাকে নিয়ে, শেষবার সিপিএমের ব্রিগেডে এসেছিলেন প্রাক্তন মুখ্য়মন্ত্রী। পাম অ্য়াভিনিউ থেকে তাঁকে ব্রিগেড অবধি নিয়ে এসেছিল এই বাহনই।
গতবার যখন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, তাঁকে অ্য়ামবুল্য়ান্সে করে নিয়ে যেতে হয়েছিল। কিন্তু তিনি যতদিন হাসপাতালের বিছানায়, ততদিন ঠায় বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল তাঁর বাহন। গত কয়েক বছর ধরেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য শয্য়াশায়ী। কোথাও আসা যাওয়ার প্রশ্ন নেই। তবু প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে, পাম অ্য়াভিনিউয়ের বাড়ির বাইরে এসে দাঁড়াত সেই অ্য়াম্বাসাডর। এবারও তিনি বেরলেন, অন্যগাড়িতে। শববাহী শকটে চেপে চিরবিদায় জানালেন তাঁর চিরসঙ্গী সাদা অ্যাম্বাসাডারটিকে।
আরও পড়ুন
দলীয় পতাকা, ফুলে শেষ শ্রদ্ধা, পিস ওয়ার্ল্ডে শায়িত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মরদেহ