Durga puja 2021: এক সময়ে এই জঙ্গলের দুর্গাপুজোয় হত নরবলি, ইতিহাস জানলে অবাক হতে হয়
মন্দিরের বর্তমান পূজারী শ্যামসুন্দর রায় জানান,বহুকাল আগে একজন কাপালিক সিদ্ধিলাভ করার জন্য নরবলি দিতেন। এই মন্দির তখন ঘন জঙ্গলে ঢাকা ছিল।
মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিম বন্দ্যোপাধ্যায়: স্মার্ট সিটি দুর্গাপুরের জাঁকজমক আলোকসজ্জায় পরিপূর্ণ দুর্গাপুজোর আড়ালে রয়েছে এক ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজো। হাজার বছরেরও বেশি গড় জঙ্গলের ভেতর গা ছমছমে পরিবেশে শ্যাম রুপার মন্দির।
একদিকে অজয় নদী পেরিয়ে বীরভূম জেলা, অন্যদিকে পশ্চিম বর্ধমান। এই দুই জেলার মধ্যে ১০ কিলোমিটার গভীর ঘন জঙ্গল। শাল মহুয়া পিয়ালের ঘন জঙ্গলের বুকে লাল মাটির রাস্তা পেরিয়ে গড়জঙ্গলের শ্যমরুপা মন্দির। প্রায় হাজার বছর ধরে দেবী দুর্গারুপে পূজিত হয়ে আসছেন মা শ্যামরুপা হিসেবেই। ঘিঞ্জি শহরের বেড়াজাল ডিঙিয়ে জঙ্গলে সবুজ প্রকৃতির কোলে দুর্গাপুজোর আনন্দ উপভোগ করতে পুজো চারদিন বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের ভিড় হয় এখানে। চারদিন ধরেই চলে ভোগ বিতরণ।
জানা যায়,রাজা লক্ষণ সেন গৌড় সাম্রাজ্য থেকে পালিয়ে এসে এখানে আত্মগোপন করেছিলেন এই জঙ্গলে। তিনিই প্রথম দুর্গাপূজা শুরু করেন এই গভীর জঙ্গলে। লক্ষ্মণ সেন চলে যাওয়ার পর ইচ্ছাই ঘোষকে মন্দিরের দায়িত্ব দেন। তারপর থেকে তিনিই এই মন্দিরের পূজা করতেন। কথিত আছে, দেবী স্বপ্নাদেশ মেনে রাজাকে যুদ্ধে যেতে বারণ করেছিলেন ইচ্ছাই ঘোষ। কিন্তু রাজা দেবীর কথা না শুনে সপ্তমীর দিন যুদ্ধে চলে যায়। যুদ্ধে পরাজিতএবং নিহত হন লক্ষ্মণ সেন। তার পর রাজার অনুচরেরা গড়জঙ্গল থেকে দীর্ঘ দুই কিলোমিটার দূরে দ্বীপসায়ের নামে একটি জলাশয়ে দেবীর মূর্তি বিসর্জন করে দেয়। যদিও পরে অষ্টধাতুর মূর্তি বসিয়ে পূজা দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন, দেবী দুর্গার আগমনই কি কারণ ? কেন বলে মহালয়া ?
মন্দিরের বর্তমান পূজারী শ্যামসুন্দর রায় জানান,বহুকাল আগে একজন কাপালিক সিদ্ধিলাভ করার জন্য নরবলি দিতেন। এই মন্দির তখন ঘন জঙ্গলে ঢাকা ছিল। জঙ্গলে হিংস্র জন্তু থাকত। নরবলির কথা শুনতে পেয়ে ভক্তপ্রেমিক কবি একদিন চলে আসেন এই শ্যামরূপার মন্দিরে। তিনি কাপালিককে বলেন আপনি তো নরবলি দেন মায়ের পূজার জন্য। আপনি কি নরবলি দিয়ে আমার শ্যামরূপা মাকে দেখতে পারবেন,যদি না পারেন তাহলে আমি আপনাকে নরবলি না দিয়ে দেখাবো। ভক্তকবি জয়দবের এই কথায় রাজি হলেন কাপালিক। ভক্তপ্রেমিক জয়দেব আকুল মনে প্রার্থনা করে সফল হয় তার শ্যামা মাকে শ্যাম রূপে দেখতে। মাকে দেখতে পেয়ে ভক্তপ্রেমিক জয়দেবের পদতলে লুটিয়ে পড়ে যায় কাপালিক। সেই থেকে বন্ধ হয়ে যায় নরবলি।
তিনি জানান আগের মায়ের মূর্তি চুরি হয়ে গেছে তার পর পাথরের এক মূর্তি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। শহর থেকে দুরে সবুজে ঘেরা জঙ্গলের মাঝে শ্যাম রুপা মন্দিরের পুজোয় বহু মানুষের ঢল নামে। পূজোর চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী সপ্তমীর দিন মায়ের পূজা শেষে লাউ বলি হয়। অষ্টমির দিন অষ্টমি পূজো এবং সন্ধিপূজো সহ নিখুঁত সাদা ছাগল বলি দেওয়া হয়।এরপর সন্ধিক্ষণের পর শ্যাম রুপা মন্দিরে বলিদানের পরেই শুরু হয় আশপাশের গ্রামের অন্যান্য মন্দিরে বলিদান। এখানে সরকারি কোনো অনুদান অথবা কোনো ট্রাস্টি নেই। সাধারণ মানুষের দানের ওপরেই হয় এই বিশাল আয়োজন।