External Debt of India: বিদেশি ঋণের পরিমাণ বাড়ল ভারতের, এক বছরে ১১ শতাংশ বৃদ্ধি
India Total External Debt: অর্থমন্ত্রকের তরফে Quarterly External Debt Report প্রকাশ করা হয়েছে, আর তাতে এই হিসেব সামনে এসেছে।

নয়াদিল্লি: ভারতের বিদেশি ঋণের পরিমাণ আরও বাড়ল। ডিসেম্বর ত্রৈমাসিক পর্যন্ত ভারতের বিদেশি ঋণের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৭১৭.৯ বিলিয়ন ডলার, ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৬১ লক্ষ ৪২ হাজার কোটি টাকা। বিগত অর্থবর্ষের তুলনায় ভারতের বিদেশি ঋণের পরিমাণে ১০.৭ শতাংশ বৃদ্ধি চোখে পড়ছে। স্বল্প মেয়াদি এবং দীর্ঘ মেয়াদি, দুই ধরনের বিদেশি ঋণেই বৃদ্ধি চোখে পড়ছে। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকই এই তথ্য প্রকাশ করেছে। (External Debt of India)
অর্থমন্ত্রকের তরফে Quarterly External Debt Report প্রকাশ করা হয়েছে, আর তাতে এই হিসেব সামনে এসেছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ভারতের মোট বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৬৪৮.৭ বিলিয়ন ডলার ছিল, অর্থাৎ ৫৫ লক্ষ ৪৩৬ কোটি টাকা। সেই নিরিখে ঋণ বেড়েছে ১০.৭ শতাংশ। অথচ একদশক আগে পর্যন্ত, অর্থাৎ ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ভারতের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৪০ বিলিয়ন ডলার ছিল, অর্থাৎ ৩৭ লক্ষ ৬৫ হাজার কোটি। অর্থাৎ গত এক দশকে ভারতের বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৬৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে। (India Total External Debt)
প্রত্যেক দেশকেই বিদেশ থেকে ঋণ নিতে হয়। পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান দেশগুলির মধ্যে ভারত অন্যতম। রাস্তা, সড়ক, রেল, বন্দর, শহর-সহ পরিকাঠামো খাতে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়। রাজস্ব এবং করের টাকায় এই খরচ কুলোয় না। তাই বিদেশ থেকে ঋণ নিতে হয়। আয় এবং খরচের মধ্যে ফারাক খোচাতে মোটা টাকা ঋণ নেওয়া হয় বিদেশ থেকে। পাশাপাশি, বেসরকারি সংস্থাগুলিও বিদেশ থেকে ঋণ নেয়। কারণ সুদের নিরিখে বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়া সস্তা পড়ে তাদের। পাশাপাশি, করোনার মতো জরুরি পরিস্থিতিতে ঋণ নিতে হয়। অর্থমন্ত্রক জানিয়েছে, বেসরকারি সংস্থাগুলির ঋণের পরিমাণ ৫৩ শতাংশের বেশি। ফলে তাদের ঋণের পরিমাণও দেশের মোট ঋণের উপর প্রভাব ফেলেছে।
তবে ঋণের পরিমাণ অনেকটা বেড়ে যাওয়ার নেপথ্যে ভূমিকা রয়েছে টাকার দামেরও। আমেরিকার ডলারের নিরিখে ভারতের টাকার দাম লাগাতার পড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে, টাকার দাম যখন দুর্বল হয়, ঋণের মূল্যও বেড়ে যায়। অর্থমন্ত্রকের পরিসংখ্যান বলছে, ভারতের মোট বিদেশি ঋণের ৫৩ শতাংশই আমেরিকার ডলার মারফত নেওয়া। এই মুহূর্তে ডলার প্রতি টাকার দাম নামতে নামতে তলানিতে এসে ঠেকেছে। ফলে মুদ্রা বিনিময়ের যে হার, তারও প্রভাব পড়ছে ঋণের উপর।
দেশের অন্দর থেকেও ঋণ নেয় সরকার। এক্ষেত্রে সরকার দেশের বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নেওয়া হয়, ট্রেজারি বিল এবং সিকিওরিটির মাধ্যমে ঋণ নেওয়া যায়, ঋণ নেওয়া যায় ব্য়াঙ্ক থেকে, এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড, পোস্ট অফিস থেকেও ঋণ নেওয়া যায়। দেশের অন্দর থেকে তোলা ঋণ তুলনামূলক নিরাপদ হয়, কারণ এই টাকা নির্ধারণ হয় টাকার মাধ্যমে। টাকার দাম পড়লেও, ঋণের বোঝা বাড়ে না।
সেই নিরিখে বিদেশ থেকে নেওয়া ঋণ ঝুঁকিপূর্ণ। এক্ষেত্রে সরকার, রাষ্ট্রায়াত্ত ও বেসরকারি সংস্থাগুলি বিদেশ থেকে ঋণ নেয়। বিশ্বব্যাঙ্ক, আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের মতো সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নেওয়া হয়। তুলনামূলক সস্তা হারে, দীর্ঘকালীন মেয়াদে ঋণ দেয় ওই সব সংস্থা। বন্ড ভাঙিয়েও ঋণ নেওয়ার চল রয়েছে। প্রবাসী ভারতীয়রা দেশে যে টাকা বিনিয়োগ করেন, বিদেশি ঋণে তারও যোগদান রয়েছে। অন্য দেশ থেকেও ঋণ নেওয়া হয়, যেমন বুলেট ট্রেনের জন্য জাপানের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে।
বিদেশি ঋণ কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, তা বোঝার ক্ষেত্রে মাপকাঠি হিসেবে ধরা হয় ঋণ এবং জিডিপি-র অনুপাত। সাধারণত বিদেশি ঋণের পরিমাণ জিডিপি-র ৪০ শতাংশের বেশি হলে, তা চিন্তাজনক হিসেবে ধরা হয়। উদাহরণস্বরূপ শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তানের কথা বলা যায়। শ্রীলঙ্কার ঋণ এবং জিডিপি-র অনুপাত ১০০ শতাংশের বেশি এবং পাকিস্তানের ৬০ শতাংশের বেশি। অর্থমন্ত্রক জানিয়েছে, ভারতের ঋণ এবং জিডিপি-র অনুপাত ১৯.১ শতাংশে রয়েছে, যা অন্য অনেক দেশের তুলনায় কম।






















