Independence Day 2024: রাসবিহারী বসুর এই শিষ্যের এক বোমায় কেঁপে গিয়েছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্য, স্মৃতিচারণায় বসন্ত বিশ্বাসের মন্ত্রী-ভাইপো
Basanta Kumar Biswas: স্কুল জীবনেই বিপ্লবী মতাদর্শে দীক্ষিত হয়েছিলেন। স্কুল শিক্ষকের হাত ধরে পরিচয় রাসবিহারী বসুর সঙ্গে। দেশ স্বাধীনতার জন্য উৎসর্গ করা স্বল্পায়ু জীবনে নাড়িয়ে দিয়েছিলেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত।
কলকাতা: সময়টা ১৯১২ সালের ২৩ ডিসেম্বর। জায়গাটা দিল্লির রাজপথ। সবেমাত্র কলকাতা থেকে দিল্লিতে সরে এসেছে রাজধানী। কারণ কলকাতা-ঢাকা কেন্দ্রিক প্রবল বিপ্লবী আন্দোলনে নাস্তানাবুদ ব্রিটিশ সাম্রাজ্য। কলকাতা থেকে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ব্রিটিশ-অধীন ভারতের রাজধানী। দিল্লিকে ভারতের রাজধানী হিসেবে উদ্বোধন করার জন্য সেখানেই তখন রয়েছেন ব্রিটিশ-ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ। দিল্লির রাজপথ দিয়ে হাতির পিঠে চড়ে ভাইসরয় যাওয়ার সময় চাঁদনি চকের সামনে হঠাৎ কান ফাটানো শব্দে হুলুস্থুল। ভাইসরয়ের উপর বোমা হামলা? হকচকিয়ে গিয়েছিলেন সকলে। সেই ফাঁকেই দ্রুত পায়ে ভিড়ে হারিয়ে গিয়েছিলেন শাড়ি পরিহিত এক তরুণ। লর্ড হার্ডিঞ্জ বেঁচে গিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু সেই ঘটনায় ভিত কেঁপে গিয়েছিল তামাম ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের। ওই ঘটনায় জেরেই শুরু কুখ্যাত দিল্লি-লাহোর মামলা। কে ছিলেন এই হামলার পিছনে?
সময়টা তখন উত্তাল। ভারতভূমি ব্রিটিশদের পদতলে। দুই দশক আগেই গোটা দাক্ষিণাত্য এবং তদানীন্তন বম্বেতে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ঘটে গিয়েছে। বাংলার সমাজ-অর্থনীতির অবস্থা তখন গভীর সঙ্কটে। সেই টালমাটাল সময়ে অবিভক্ত ভারতের নদিয়া জেলার ছোট্ট একটি গ্রাম পরাগাছা-তে জন্মেছিলেন তিনি। সালটা ১৮৯৫। তারপর মাত্র ২ দশকের আয়ু ছিল তাঁর। সেই সময়ের মধ্যেই কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন ব্রিটিশ শাসনের ভিত। সেই অগ্নিস্ফুলিঙ্গের নাম বসন্ত বিশ্বাস।
অত কম বয়সেই দেশের প্রতি, সমাজের প্রতি এই দায়বদ্ধতার পাঠ হয়তো তিনি পেয়েছিলেন পরিবার থেকেই। তাঁর বাবার নাম মতিলাল বিশ্বাস। নীলবিদ্রোহের সময় অন্যতম নেতা ছিলেন এই বংশেরই পূর্বপুরুষ- দিগম্বর বিশ্বাস। বরাবরের ব্রিটিশ বিরোধিতার জন্য নানা সময় নানা সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছে এই পরিবারটিকে। তাই হয়তো মনের মধ্যে প্রথম থেকেই ছাইচাপা আগুন ছিল। পরে স্কুলের প্রধানশিক্ষক এবং রাসবিহারী বসুর সংস্পর্শে এসে তা তৈরি হয়েছিল গনগনে আঁচে।
স্মৃতি রোমন্থন মন্ত্রী ভাইপোর:
কৃষ্ণনগর দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক ও ভারপ্রাপ্ত কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস- এই পরিবারেরই সন্তান। তিনি সম্পর্কে বসন্ত বিশ্বাসের ভাইপো। অগ্নিযুগের বিপ্লবীর কথা বলতেই স্মৃতি রোমন্থন করলেন তিনি। মন্ত্রী বললেন, 'আমার বাবার বয়স তখন ৯। ওঁর বয়স ১২-১৩ হবে। বাবার কাছ থেকেই শোনা। বাড়ি থেকে ঘোড়ায় চড়ে পড়তে যেতেন উনি। মুড়াগাছা স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। পরে ওখানেই থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন ঠাকুরদা।' তিনি জানাচ্ছেন, স্কুলে পড়তে পড়তেই বসন্ত বিশ্বাস সংস্পর্শে আসেন সেই স্কুলের প্রধানশিক্ষকের। তাঁর কাছ থেকেই দেশপ্রেমের পাঠ। উজ্জ্বল বিশ্বাস জানাচ্ছেন, প্রধানশিক্ষকই বসন্ত বিশ্বাসের সঙ্গে পরিচয় করান রাসবিহারী বসুর। রাসবিহারী বসুর সান্নিধ্যে এসেই হয়তো জীবনের পথ নির্ধারিত হয়ে যায়। রাসবিহারী বসু না কি বসন্ত বিশ্বাসকে জিজ্ঞেস করেছিলেন স্বাধীনতার যুদ্ধের জন্য কতটা প্রস্তুত তিনি। বসন্ত বিশ্বাস জানিয়েছিলেন, দেশের স্বাধীনতার জন্য মৃত্যু বরণ করতেও তিনি প্রস্তুত। এই বসন্তই হয়ে উঠেছিলেন রাসবিহারী বসুর অন্যতম প্রিয় শিষ্য়।
যুগান্তর গোষ্ঠীর সংস্পর্শে এসেছিলেন তিনি। তারপর রাসবিহাসীর বসুর সঙ্গেই ছদ্মনাম নিয়ে দিল্লি চলে যান তিনি। বোমা তৈরিতে বিশেষ কৌশলী ছিলেন সদ্য কৈশোর পেরনো বসন্ত বিশ্বাস। রাসবিহারী বসু এবং অমরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সান্নিধ্যে অস্ত্রশিক্ষাতেও পারদর্শী হয়ে ওঠেন। একাধিক বৈপ্লবিক কর্মসূচিতে যোগদান করেছিলেন তিনি। তারপরেই আসে সেই মিশন- লর্ড হার্ডিঞ্জের উপর হামলার পরিকল্পনা। ওই হামলায় সফল হয়নি, কিন্তু ধাক্কা দিয়েছিল ব্রিটিশদের। ১৯১২ সালে লর্ড হার্ডিঞ্জের উপর বোমা ছুড়ে পালিয়ে যেতে পেরেছিলেন তিনি। ওই মামলায় জড়িতদের জন্য সেই সময় দাঁড়িয়ে লক্ষাধিক টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল ব্রিটিশ সরকার। লাভ হয়নি। তারপরে ১৯১৩ সালে মে মাসে লাহোরে লরেন্স গার্ডেনেও ব্রিটিশ পুলিশদের একটি ক্লাবে বোমা নিক্ষেপ করেন তিনি। সেই সময় গ্রেফতার হন তাঁর তিন সঙ্গী আমিরচাঁদ, বাল মুকুন্দ, অবোধ বিহারী। বসন্ত বিশ্বাস ফিরে আসেন নিজের গ্রামে। বাবা মারা গিয়েছিলেন, শ্রাদ্ধের কাজের সময়েই কিংবা তার আগেই বিশ্বাসঘাতকতার কারণে ধরা পড়ে যান তিনি, সময়টা ১৯১৪। বিচারের পর তাঁকে এবং তাঁর বাকি সঙ্গীদের মৃত্যুদণ্ড দেয় ব্রিটিশ ভারতের আদালত। ওই ঘটনায় যাঁরা দোষী বলে সাব্যস্ত হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে কনিষ্ঠ ছিলেন বসন্ত বিশ্বাস। বাকিদের আগে ফাঁসি দিয়ে দেওয়া হয়। ১৯১৫ সালের ১১ মে তৎকালীন অম্বালার কেন্দ্রীয় জেলে তাঁর প্রাণদণ্ড কার্যকর হয়। তখন বসন্ত বিশ্বাসের বয়স মাত্র ২০। এখন কৃষ্ণনগরের রবীন্দ্র ভবনের সামনে, মুড়াগাছা স্কুলে, জাপানের এক পার্কে মূর্তি হয়ে রয়েছেন তিনি। বাংলার কৈশোর-যৌবনের স্মৃতিতে-শিক্ষায় আছেন কি?
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।