Independence Day 2025 : হাতে তেরঙ্গা, মুখে 'বন্দে মাতরম'; ব্রিটিশ পুলিশের গুলিতে লুটিয়ে পড়লেন 'গাঁধী বুড়ি'; শিহরণ জাগায় মাতঙ্গিনীর সংগ্রাম
Matangini Hazra : তমলুকের কাছে হোগলা গ্রামে এক গরিব কৃষক পরিবারে জন্ম মাতঙ্গিনী হাজরার। খুব অল্প বয়সেই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল তাঁর।

হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরা তেরঙ্গা। মুখে 'বন্দে মাতরম'। একে একে ডান হাত, বাঁ উরু ও সবশেষে কপালে ব্রিটিশ পুলিশের গুলি নিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন বছর ৭৩-এর 'গান্ধী বুড়ি' মাতঙ্গিনী হাজরা। শেষ হয়ে যায় একটা অধ্যায়। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে উজ্জ্বল নাম মাতঙ্গিনী হাজরার সংগ্রামের অধ্যায়।
তমলুকের কাছে হোগলা গ্রামে এক গরিব কৃষক পরিবারে জন্ম মাতঙ্গিনী হাজরার। খুব অল্প বয়সেই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল তাঁর। বয়স তখন মাত্র ১২ বছর। ত্রিলোচন হাজরার সঙ্গে বিয়ে হয়। কিন্তু, সংসার জীবন বেশিদিন টেকেনি। মাত্র ৬ বছরের মধ্যেই মৃত্যু হয় তাঁর স্বামীর। অর্থাৎ, ১৮ বছর বয়সেই বিধবা হয়ে যান মাতঙ্গিনী। এরপর নিজের গ্রামে ফিরে আসেন। সেখানে তাঁর যাবতীয় সময় নিজের সম্প্রদায়ের মানুষের সাহায্যে ব্য়য় করতে শুরু করেন। এ গেল মাতঙ্গিনীর জীবনের একটা অধ্যায়। Freedom Fighter
ইতিহাসের পাতায় যে কারণে স্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি, সেই অধ্যায় শুরু হয় এরপর। বঙ্গে তখন জাতীয়বাদী আন্দোলন গতি লাভ করছে। দেশবাসীকে স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করতে গোটা দেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন গান্ধীজি স্বয়ং। ১৯০৫ সাল, বাংলাজুড়ে তখন জাতীয়বাদী আন্দোলনের ঢেউ। সেই সময় মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ওঠেন মাতঙ্গিনী হাজরা। মহাত্মা গান্ধীর দেওয়া শিক্ষা তিনি এতটাই নিখুঁতভাবে অনুসরণ করতে শুরু করেন যে পরবর্তীকালে তিনি 'গান্ধী বুড়ি' বলে পরিচিতি লাভ করেন। Gandhi Buri
কিছু সূত্র অনুযায়ী, ১৯৩১ সাল নাগাদ জীবনের ছবিটা বদলে যায় মাতঙ্গিনী হাজরার। একদিন তিনি দেখেন, তাঁর বাড়ির সামনে দিয়ে এক শোভাযাত্রা এগিয়ে যাচ্ছে। যার মূল আহ্বায়ক গুণধর ভৌমিক নামে স্থানীয় এক কংগ্রেস নেতা। জানালার ফাঁক দিয়ে মাতঙ্গিনী দেখেন, শোভাযাত্রায় কিছু যুবতী এবং কিশোরী শঙ্খধ্বনি দিয়ে স্বাধীনতা দিবসকে আহ্বান জানাচ্ছেন। জীবন সম্পর্কে এতদিন যে ধ্যান-ধারণা তিনি সযত্নে পোষণ করে এসেছেন সেটা কার্যত বদলে গেল। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন এই শোভাযাত্রায় তিনিও শামিল হবেন। তাঁকে সাদরে গ্রহণ করে নেন মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা। নানা গ্রাম, ছোট বসতি পেরিয়ে পৌঁছলেন কৃষ্ণগঞ্জে। সেখানে একটি সভায় স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেওয়ার শপথ বাক্য পাঠ করলেন। শুরু হল আরও একটি অধ্যায়।
১৯৩২ সালে ৬২ বছর বয়সে লবণ সত্যাগ্রহে যোগ দেন মাতঙ্গিনী হাজরা। অসহযোগিতা আন্দোললেও তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। লবণ আইন লঙ্ঘন করায় তাঁকে গ্রেফতার করে ব্রিটিশ পুলিশ। শীঘ্রই তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। চৌকিদারি কর বিলোপের দাবিতে প্রতিবাদে সরব হন মাতঙ্গিনী। ১৯৩৩ সালে ফের তিনি গ্রেফতার হন। বহরমপুরে ৬ মাস রাখা হয় তাঁকে। মুক্তির পর তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন। শ্রীরামপুর কংগ্রেসের কনফারেন্সে যোগ দিয়ে ব্রিটিশ পুলিশের লাঠিচার্জ আহত হন তিনি।
স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দিয়ে নেতৃত্বও দিয়েছেন সামনের সারিতে থেকে। ১৯৪২ সালে তখন 'ভারত ছাড়ো'আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উত্তাল গোটা দেশ। মেদিনীপুর জেলায় বিভিন্ন থানা এবং সরকারি অফিস দখলের আন্দোলন শুরু করেছেন আন্দোলনকারী। মাতঙ্গিনীর তখন ৭৩ বছর বয়স। তমলুক থানা অধিগ্রহণের লক্ষ্যে ৬ হাজার সমর্থককে নিয়ে মিছিল করে এগিয়ে যান মাতঙ্গিনী। কার্ফু জারি থাকা এলাকায় মিছিল নিয়ে ঢুকে পড়েন তিনি। তাঁদের চলে যেতে বলা হয়। কিন্তু, মাতঙ্গিনী সেই নিষেধাজ্ঞা না শুনে সদলবলে এগিয়ে যান। সেই সময় তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় ব্রিটিশ পুলিশ। মুখে 'বন্দে মাতরম' ও হাতে তেরঙ্গা নিয়ে শহিদ হন মাতঙ্গিনী। থেমে যায় বন্যা কবলিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে 'গাঁধী বুড়ি' হয়ে ওঠা মাতঙ্গিনীর লড়াই। তবে, শুধু স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসাবেই নয়, দেশ গঠনে মহিলার গুরুত্ব তুলে ধরার পিছনেও তাঁর গুরুত্ব ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। নারী শিক্ষার প্রসারেও তিনি ছিলেন অগ্রণী।






















