Naushad Siddiqui : 'নাম বললে কুণালের চাকরি থাকবে না', পাল্টা চ্যালেঞ্জ নৌশাদের
Bayron Biswas : সিপিএমের সমর্থনে কংগ্রেসের টিকিটে জেতার তিন মাসের মধ্যেই সোমবার কার্যত ডিগবজি খেয়েছেন বায়রন বিশ্বাস !
কলকাতা : 'দলবদল করতে টাকা ও মন্ত্রিত্বের টোপ দেওয়া হয়েছিল।' বিস্ফোরক দাবি করেছেন ভাঙড়ের আইএসএস বিধায়ক নৌশাদ সিদ্দিকি। কিন্তু, কে দিয়েছিলেন টাকার টোপ ? নাম বলতে হবে। এমনই চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে 'ঘণ্টাখানেক সঙ্গে সুমন' অনুষ্ঠানে এসে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে নৌশাদের বক্তব্য, 'নাম বললে কুণালের চাকরি থাকবে না।'
সিপিএমের সমর্থনে কংগ্রেসের টিকিটে জেতার তিন মাসের মধ্যেই সোমবার কার্যত ডিগবজি খেয়েছেন বায়রন বিশ্বাস ! সে নিয়ে চরম রাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্যেই এবার বিস্ফোরক দাবি করলেন আরেক বিরোধী দলের বিধায়ক নৌশাদ সিদ্দিকি! তাঁকেও টাকা, মন্ত্রিত্বের টোপ দিয়ে দলের টানার চেষ্টা করেছিল তৃণমূল ! নৌশাদের বক্তব্য, "শপথ নেওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছিল। কোনও সময় টাকা, কোনও সময় মন্ত্রিত্ব, কখনও ভয়ও দেখানো হয়েছিল।"
সাগরদিঘি ও ভাঙড়-এই দুটি ছাড়া রাজ্যের বাকি সব বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে প্রধান দুই দল তৃণমূল অথবা বিজেপির দখলে ! তার মধ্যেই, গত সোমবার সাগরদিঘির কংগ্রেস বিধায়ক হাত ছেড়ে যোগ দেন ঘাসফুল শিবিরে। এবিপি আনন্দকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এবার বিস্ফোরক দাবি করলেন ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক। তিনি বলেছেন, "আপনারা তো দেখেছেন, আমাকে জেলে রেখেছিল, ওটাও তো ভয় দেখানো। যখন হায়ার লেভেল পারেনি, আমার অঞ্চলের লোক দিয়ে চেষ্টা করেছে।"
কিন্তু, কতা কত টাকার অফার করা হয়েছিল তাঁকে ? ১ কোটি- ২কোটি ? এর উত্তরে নৌশাদ জানান, 'না, এর থেকেও অনেক বেশি। ১ কোটি-২ কোটি টাকা দিক, আরও যত দিক ওরা জানে নৌশাদ এক কানে ঢোকাবে, আরেক কানে বের করে দেবে। আরও অনেক বেশি। ভোট পরবর্তী হিংসায় আমাকে গ্রামে ঢুকতে দেয়নি, গাড়ি ভাঙচুর করেছে। তবু আমি আপন গতিতে এগিয়ে যচ্ছি।'
২০২১-এর বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই তৃণমূলের মাথাব্যথার কারণ ভাঙড়। পাওয়ার গ্রিড আন্দোলনের সময় থেকে ভাঙড়ের বিভিন্ন গ্রামে তৃণমূলের রাশ আলগা হয়েই ছিল। তারপর একুশের বিধানসভা নির্বাচনে, প্রায় ৬৭ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটার অধ্যুষিত ভাঙড়ে কংগ্রেস ও সিপিএমের সমর্থন নিয়ে তৃণমূলকে জোর ধাক্কা দেয় আইএসএফ।
সামনে পঞ্চায়েত ভোটের লড়াই। তার আগে ভাঙড়ে হারানো জমি ফিরে পেতেই কি এবার নৌশাদকে দলে টানতে চাইছে তৃণমূল ? দল ভাঙিয়ে কংগ্রেসকে বিধানসভায় শূন্য করেছে শাসকদল। বায়রনের হাত ধরেই পঞ্চায়েত ভোটের আগে বাংলায় শুরু হয়েছে দল বদলের খেলা ! যার নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ শাসকদলেরই বিধায়ক। বারাসাতের তৃণমূল বিধায়ক চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী বলেছেন, "আমি এসব পছন্দ করি না। একজনের ভোটে জিতলাম, তাহলে অন্য দলে কী করে চলে যাবে? তা এটা উচিত নয়। তাহলে তো ঠকানো হবে! যাকে সিম্বল দেখে ভোট দিয়েছে মানুষ, তাহলে সিম্বলটারই মূল্য থাকছে না।"
এবার আরও এক বিরোধী দলের বিধায়কের মুখে দল ভাঙানোর প্রসঙ্গ ! চলতি বছর, ২১ জানুয়ারি, ISF-পুলিশের খণ্ডযুদ্ধে, অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে ধর্মতলা চত্বর। সেই ঘটনায় ৪২ দিন জেলবন্দি থাকতে হয় আইএসএফ বিধায়ককে। এপ্রসঙ্গে নৌশাদের বক্তব্য, 'কেউ যদি মনে করে আমি ভয় পেয়েছি, তাহলে ভুল করবে।' তিন মাস পরও দল ভাঙানোর প্রসঙ্গে সেই একই সুর শোনা গেল নৌশাদ সিদ্দিকির গলায়। তিনি বলেন, 'মানুষ আমাকে ভরসা করে ভোট দিয়েছেন। আমি ভয় বা কোনও চাপের কাছে আত্মসমর্পণ করব না।'
গত বিধানসভা নির্বাচনের নিরিখে ভাঙড়ের ১৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে ১১টিতেই এগিয়ে আছে আইএসএফ। দল ভাঙিয়ে সামনের পঞ্চায়েত ভোটে কি সেই ব্যবধান মুছতে পারবে শাসকদল ? নাকি ভাঙড়ের রাশ থাকবে সংযুক্ত মোর্চার হাতেই ? উত্তর মিলবে ভবিষ্যতে।