Kalyan Banerjee: “সুন্দরী মহিলা বলে, ফট ফট করে ইংরেজি বলতে পারেন বলে অপমান করতে পারেন না”, তৃণমূলেরই সাংসদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠলেন কল্যাণ
TMC News: ৪ এপ্রিল নির্বাচন কমিশনের সদর দফতরে স্মারক লিপি জমা দিতে যাওয়া নিয়ে মূলত বিরোধ বাধে বলে দাবি মালবীয়র।

কলকাতা: তৃণমূলের অন্দরে এবার সাংসদ-সংঘাত। শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিশানায় দলেরই তিন সাংসদ। তৃণমূল সাংসদদের মধ্যে কোন্দল চলছে বলে বিজেপি-র আইটি সেলে প্রধান অমিত মালবীয় সোশ্য়াল মিডিয়ায় কিছু ভিডিও পোস্ট করেছিলেন। দলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের কথোপকথন বলে দাবি করে কিছু স্ক্রিনশটও ঘুরে বেড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই আবহেই সাংবাদিক বৈঠক করে সতীর্থদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন কল্যাণ। (Kalyan Banerjee)
৪ এপ্রিল নির্বাচন কমিশনের সদর দফতরে স্মারক লিপি জমা দিতে যাওয়া নিয়ে মূলত বিরোধ বাধে বলে দাবি মালবীয়র। দলের তরফে একসঙ্গে স্মারকলিপি জমা দিতে বলা হলেও, তৃণমূলের একজন সরাসরি নির্বাচন কমিশনে হাজির হন বলে জানান তিনি। কল্যাণ উষ্মা প্রকাশ করছেন, এমন একটি ভিডিও-ও প্রকাশ করেন মালবীয়। আর সেই নিয়ে জল্পনা-কল্পনার মধ্যেই মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক করেন কল্যাণ। (TMC News)
এদিন সাংবাদিক বৈঠক করে কল্যাণ বলেন, "কোনও অবদান নেই। ২০০৯ সালের পর এসেছে। কংগ্রেসের কোনও বড় নেতার বান্ধবী বলেই তো জেলার রাজনীতিতে ঢুকে গিয়েছিল? এদের সব ব্যাকগ্রাউন্ড এমন। আমি কেন মানব, স্বভাবতই অসন্তুষ্ট হয়েছিলাম। আমার মতো লোককে জেলে ঢোকাতে বলছে! বলছে অশালীন শব্দ ব্যবহার করেছি। এটা মিথ্যে কথা সম্পূর্ণ। ভিডিওটা আমাদেরই একজন সাংসদ, যে বাইরে থেকে এসেছে, সেই বাজারে ছেড়ে দিয়েছে। এর একটা ব্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে। ঠিক আগের দিন কীর্তি আজাদ কয়েক জন মহিলা সাংসদ, দু'চার জন পুরুষ সাংসদের চিঠি নিয়েছিল। স্পিকারের উদ্দেশে লেখা ওই চিঠিতে বলা হয়, চিত্তরঞ্জন পার্কের সন্দেশের দোকানের কাউন্টার খোলা হোক সংসদে। আমি জেনেি বিরোধিতা করেছি। দলের অনুমতি ছাড়া কে দোকান খুলবে! তৃণমূল বেসরকারি ব্যবসাতে আগ্রহী নয়। আমাকে বলা হয়, প্রাইভেট ম্যাটার! তৃণমূলের প্রতীকে সাংসদ হয়েছে। সাংসদদের সই সংগ্রহ করছে। প্রাইভেট ম্যাটার হল কী করে? চিঠি জমা দিতে পারেনি। আমার উপর রাগ হয়েছে।"
কীর্তি আজাদের নাম করলেও, দলের যে মহিলা সাংসদকে কটাক্ষ করেছেন কল্যাণ, তাঁর নাম খোলসা করেননি। কল্যাণ বলেন, "এই যে মহিলা সাংসদ। ইনি কিছুদিন আগে সংসদে আমাকে ছোটলোক বলেছেন। আমার মেয়ে নিয়ে কথা বলেছেন। যত সময় চাইবেন ওঁকে দিতে হবে। ওঁর রাগ হচ্ছে আমি কেন ওয়াকফ বিলে বলেছি। ভাই তুমি যদি সামান্য বিল নিয়ে কথা বলতে ১৮ মিনিট নাও, তা ওয়াকফ বিল নিয়ে কথা বলতে আমি ৩৫ মিনিট নেব না? তুমি আগ্রহী না হলেও, ভারতের অনেকে আগ্রহী আমি ওয়াকফ বিল নিয়ে কী বলি, তা জানতে। আমি তো সাধারণ মানুষের কথা বলি, তুমি তো এক শিল্পপতির হয়ে আর এক শিল্পপতিকে আক্রমণ করো! আরও অনেক কিছু বলব যদি মুখ খোলে। সেটা কিন্তু শুনতে ভাল লাগবে না। আর যে সাংসদ দলের অভ্যন্তরে রাজনীতি করছেন, তিনি বাইরের রাজ্য থেকে, অন্য দল থেকে এসেছেন, সেই দল থেকে বিতাড়িত হয়ে এসেছেন। অনেক সন্দেহ রয়েছে অনেক ব্যাপারে।"
কল্যাণ আরও বলেন, "নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে বলো, কিন্তু অমিত শাহের বিরুদ্ধে তো কিছু বলো না ভাই? রাজনাথ সিংহ, পীযূস গয়ালের বিরুদ্ধে বলো না কিছু। শুধু আদানি আর নরেন্দ্র মোদি। আর বিজেপি-র কোনও নেতা নেই বলার! নির্বাচন কমিশনে যে চিঠি পড়েছে, তাতে ওই সাংসদের সই নেই। আমি এই সাক্ষাৎকার দিতাম না। যে সাংসদ নির্বাচনের সময় বলেন...ইজ মাই এনার্জি, তাঁর কাছ থেকে কী ভদ্র ব্যবহার আশা করো! সেদিনই জানিয়েছি, ডেরেককে জানিয়েছে, সুদীপদাকেও জানিয়েছি। এটা হতে পারে কখনও! কোনও কারণে ঝগড়া হতেই পারে। কিন্তু সিআইএসএফ-কে ডেকে বলতে পারি গ্রেফতার করতে? সাংসদ হিসেবে নিজের ক্ষমতা করছে? তাহলে আমি কে? সিপিএম-এর বিরুদ্ধে লড়াই করে আসা লোক আমি। কোটায় আসা লোক নই আমি। ২০১১ সালের পরে এসে রাজনীতি করার লোক নই। দল যেদিন বলবে সব ছেড়ে দিয়ে চলে যাব। কিন্তু এসব অসভ্য় মহিলা সাংসদদের সহ্য করব না। দিদি একবার বলুক, আমি এখনই পদত্যাগ করে চলে যাব। মহিলা বলে এই নয়, সুন্দরী মহিলা বলে এই নয়, ফট ফট করে ইংরেজি বলতে পারে বলে যে কোনও পুরুষকে অসম্মান করতে পারে না। সবকিছু সীমা আছে।"
কল্যাণ জানান, তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। কিন্তু যাঁরা এসব করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। তাঁরা দলকে লজ্জায় ফেলেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললে তিনি চলে যাবেন, রাজনীতি করবেন না বলে জানান কল্যাণ। তিনি জানান, রাজনীতি তাঁর রুটি-রোজগার নয়। ৪০ বছর আগের ক্রিকেটার বলে গরম দেখাবেন কেউ, এটা হতে পারে না বলেও জানান কল্যাণ। তাঁর কথায়, "সংসদের ভিতর লড়াইটা আমি করি। আর কেউ করে না। আর কার গলার আওয়াজ শোনা যায়। একটা সেশনে যাব না, দেখে নেবে কী পারফর্ম্যান্স তৃণমূলের। শুধু মুর্দাবাদ, মুর্দাবাদ বললে হয় না।"
এর আগে কল্যাণের সমালোচনায় মুখ খোলেন সৌগত রা। তাঁর বক্তব্য ছিল, “৪ এপ্রিল আমাদের সাংসদরা নির্বাচন কমিশনে গিয়েছিলেন স্মারকলিপি দিতে। আমি মিছিলে যাইনি। বিজয় চকে অপেক্ষা করছিলাম। আমি চোখে দেখিনি। সত্যি বলে থাকলে দলের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। পুলিশকে বলার মতো ঘটবে কেন? সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় অসুস্থ ছিলেন। ওয়াকফ বিলের দিন ছাড়া আসতে পারেনি। ফলে সবটা ম্যানেজ করা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানানো হচ্ছিল না। কারও হাতে বেশি ক্ষমতা চলে গেলে অপব্যবহার করা হয়।”
এদিন সেই নিয়ে সৌগতকেও এদিন নিশানা করেন কল্যাণ। তাঁর বক্তব্য, "দলের ভাবমূর্তি অনেক কারণে নষ্ট হয়। সৌগত রায়ের জন্যও তো নষ্ট হয়েছে। নারদ কাণ্ডে টাকা খাওয়ার জন্য নষ্ট হয়নি। কাল একটা ভিডিও এসেছে, মিটিংয়ে বসে সিগারেট খাচ্ছে। তার জন্য ভাবমূর্তি নষ্ট হয়নি? অনেক হয়েছে। ২০১৭-'১৮ সালে যখন চোর চোর বলতো, পালিয়ে যেতে হতো তো! আমাকে বসে শুনতে হয়েছে। সৌগত রায়রাই ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। মহিলা সাংসদের জন্য যাঁদের বড্ড দরদ, তাঁরা ঠিক করছেন তো! দিদি বলে দিন, আমি চলে যাব। কিন্তু ওই মহিলাকে আমি সহ্য করব না। ১৮-২০ মিনিট বলতে হবে। সব চাপ নিতে প্রস্তুত। কিন্তু ওই সাংসদের চাপ সহ্য করব না। অনেকের হিংসে হয়েছে জনপ্রিয়তা দেখে, দিদি আমাকে ওয়াকফ বিল নিয়ে কথা বলতে মনোনীত করেছেন। আমি কী করব? সৌগত রায় সেদিনই বলেছেন, 'ওর খুব অন্যায়। সৌগত রায়ের কোনও ক্যারেক্টার আছে না কি? এখানে এক কথা, ওখানে আর এক কথা বলেন। এর পিছনে লাগা, ওর পিছনে লাগাই কাজ। ২০০১ থেকে আমাকে পছন্দ করেনি। এরা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির লোক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গালাগালি দিলে গায়ে লাগে না, প্রিয়রঞ্জনকে গালাগালি দাও, সৌগত রায়ের গায়ে লাগবে। নারদার চোর, টাকা তো নিয়েছে! ওর জন্য ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। চোরগুলো সব সুন্দর একজায়গায় চলে এসেছে। কেউ উপহার নিচ্ছে, কেউ লন্ডন যাচ্ছে, কেউ নারদে টাকা খাচ্ছে। দু'নম্বরি লোকেদের এক জায়গায় আসতে বেশি সময় লাগে না'।" কেন মহিলা সাংসদের নাম নিচ্ছেন না, জানতে চাইলে কল্যাণ জানান, তিনি নেবেন না নাম। সকলেই জানেন তিনি কে। তাঁর কথায়, "ইন্টারন্যাশনালি ফেমাস না! আমরা তো গ্রামের, বড় জোর দিল্লি পর্যন্ত। লন্ডন-আমেরিকা গেলে তবে না বুঝবে!"
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
