Kasba Rape Case: অদৃশ্য প্রভাবের জোরে প্রত্যেকবার রেহাই! একাধিক অভিযোগ কসবাকাণ্ডের মূল অভিযুক্তের বিরুদ্ধে
Monojit Mishra Background: আইন কলেজে গণধর্ষণকাণ্ডে ধৃত তৃণমূল নেতা মনোজিত মিশ্র যে একদিনে এই জায়গায় পৌঁছননি, তা তাঁর অতীত ঘাঁটলেই স্পষ্ট।

কলকাতা: শ্লীলতাহানি, ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত থেকে সিভিক ভলান্টিয়ারকে চড়। একের পর এক মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে কসবা গণধর্ষণকাণ্ডে ধৃত মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র বিরুদ্ধে। একাধিকবার জামিন অযোগ্য ধারায় মামলাও হয়েছে। কিন্তু কোনও অদৃশ্য প্রভাবের জোরে প্রত্যেকবারই রেহাই পেয়ে গেছেন মনোজিৎ। কলেজের পড়ুয়া, এমনকী অভিভাবকদেরও মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা।
মনোজিতের কীর্তি: আইন কলেজে গণধর্ষণকাণ্ডে ধৃত তৃণমূল নেতা মনোজিত মিশ্র যে একদিনে এই জায়গায় পৌঁছননি, তা তাঁর অতীত ঘাঁটলেই স্পষ্ট। তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অথচ অদৃশ্য় প্রভাবের জোরে তাঁর কিছুই হয়নি। ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত, শ্লীলতাহানি, সিভিক ভলান্টিয়ারকে চড়, হুমকি, মারধর, কলেজে থ্রেট কালচার চালানো, জামিন অযোগ্য় ধারাতেও মামলা হয়েছে। কিন্তু মাথার ওপরে প্রভাবশালীর হাত থাকলে, কার ঘাড়ে কটা মাথা যে কিছু করে নেবে।
সাউথ ক্যালকাটা ল' কলেজ প্রাক্তন ছাত্র তিতাস মান্না জানান, "২০১৬-১৭ সাল থেকেই মনোজিৎ মিশ্র কলেজের ত্রাস ছিল। পয়লা ডিসেম্বর (২০১৭) ৩০-৪০ জন ছেলে নিয়ে এসে আমরা যেকজন ছিলাম ছেলে মেয়ে আমরা ১০ জন মতো ছিলাম। আমাদের প্রত্যেকের উপর মারধর করে। মনোজিৎ মিশ্র যেটা বলবে সেটাই করতে হবে। মেয়ে হলে মেয়েদের সাথে অসভ্যতামি হবে, আর ছেলে হলে মারধর খেতে হবে নাহলে মিথ্যে অভিযোগে ফাঁসানো হবে। এর আগে এমনও ঘটনা রয়েছে কারও সাথে অ্যাটেম্পট টু রেপ যে জঘন্য অপরাধটা করেছে এরকম ঘটনা এর আগেও ও করেছে। সেই মেয়েটি তখন দাঁড়িয়ে মুখ খোলেনি।''
টালিগঞ্জ, কসবা, গড়িয়াহাট, থানায় একের পর এক মামলা হলেও বিশেষ প্রশ্রয়ে-মদতে স্বমহিমায় থেকেছেন মনোজিৎ ওরফে 'ম্যাঙ্গো' ভাই। ২০১৯ সালে গড়িয়াহাট থানায় মনোজিতের বিরুদ্ধে মারধর ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে জামিনঅযোগ্য ধারায় মামলা হয়। ২০২২ সালের মার্চ মাসে কসবা থানায় মনোজিতের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা হয়। এর পরের বছর ডিসেম্বরেও কসবা থানায় শ্লীলতাহানির অভিযোগে জামিনঅযোগ্য ধারায় মামলা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। সাউথ ক্যালকাটা ল' কলেজের এক প্রাক্তন ছাত্র জানান, "আমাকে লেক মলের পিছন থেকে কিডন্যাপ করেছিল। এত মেরেছিল যে ভেবেছিল মরে গেছি। রাস্তায় ফেলে চলে গিয়েছিল। পুলিশ প্রথমে আশ্বাস দিলেও কিছু হয়নি। ভয়ে ৯ মাস কলেজ যেতে পারিনি এই মনোজিতের জন্য। ডাইরেক্ট অ্য়াকসেস ছিল। নয়না ম্যাডাম সব ওর কথা শুনতো।''
২০১৮ সালে সাউথ ক্যালকাটা ল' কলেজেরই দুই ছাত্রী অভিযোগ জানিয়েছিলেন তৎকালীন পুলিশ কমিশনার, গড়িয়াহাট থানা, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও কলেজের প্রিন্সিপালকে।সেখানে দুই ছাত্রী লেখেন, মনোজিৎ মিশ্র ও তাঁর দলবলের অত্যাচারে প্রতিটি দিন ভয়ে কাটাতে হচ্ছে। যেকোনও মুহূর্তে কিছু হয়ে যেতে পারে। আমাদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে। আমরা যৌন নির্যাতনেরও শিকার হয়েছি ওদের হাতে। ২০২২ সালে মনোজিতের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে কলেজের ভাইস প্রিন্সিপালকে চিঠি দিয়েছিলেন আরেক ছাত্রী। চিঠিতে তিনি লেখেন, সব মেয়েদের পক্ষ থেকে আমি আবেদন জানাচ্ছি মনোজিৎ মিশ্রর কলেজে আসা বা কোনও অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া বন্ধ করা হোক। কারণ মেয়েরা অসুরক্ষিত ও নিরাপত্তার অভাব বোধ করে। সে এমন অনেক কিছু করেছে যাতে অধিকাংশ মেয়ে ওঁর উপস্থিতিতে অস্বস্তি বোধ করে।
কলেজের বাইরেও মারাত্মক দাপট ছিল মনোজিতের। অভিযোগ, চলতি বছর ১৩ এপ্রিল কলেজের পাশেই একটি এটিএমে ধূমপান করতে করতে ঢুকে পড়েন তিনি। বাধা দিতে গেলে নিরাপত্তারক্ষীকে বেধড়ক মারধর করা হয়। পুলিশ পৌঁছলে তাদের সামনেই এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে চড় মারে বলেও অভিযোগ। থানায় নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেও হম্বিতম্বি করে মনোজিৎ। এরপর জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতার করা হলেও পরের দিনই জামিন পেয়ে যান মনোজিত মিশ্র। আর এখন সেই তৃণমূল কর্মী মনোজিত মিশ্রের বিরুদ্ধেই গণধর্ষণের অভিযোগ।






















