Kashmir Attack: কাশ্মীরে ঘুরতে গিয়ে জঙ্গিদের হাতে খুন বঙ্গসন্তান ! আজ ফিরছে নিহত IB অফিসার মণীশের দেহ, লোকে লোকারণ্য ঝালদার বাড়িতে ..
Kashmir Attack Purulia Resident IB Officer Killed Body Returned Today: আজ সকালে রাঁচি বিমানবন্দরে পৌঁছয় IB অফিসার মণীশের কফিনবন্দি দেহ, নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পুরুলিয়ার ঝালদার বাড়িতে।

মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, পুরুলিয়া: কাশ্মীরে বেছে বেছে হিন্দুদের খুন, ঝালদায় ফিরছে নিহত IB অফিসারের দেহ। কাশ্মীরে বেড়াতে গিয়ে জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন গোয়েন্দা অফিসার মণীশরঞ্জন মিশ্র। আজ সকালে রাঁচি বিমানবন্দরে পৌঁছয় কফিনবন্দি দেহ। নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পুরুলিয়ার ঝালদার বাড়িতে।
আরও পড়ুন, পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিরা পর্যটকদের হামলা করতে পারে, 'এমন খবর ছিল..' ! প্রশ্নের মুখে নিরাপত্তা এজেন্সি
জঙ্গি হামলায় ঘরের ছেলের মৃত্যুতে প্রতিবাদ জানাতে আজ ঝালদা বাজার বন্ধ রাখার আবেদন জানিয়েছে ঝালদা নাগরিক মঞ্চ। শহরজুড়ে দোকানপাট বন্ধ, বাজার বসেনি। ঝালদার বেশ কয়েকটি জায়গায় এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে জাতীয় পতাকা নিয়ে বাইক মিছিল করছেন স্থানীয়রা। গত ২ বছর হায়দরাবাদে কর্মরত ছিলেন IB অফিসার মণীশ। স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে কাশ্মীরে ঘুরতে গিয়ে সন্ত্রাসের বলি হয়েছেন। ঝালদা শহরে মণীশের প্রতিবেশীরা এখন দেহ ফেরার অপেক্ষায়।
জঙ্গি হামলায় রক্তাক্ত কাশ্মীরের পহেলগাঁও। ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ২ জন বাঙালি। এদের একজন আমেরিকা প্রবাসী তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী। ছুটিতে দেশে ফিরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কাশ্মীরে ঘুরতে গেছিলেন। জঙ্গি হামলা প্রাণ কেড়েছে বেহালার এক বাসিন্দারও। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীও স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে গেছিলেন। ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বলতে এখনও শিউরে উঠছেন নিহতদের প্রিয়জনেরা। ভূস্বর্গ কাশ্মীর এখন মৃত্যু উপত্যকা। ভয়ঙ্কর জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের। কাশ্মীরে ঘুরতে গিয়ে প্রাণ গেছে দুই বাঙালির। এদেরই একজন বিতান অধিকারী। ফোনে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন নিহত পর্যটকের স্ত্রী। বলছেন, বেছে বেছে হিন্দুদের মারা হয়েছে।
বছর চল্লিশের বিতান ফ্লোরিডার থাকতেন। কাজ করতেন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায়।বিতানের পৈতৃক বাড়ি বেহালায়। বাড়ির ছোট ছেলে। জঙ্গিদের গুলিতে সন্তানের মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বৃদ্ধ দম্পতি। যে সন্ত্রাসের হাত থেকে বাঁচতে ১৯৬৪ সালে ওপার বাংলা থেকে এপারে এসেছিলেন বীরেশ্বর অধিকারী। এত বছর পর নিজের দেশে সেই সন্ত্রাসেরই বলি হল তাঁর সন্তান। নিহত বিতান অধিকারীর স্ত্রী সোহিনী অধিকারী বলেছেন, দিন কাউকে একজনকে দিন। বলছে, যারা যারা মুসলিম তারা সরে যান, কালমা পড়ুন, আর মেরে দিল। যাদের কপালে সিঁদুর দেখেছে...মেরে দিল।
নিহত বাঙালি পর্যটকের বাবা বীরেশ্বর অধিকারী বলেন, সব কিছু ছেড়ে এখানে এসে গেলাম পশ্চিমবঙ্গে। সেটা কী ভাবতে পেরেছি আবার ৫০-৬০ বছর পরে আমারই ঘরে আবার এরকম হয়ে গেল। আমি ভাবিনি এই দেশে সেটা (হিন্দু বিদ্বেষ) আসবে। লোকের মনোবৃত্তি কিছুই পাল্টায়নি, সব একই রয়ে গেল। মার্কিন মুলুকে থাকলেও শিকড় ভোলেননি বিতান। বৃদ্ধ মা-বাবার ভরণ পোষণের দায়িত্ব নিয়েছিলেন ছোট ছেলে। এবার কী হবে? ভেবে আকুল সন্তানহারা দম্পতি।
নিহত বাঙালি পর্যটকের মা মায়া অধিকারী বলেন, আমাদের কেউ নেই পৃথিবীতে। আমাদের দু’জনকে ওষুধপত্র, অন্ন জোগানো মেডিক্লেম, কখন কোথায় অপারেশন হবে না হবে...সব দূরে থেকে দেখত। কেন আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন ভগবান? নেতাজিনগর থানা এলাকায় বৈষ্ণবঘাটা লেনে বিতানের আত্মীয়ের বাড়িতে থাকতেন তাঁর স্ত্রী ও সাড়ে ৩ বছরের ছেলে। বিতানের বড় হয়ে ওঠা দুর্গাপুরে। বাবা ছিলেন দুর্গাপুর স্টিল প্লান্টের কর্মী। ছোটবেলায় পড়তেন দুর্গাপুরের হর্ষবর্ধন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর শিবাজি হাইস্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ২০০৮-এ দুর্গাপুরের B C রায় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে TCS-এ চাকরি নিয়ে আমেরিকায় পাড়ি দেন।খবর পেয়ে স্কুলের মাঠে জড়ো হয়েছিলেন বিতানের ছোটবেলার বন্ধুরা।
নিহত বিতান অধিকারীর সহপাঠী বিশ্বজিৎ বর্ধন বলেন, ফ্রেন্ড সার্কেলে কানেকশন রয়ে গেছে। যারা ক্লাস ওয়ান থেকে আজও পর্যন্ত টিম, ব্যাচ, সব সেম, এখনও পর্যন্ত সব একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া, ওঠাবসা সব কিছুই। হতে পারে সে বাইরে থাকে, কেউ লোকালে থাকে গ্রুপে আছে, আজও পর্যন্ত সবার সঙ্গে কমিউনিকেশন একইরকম রয়ে গেছে। কাশ্মীর ট্যুর কমপ্লিট করার পর কেরল ভিজিট করার কথা। কেরল ট্যুর করার পর ও (বিতান অধিকারী) ওয়াইফকে কলকাতায় রেখে ওর এখানে দুর্গাপুরে মিট করার কথা আমাদের সঙ্গে।
একসময় দুর্গাপুর স্টিল টাউনশিপের সেকেন্ডারি রোডে থাকতেন বিতানরা। পুরনো কথা মনে পড়ছে প্রতিবেশীদের।দুর্গাপুরের বাসিন্দা তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বিতান এখানেই মানুষ হয়েছে। খুব ভাল ছেলে। হাসিখুশি প্রাণোচ্ছল ছেলে। বাবা দুর্গাপুর স্টিল প্লান্টে চাকরি করতেন। তারপর ওরা কলকাতায় চলে গেছিলেন। বিতান অধিকারীর মতোই কাশ্মীরের জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন কলকাতার আরও এক বাসিন্দা। বেহালার সখেরবাজারের বাসিন্দা বছর বাহান্নর সমীর গুহ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী। স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে গেছিলেন কাশ্মীরে ঘুরতে। নিহতের স্ত্রী জানিয়েছেন, তাঁদের সামনেই স্বামীকে গুলি করে মারে জঙ্গিরা।
নিহত সমীর গুহর স্ত্রী শবরী গুহ বলেন, গোটা ১০-১৫ জন ওখানে ছিলাম আমরা। এলোপাথাড়ি গুলি...কোনও জিজ্ঞাসা নয়.. মেয়েকে আমার স্বামী ডাকছে জিয়া জিয়া...তুই শুয়ে পড়, শুয়ে পড়...মুখে মাস্ক লাগানো ছিল...বলছে, ইনকো ছোড়না নেহি, ইনকো ছোড়না নেহি। সবাই শুয়ে পড়ল, আমার স্বামীকে গুলি মারল। মরা স্বামীকে নিয়ে আসতে পারিনি ওখান থেকে। আমাদের আজ ফিরে যাওয়ার কথা ছিল কলকাতায়। নিহত সমীর গুহর শ্যালক সুব্রত ঘোষ বলেন, বলেছেন কাশ্মীর পাল্টেছে ভেবেছিলাম সেটা যে হয়নি তা বোঝাই গেল।জঙ্গি হামলা প্রাণ কেড়েছে প্রিয়জনের। তবু নিহতদের পরিবার চায়, দোষীদের কঠোর সাজা হোক, কিন্তু সবার আগে শান্তি ফিরুক ভূস্বর্গে।






















