TMC Wins KMC Election: ১১৪ থেকে ১৩৪, পুরভোটে নিজেকেই ছাপিয়ে গেল তৃণমূল
TMC Wins KMC Election: ২০১৫ সালের পুরভোটে ১১৪টি ওয়ার্ডে বিজয়ী হয়েছিল তৃণমূল। এ বার একধাক্কায় তা বেড়ে ১৩৪ হয়ে গিয়েছে। মাত্র ১০টি আসন যা-ও বা হাতছাড়া হয়েছে, দলের কোনও হেভিওয়েট নেতাই পরাজিত হননি।
কলকাতা: ভোটের দিন ক্ষণ নিয়ে টালবাহানা চললেও, মঞ্চ তৈরিই ছিল তৃণমূলের (TMC)। তৃতীয় বার বিধানসভায় ক্ষমতায় ফেরার পর পুরভোটে কোনও কিছুই তাঁদের দমাতে পারবে না বলে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন শীর্ষ নেতৃত্ব। পুরভোটে বিক্ষিপ্ত হিংসায় অস্বস্তিতে পড়তে হলেও, শহর কলকাতা (TMC Wins KMC) জুড়ে বুকে সবুজ ঝড়ের দাপটে ফের হাসি ফুটল তৃণমূল নেতৃত্বের মুখে। কারণ মোট ভোটের ৯০ শতাংশেরও বেশি ভোট তাঁদের ঝুলিতেই ঢুকেছে।
শুধু জয়লাভই নয়, বিধানসভা নির্বাচনের পর কলকাতা পুরভোটেও নিজেকেই ছাপিয়ে গিয়েছে তৃণমূল। এর আগে, ২০১৫ সালের পুরভোটে ১১৪টি ওয়ার্ডে বিজয়ী হয়েছিল তারা। এ বার একধাক্কায় তা বেড়ে ১৩৪ হয়ে গিয়েছে। মাত্র ১০টি আসন যা-ও বা হাতছাড়া হয়েছে, দলের কোনও হেভিওয়েট নেতাই পরাজিত হননি। একই সঙ্গে বিজেপি-কেও ৭ থেকে ৩-এ নামিয়ে আনতে পেরেছে তারা।
এ বারের যে ১০টি ওয়ার্ডে তৃণমূল জেতেনি, তার ৩টি গিয়েছে বিজেপি-র দখলে। ২টি করে ওয়ার্ডের দখল পেয়েছে বাম এবং কংগ্রেস। নির্দল প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন ৩টি আসনে। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ ইতিমধ্যেই তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। অর্থাৎ বৃহস্পতিবার পুরবোর্ড নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়, তৃণমূলের দখলে থাকা ওয়ার্ড সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর এ যাবৎ যত ভোট হয়েছে তৃণমূলের আমলে, সবেতেই শাসকদলের বিরুদ্ধে হিংসায় মদত জোগানোর অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচন সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। তৃণমূলের আমলে নির্বাচনী হিংসার (Poll Violence) উদাহরণ দিতে গিয়ে তাই বারংবার ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে আনেন বিরোধী শিবিরের নেতারা।
আরও পড়ুন: KMC Election Result 2021: 'মানুষের দাস হয়ে থাকব', জয়ের পর বললেন বিজেপি প্রার্থী সজল ঘোষ
এ বারেও হিংসার আশঙ্কা দানা বাঁধতে শুরু করেছিল শুরু থেকেই। সেই আবহেই দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। পুরভোটে যাতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি না হয়, তা নিয়ে সকলকে অভিষেক হুঁশিয়ারি দেন বলে জানা যায় দলীয় সূত্রে।
কিন্তু অভিষেকের হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও হিংসা এড়ানো যায়নি। রবিবার সকালে ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পর থেকেই দফায় দফায় অশান্তি এবং হিংসার অভিযোগ সামনে আসতে শুরু করে। কোথাও বুথে বিরোধীদের এজেন্টকে বসতে না দেওয়ার অভিযোগ ওঠে, কোথাও আবার ঠোটের কোণে রক্ত নিয়েই সংবাদমাধ্যমে শাসকদলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিতে দেখা যায় বিরোধী প্রার্থীকে। বিরোধী প্রার্থীর গাডি়তে ভাঙচুর চালানো, নাটিতে ফেলে মারধরের অভিযোগও সামনে আসে। গুলি চালানোর খবরও মেলে।
পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, স্বয়ং অভিষেককে বিবৃতি দিতে হয়। অভিযোগ প্রমাণ হলে কাউকে রেয়াত করা হবে মা, কড়া পদক্ষেপ করা হবে বলে বার্তা দেন তিনি। তাতে দলের অস্বস্তি কার্যতই বাড়ে। তবে তার কিছু ক্ষণ পর ভোট দিতে গিয়ে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) হিংসার অভিযোগই খারিজ করে দেন। সেই নিয়ে গত দু’দিন ধরে কম কাটাছেঁড়া হয়নি।
তাই এ দিন জয়ী হওয়ার পর সাবধানী শোনায় দলীয় নেতৃত্বকে। গুয়াহাটি থেকে মমতা বলেন, “এ বার আরও ভাল কাজ করতে হবে।” এ দিকে শহরে জয় উদযাপন করতে নেমে বিজয়ী প্রার্থীদের সতর্ক করতে দেখা যায় ফিরহাদ হাকিমকে (Firhad Hakim)। তিনি বলেন, “মানুষ বিশ্বাস করে বড় দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন কাঁধে। সেই বিশ্বাসের মান রাখতেই বিজয়ী প্রার্থীদের আরও বিনয়ী হতে হবে। প্রয়োজনে যেন তাঁদের পাশে পান মানুষ।”
তবে তৃণমূলের এই জয় নিয়ে অনেক প্রশ্নও থেকে যাচ্ছে। বিরোধীদের প্রশ্ন, জন জমর্থন রয়েছে বলেই কি একতরফা ভোট করানো যায়? দিনভর হিংসার অভিযোগ উঠে আসা সত্ত্বেও কেন চোখ বন্ধ করে থাকল নির্বাচন কমিশন? এমনকি বিজেপি-র ভোট কেটে বাম-কংগ্রেসের ভোট বাড়ার পিছনেও তৃণমূলে হাত দেখছে তারা। ফিরহাদ নিজেই জানিয়েছেন, বিজেপি-র চেয়ে বিরোধী হিসেবে বামেরা অনেক ভাল। তাতেই বাংলার রাজনীতি একদলীয় হয়ে ওঠার দিকে এগোচ্ছে কি না, এমন আশঙ্কাও দেখা দিচ্ছে।