Malda News: বন্যা কবলিত এলাকায় মাটি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্যের অভিযোগ, শুরু রাজনৈতিক তরজা
ইসলামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কয়েকটি গ্রাম এই নদীর পাশে অবস্থিত। সারা বছর নদীতে ভাঙন লেগে রয়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের আশঙ্কা, এইভাবে অবাধে মাটি কাটলে এলাকা অচিরেই নদীর তলায় চলে যাবে।
অভিজিৎ চৌধুরী, মালদা: বিহারের মাটি মাফিয়াদের (Land Mafia) দৌরাত্ম্যে জেরবার বিহার সীমান্তবর্তী মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা। অভিযোগ উঠেছে যে, স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের মদতেই মাটি মাফিয়ারা নিয়মিত নদী থেকে মাটি ও বালি পাচার করছে। এর ফলে বন্যার সময় বাড়ছে ক্ষয় ক্ষতির আশঙ্কা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মাটি মাফিয়াদের এই কাজে মদত রয়েছে স্থানীয় পুলিশ, প্রশাসনের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হরিশ্চন্দ্রপুর বিহার সীমান্তবর্তী লাগোয়া ইসলামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ফুলহর নদীর পাশে থাকা উত্তর ভাকুরিয়া অঞ্চল। প্রতি বছরই এই অঞ্চলে বন্যার জেরে বছরের বেশির ভাগ সময় জলের নিচে থাকে। সারা বছরই নদী ভাঙন লেগে রয়েছে। এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, বিহার থেকে মাটি মাফিয়ারা প্রত্যেক দিন এই এলাকায় আসছে। এবং ট্রাক্টর বোঝাই করে নদী থেকে বালি এবং মাটি তুলে নিয়ে বিহারে পাচার করছে। এই বিষয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে জুটছে প্রাণ-নাশের হুমকি। এমনকি এলাকার বাসিন্দাদের বন্দুক দেখিয়েও ভয় দেখাচ্ছে বিহারের মাটি মাফিয়ারা। এক প্রকার প্রশাসনের নজরদারিতে দিনে-দুপুরে এই মাটি পাচার চলছে হরিশ্চন্দ্রপুরের ইসলামপুর অঞ্চল থেকে। তাঁরা আরও জানাচ্ছেন, কোথাও অভিযোগ দায়ের করেই কোনও সুরাহা মিলছে না। বিহারের মাটি মাফিয়াদের প্রত্যক্ষ মদত দিচ্ছেন ইসলামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান এবং পঞ্চায়েত সদস্য ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের একাংশ। দিনের আলোয় এলাকায় পাহারারত সিভিক পুলিশের সামনে বেআইনি ভাবে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে নদী থেকে। কাটমানির বিনিময়ে বাংলার মাটি বিহারের হাতে তুলে দিচ্ছেন স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। এতে নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য।
আরও পড়ুন - Malda: চারটে আগ্নেয়াস্ত্র সহ মালদায় এসটিএফের জালে ১
ফুলহর নদী তীরবর্তী অঞ্চল এলাকায় বন্যাপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। ইসলামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কয়েকটি গ্রাম এই নদীর পাশে অবস্থিত। সারা বছর নদীতে ভাঙন লেগে রয়েছে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ঠিক নদীর পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলি থেকেই দিনের বেলাতেই প্রকাশ্যে মাটি এবং বালি কেটে নিয়ে পাচার করে দেওয়া হচ্ছে। এলাকার বাসিন্দাদের আশঙ্কা, এইভাবে অবাধে মাটি কাটলে এলাকা অচিরেই নদীর তলায় চলে যাবে। যদিও দিনে-দুপুরে মাটি পাচারের ঘটনার কথা জানা নেই বলে জানিয়েছেন ইসলামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মাসুমা বিবির স্বামী আবুল কালাম আজাদ। অন্যদিকে মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন কিছু দিন আগেই নিজ দলের লোকদের বিরুদ্ধে মাটি পাচারের ব্যাপারে আঙুল তুলেছেন। ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে তৃণমূল-বিজেপির চাপানউতোর। এই দুর্নীতিবাজ সরকারকে অবিলম্বে জনতা উচ্ছেদ করবে বলে খোঁচা বিজেপির। অন্যদিকে পাল্টা সাফাই তৃণমূলের। তাদের দাবি, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ রয়েছে যেকোনও দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করার ও সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার। তাই এই ক্ষেত্রেও যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে, তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শাসকদলের একাংশ।
কয়েক দিন আগেই একটি সভায় মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন অভিযোগ তুলেছিলেন যে, দলের কিছু লোক মাটি পাচারের সঙ্গে যুক্ত। এদের মাধ্যমে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে মাটি অবৈধ ভাবে কেটে নেওয়া হচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। তার কিছুদিন পরে জেলার আর এক বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায় মাটি মাফিয়াদের বাড়বাড়ন্তের পিছনে এলাকার পুলিশ প্রশাসনকে দায়ী করেছিলেন। আর এরই মধ্যে হরিশ্চন্দ্রপুরে মাটি পাচারে বিহার যোগ সামনে আশায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকা জুড়ে। স্থানীয় বাসিন্দা অনুজ মন্ডল বলেন, 'ইসলামপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার উত্তর ভাকুড়িয়া এলাকায় বিগত ৫ মাস ধরে বিহারের মাটি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই নদীর পাড় থেকে অবৈধ ভাবে তারা মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ও সদস্য এবং পুলিশ প্রশাসনের যোগসাজশে তারা এটা করছে। প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি। আমরা প্রতিবাদ করলে আমাদেরকে প্রাণে মারার হুমকি দিচ্ছে। কিন্তু প্রতিদিন অবৈধভাবে এই মাটি পাচারের ফলে বর্ষার মৌসুমে নদী ভাঙ্গনের ফলে আমাদের অশেষ দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আমরা চাই অবিলম্বে বিহারের মাটি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য বন্ধ হোক, আমরা শান্তিতে থাকতে চাই।' আর এক বাসিন্দা বীরেন মণ্ডল বলছেন, 'প্রতিনিয়ত মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার ফলে বর্ষার সময়ে বন্যা হয়ে সব কিছু ভেসে যায়। কেউ কোনও কথা শুনছে না। পঞ্চায়েত প্রধান, সদস্য, সঙ্গে পুলিশের পুরো মদত রয়েছে । নিজের জমি কাটছে বলে মাটি পাচার করছে। তাই বন্যার সময়ে আমাদের জলের জলায় থাকতে হয়।' যদিও দিনে-দুপুরে মাটি পাচারের ঘটনার কথা জানা নেই বলে জানিয়েছেন ইসলামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মাসুমা বিবির স্বামী আবুল কালাম আজাদ। তিনি জানাচ্ছেন, এই ধরনের অভিযোগ তিনি শোনেননি। যদি ঘটনাটা প্রকৃতই হয়ে থাকে তাহলে এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন। আর এই কাজে দলের কেউ জড়িত থাকলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হরিশ্চন্দ্রপুর থানা কুমেদপুর ফাঁড়ির অফিসার ইনচার্জ গিয়াসউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কোন প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লক তৃণমূল সভাপতি হজরত আলী বিষয়টি নিয়ে বলেন, "বিহারে বাংলা থেকে মাটি পাচারের যে অভিযোগ উঠেছে তা আমরা কোন ভাবেই বরদাস্ত করব না। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি কোন পঞ্চায়েত প্রধান ও সদস্য এতে ইন্ধন দিচ্ছেন কি না। কারণ, আমাদের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ রয়েছে যে কোন দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করার ও সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার।' বিজেপির মালদা জেলার সম্পাদক কিষাণ কেডিয়া এই অবৈধ মাটি পাচারের ব্যাপারে সরাসরি অভিযোগ করে বলেন, উত্তর ভাকুরিয়ার নদীর পাড় থেকে নিয়মিত অবৈধ ভাবে মাটি কেটে বিহারে পাচার করা হচ্ছে। এই মাটি মাফিয়াদের স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান ও সদস্যরা সহযোগিতা করছে। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনেরও মদত রয়েছে। তৃণমূল নেত্রী তথ্য মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন কিছু দিন আগেই নিজ দলের লোকদের বিরুদ্ধে মাটি পাচারের ব্যাপারে আঙুল তুলেছেন। এই দুর্নীতিবাজ সরকারকে অবিলম্বে জনতা উচ্ছেদ করবে।'