Mamata Banerjee UK Visit: লন্ডনে বক্তব্য রাখার সময় প্রশ্নের মুখে পড়ে সমালোচনা যেভাবে সামলালেন মমতা, বললেন 'চকলেট খাওয়াব'
Mamata Banerjee Speech: গোটা অশান্তির বিষয়টি 'ইগনোর' করলেও বক্তব্য শেষে তিনি এটাও জানান, 'দিদি কাউকে গ্রাহ্য করে না। সব শেষে হেসে এও বলেন, 'আমাকে কিন্তু ওঁরা এরপর মিস করবে'।

কলকাতা: বর্তমানে লন্ডন সফরে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির কেলগ কলেজে বক্তৃতাও দিয়েছেন তিনি। কেলগ কলেজ ক্যাম্পাসও ঘুরে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী। বক্তৃতা দেওয়ার সময় মমতা তুলে ধরেন তাঁর রাজনৈতিক সংগ্রাম, বাংলার 'শিল্পবান্ধব' প্রেক্ষাপট, শিক্ষাব্যবস্থা, 'এগিয়ে বাংলার' বিভিন্ন প্রকল্প, কোভিড পরবর্তী সময়ে বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা, গ্রামীণ বিকাশ, নারী ক্ষমতায়নের নানা দিক।
কেলগ ইউনিভার্সিটিতে বক্তব্য পেশের সময় মমতা বলেন, 'ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী সম্পর্ক। আমাদের ছাত্ররা অত্যন্ত প্রতিভাবান, ছাত্ররাই সমাজের ভবিষ্যৎ। বাংলাতেও বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষরা থাকেন। বাংলায় জল, জঙ্গল, পাহাড় সব আছে। অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সব ধর্মকে ভালবাসি, আমরা সবাই একসঙ্গে থাকি। ক্ষমতায় থেকে আমি বিভাজন করতে পারি না।'
টেমস পাড়ে মমতায় কথায় উঠে আসে গঙ্গার পাড়ের এ রাজ্যের কথা। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, 'নারীদের ক্ষমতায়নই আমাদের লক্ষ্য, আমরা কন্যাশ্রী দিই। স্বাস্থ্য সাথী দিই, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দিই । বাংলায় স্কলারশিপেরও ব্যবস্থা আছে। বাংলায় সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা বিনামূল্যে পাওয়া যায়। পিছিয়ে পড়া শ্রেণিকে সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে। বাংলার বাড়ি প্রকল্পে ঘর করে দিচ্ছে সরকার। বাংলায় ৯৭টি সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প রয়েছে। বাংলায় একের পর এক শিল্প আসছে। কর্মসংস্থানের জন্য সেরা কলকাতা'।
এরপরই উঠে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতায় উঠে আসে বাংলায় শিল্প প্রসঙ্গের কথা। মমতা বলেন, 'প্রতি বছর বাংলায় প্রচুর শিল্প প্রস্তাবনা আসছে। নিয়মিত বাণিজ্য সম্মেলন হয় বাংলায়। এখনও পর্যন্ত ২৩ লক্ষ কোটি টাকার শিল্প প্রস্তাবনা এসছে রাজ্যে। আগের বছর পর্যন্তও ১৯ লক্ষ কোটি শিল্প প্রস্তাবনা এসছিল রাজ্যে। তার মধ্যে ১৪ লক্ষ কোটি টাকার শিল্প ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। চিন্তা করবেন না, আপনার ইউকে বিসিকে জিজ্ঞেস করুন, কত টাকা বিনিয়োগ করেছে তারা। আপনার দেশ থেকেও আমাদের রাজ্যে বিনিয়োগ করা হয়েছে। সেটা আইবিএম হতে পারে, টাটা হতে পারে, উইপ্রো হতে পারে, ইকোনমিক করিডরগুলোও হতে পারে, দেউচা পাচামি হতে পারে।'
বিনিয়োগ টেনে বঙ্গে লক্ষ্মীলাভের প্রসঙ্গ উঠতেই হাততালিতে ফেটে পড়ে দর্শকাসন। মমতা খুশি হয়ে স্বভাবোচিত ভঙ্গিতে বলে ফেলেন, 'আপনারা আমায় স্বাগত জানাচ্ছেন। আমি খুব খুশি। সবাইকে মিষ্টি দেব।' কিন্তু এরপরই আচমকাই কাটে তাল। বক্তব্য পেশের মাঝেই যেন ওঠে 'বিরোধী সুর'। প্রথমে কিছুটা হকচকিয়ে গেলেও 'সুর চড়াতে' আমন্ত্রণ জানান মমতা। সাফ বলেন, 'আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আপনারা একটু জোরে বলুন যাতে আমি শুনতে পারি। আপনারা জোরে কথা বললে আমি কিছু মনে করব না'।
আর জি কর থেকে শিল্পায়ন, সাম্প্রদায়িকতা, পর পর প্রশ্নের মুখে মুখ্যমন্ত্রী। আর জি কর কাণ্ডে রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে শ্রোতামহল থেকে প্রশ্ন উঠতেই মমতা বলেন, 'এই বিষয়টি এখনও বিচারাধীন। এটা কেন্দ্রীয় সরকার দেখছে। রাজনীতিকরণের চেষ্টা করবেন না। সেটা করতে হলে আমার রাজ্যে আসুন। আপনারা বিরোধিতা করতেই পারেন। এতে আমি আরও উৎসাহ পাই।'
তবে এখানেই থেমে থাকেনি গোটা বিষয়টি। এরপর মুখ্যমন্ত্রীকে মিথ্যাবাদী বলেও আক্রমণ শানানো হয়। সুর নরম করেই পরিস্থিতি সামাল দেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রধান বক্তার মঞ্চ থেকেই তাঁর সহাস্য জবাব, 'এভাবে মিথ্যে বলবেন না ভাই। এরকম ভাবে বলবেন না। আর আমি মিথ্যে কথা বলি না।'
প্রসঙ্গত, Students' Federation of India - United Kingdom এর সদস্যরা গিয়ে মমতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় ওই দর্শকাসন থেকেই। সোশাল মিডিয়া ফেসবুক পোস্টে দাবি, 'তিনি মিথ্যেগুলো বলে যাচ্ছিলেন, প্রকাশ্যে তার বিরোধিতা করি। ছাত্র এবং শ্রমজীবী মানুষের সমর্থনে, মমতা বন্দোপাধ্যায় ও তৃণমূলের দুর্নীতিপরায়ণ, অগণতান্ত্রিক শাসকের বিরুদ্ধে SFI-UK আওয়াজ তুলছে'।
পরিস্থিতি কিছুটা 'বেনজির', কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে উঠলে সমালোচকদের উদ্দেশে মমতা বলেন, 'আপনাদের নেতারা যখন আসবেন, তখন কিন্তু একই জিনিস হতে পারে। এটা মনে রাখবেন। এটা ঠিক নয়। আপনারা আমার ভাই-বোনেরা এখানে রাজনীতি করবেন না। এখানে রাজনীতি করা খুব সহজ, এখানে ন্যারেটিভ তৈরি করা খুব সহজ, নেগেটিভ কাজ করা খুব সহজ, প্লিজ আমার অতিবাম বন্ধুরা এবং বাম বন্ধুরা
এবং কিছু সাম্প্রদায়িক শক্তিরা, আপনারা এরকম করবেন না। এটা ঠিক নয়। আপনারা আপনাকে অপমান করছেন। আপনারা এই ইউনিভার্সিটিকেও অপমান করছেন।'
এরপরও অশান্ত পরিস্থিতিতে উত্তাপ কমেনি। প্ল্যাকার্ড- স্লোগান-প্রশ্নের তির উড়ে আসে। একসময় মঞ্চে উপস্থিত ইউনিভার্সিটির কর্মকর্তারা এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে কথাও বলেন। যদিও স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, 'এটা এই দলের স্বভাব। আমি যেখানেই যাই এসব করে। এটা এমন কিছু বিষয় নয়'। বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে মাইকে বলেই ফেলেন, 'আমি আপনাদের ও আপনাদের দর্শনকে চকোলেট খাওয়াব'।
এরপর আরও কিছুক্ষণ বিষয়, প্রেক্ষাপট ব্রিটেনের ওই মঞ্চে তুলে ধরেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। গোটা অশান্তির বিষয়টি 'ইগনোর' করলেও বক্তব্য শেষে তিনি এটাও জানান, 'দিদি কাউকে গ্রাহ্য করে না। দিদি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মতো কাজ করে। আমাকে ধরতে পারলে ধরুন, কিন্তু আমার সঙ্গে লড়তে আসবেন না।' তবে সব শেষে হেসে এও বলেন, 'আমাকে কিন্তু ওঁরা এরপর মিস করবে'। হাসির রোল ওঠে দর্শকাসনে।
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
