(Source: Poll of Polls)
Paschim Bardhaman News: দুর্গাপুরে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্প, আবর্জনার স্তূপে নাজেহাল স্থানীয়রা
Durgapur: বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে থাকায় স্থানীয় মানুষজন সমস্যায় পড়েছেন। আবর্জনার স্তূপে তাঁদের নাকাল হতে হচ্ছে। এ নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। শাসক দলকে আক্রমণ বাম-বিজেপির।
মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের আর্থিক সাহায্যে তৈরি হওয়া সরকারি বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্প। এর জেরে নোংরা আবর্জনার স্তূপের দুর্গন্ধে এখন টেকা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় মানুষের। এর দায় নিয়ে দড়ি টানাটানি দুর্গাপুর পুরসভা আর জেমুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে। নরক যন্ত্রণার মধ্যে পড়ে দুর্গাপুরের শঙ্করপুর সহ আশেপাশের এলাকার মানুষ। যা নিয়ে সুর চড়িয়েছে বিরোধীরা।
বাম পুরবোর্ডের আমলে কেন্দ্রের প্রকল্পের টাকায় জেমুয়া পঞ্চায়েতের অধীনে শঙ্করপুর এলাকায় একটি বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্পের সূচনা হয়। কথা ছিল শহরের সমস্ত বর্জ্য এক জায়গায় করে এই প্লান্টে আনা হবে, যেখানে পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য এক করে সেগুলি রিসাইক্লিং করে জৈব সার তৈরি হবে। এতে যেমন পুরসভার বিকল্প আয়ের পথ বেরোবে ঠিক তেমনই পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রেহাই পাবে দুর্গাপুরের মানুষ। কেন্দ্রের জওহরলাল নেহরু আরবান মিশন প্রকল্পের অর্থে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের শর্ত অনুযায়ী মুম্বইয়ের নামে একটি বেসরকারি সংস্থাকে টেন্ডার দিয়ে এই কাজের সূচনা করেন রাজ্যের তৎকালীন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। তবে কয়েক বছর পরেই বন্ধ হয়ে যায় এই প্রকল্প। আর এই সুযোগে দুষ্কৃতীরা প্লান্টের দামী যন্ত্রাংশ চুরি করে নিয়ে পালায়। দিনে দুপুরে চুরি হয়ে যায় বেশ কয়েক বিঘা জমির ওপর তৈরি হওয়া শঙ্করপুর গ্রামের সেই সরকারী প্রকল্পের বেশ কিছু যন্ত্রাংশ। এই প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন আবর্জনা স্তূপ জমেছে শঙ্করপুর গ্রামে। নোংরা আবর্জনার স্তূপ এখন শঙ্করপুর, টেটিখোলা, আররা, কালীগঞ্জ সহ আরও বেশ কয়েকটি গ্রামের বেশ কয়েক হাজার মানুষের কাছে নরক যন্ত্রণা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শীতকাল, বর্ষাকালে যেমন দুর্গন্ধ ছড়ায়, ঠিক তেমনই প্রচন্ড গরমে মাঝে মাঝে ওই আবর্জনার স্তূপে আগুন লেগে যায়। ফলে বাড়ে বিপদের আশঙ্কা।
এতেই যে যন্ত্রণার শেষ তা নয়। শঙ্করপুর গ্রামের ভিতর দিয়ে অবিরাম চলছে দুর্গাপুর নগর নিগমের বর্জ্য বহনকারী গাড়ি। আর এতে বাড়ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। সবমিলিয়ে এখন সরকারি এই প্রকল্পকে ঘিরে এক অজানা আতঙ্ক গ্রাস করে বসে রয়েছে গোটা এলাকার মানুষকে। একদিকে দুর্গন্ধ, অন্যদিকে নির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাব, দুই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে স্থানীয়রা জেমুয়া পঞ্চায়েতকে বিষয়টি বারবার জানিয়েছেন, স্মারকলিপিও দিয়েছেন। কিন্ত কোনও কাজ হয়নি বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ। এখন গোটা সরকারি প্রকল্পকে বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
তৃণমূল পরিচালিত দুর্গাপুর ফরিদপুর পঞ্চায়েত সমিতির বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ স্বাধীন ঘোষের অভিযোগ, দুর্গাপুর নগর নিগমের প্রাক্তন মেয়র দিলীপ অগস্তিকে অনেকবার এই সমস্যার কথা জানানো হয়েছিল। দুর্গাপুর নগর নিগম প্লান্ট ফের শুরু করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু আজও সেই কাজ হয়নি।
যদিও স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে মানুষের যন্ত্রণার কথা দুর্গাপুর নগর নিগমকে কিছুই জানানো হয়নি বলে দাবি তৃণমূল পরিচালিত দুর্গাপুর নগর নিগমের চেয়ারম্যান মৃগেন পালের। অস্বস্তি এড়াতে দায় এড়িয়ে এই অচলবস্থার জন্য পূর্বতন বাম পরিচালিত নগর নিগমকে দায়ী করেছেন মৃগেন পাল।
এই অভিযোগ অস্বীকার করে সিপিআইএমের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকারের পাল্টা অভিযোগ, তৃণমূলের অন্দরের দ্বন্দ্বের জন্যই এই সরকারি প্রকল্প বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। দুর্গন্ধে অতিষ্ট এলাকার মানুষ। তৃণমূলের পুরবোর্ডে থাকার কোনও অধিকার নেই বলেও দাবি করেন এই সিপিআইএম নেতা।
সুর চড়িয়েছে বিজেপি নেতৃত্বও। রাজ্য বিজেপির অন্যতম সম্পাদক ও দুর্গাপুর পশ্চিমের বিধায়ক লক্ষণ ঘোড়ুই অভিযোগ করেছেন, গোটা রাজ্য যখন অচলবস্থায় রয়েছে, তখন দুর্গাপুর শহরের এই সরকারি প্রকল্পের অবস্থাও একই।
এখন এই নরক যন্ত্রণার হাত থেকে মুক্তির পথ খুঁজছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু কবে মিলবে এই অবস্থা থেকে মুক্তি? উত্তর একমাত্র সময়ই দিতে পারে।