Purba Bardhaman: পায়ে চক নিয়েই শিক্ষাদান, পথ দেখিয়েছিলেন প্রাথমিক শিক্ষক
Purba Bardhaman News: স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু হাতই তো নেই, তাহলে? তখন বটগাছের মতো ছায়া দিয়েছিলেন গ্রামের স্কুলের প্রধান শিক্ষক।
![Purba Bardhaman: পায়ে চক নিয়েই শিক্ষাদান, পথ দেখিয়েছিলেন প্রাথমিক শিক্ষক Purba Bardhaman, Jagannath bauri dosent have hands, teaches with the help of his legs, know the story of his struggle Purba Bardhaman: পায়ে চক নিয়েই শিক্ষাদান, পথ দেখিয়েছিলেন প্রাথমিক শিক্ষক](https://feeds.abplive.com/onecms/images/uploaded-images/2022/07/01/14a4de0d02eb1abf195385452a6723d7_original.jpeg?impolicy=abp_cdn&imwidth=1200&height=675)
কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান: ছোটবেলায় যখন জন্ম হয়েছিল, সন্তানকে দেখে প্রবল আশঙ্কায় বুক কেঁপে উঠেছিল বাউড়ি দম্পতির। কারণ সদ্যোজাত সন্তানের দুটো হাতই ছিল না। ভয় পেলেও পরম মমতায় বুকে আগলে রেখেছিলেন। আর ঠিক করেছিলেন যাই হয়ে যাক পড়াশোনাটা করাতেই হবে। সেই মতোই স্কুলেও ভর্তি করেছিলেন। কিন্তু হাতই তো নেই, তাহলে? তখন বটগাছের মতো ছায়া দিয়েছিলেন গ্রামের স্কুলের প্রধান শিক্ষক। পায়ে কলম ধরিয়েছিলেন। তারপর থেকেই আর পিছনে ফিরে তাকায়নি সেদিনের সেই শিশু। আজ ঠিক ওভাবেই পায়ে কলম ধরেন। শুধু জায়গা বদলে গিয়েছে। কারণ এখন তিনি থাকেন ব্ল্যাকবোর্ডের সামনে, আর তাঁর সামনে বসে থাকে সারি সারি প্রাথমিকের পড়ুয়া। তিনি জগন্নাথ বাউড়ি, পূর্ব বর্ধমানের (Purba Bardhaman) জয়কৃষ্ণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (Primary School) ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।
পূর্ব বর্ধমানেরই আউসগ্রামে বেলুটি গ্রামের বাসিন্দা জগন্নাথ বাউড়ি। জন্ম থেকেই তাঁর দু'হাত নেই। বাবা জনমজুরির কাজ করতেন। ছোট থেকেই কপালে ত্রিশুলের মতে চিহ্ন ছিল, তাই তাঁর মা নাম দিয়েছিলেন শিবা। ছোটবেলায় পাশের গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়েছিল তাঁকে। সেখানেই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পড়ানোর এক উপায় বের করেছিলেন। ছোট্ট শিবার পায়ে কলম ধরিয়ে লেখানোর অভ্যাস শুরু করেন সেই শিক্ষক। জগন্নাথ বাউড়ি জানাচ্ছেন, হয়তো পুরীর জগন্নাথ দেবের কথা মনে করেই ওই শিক্ষক তাঁর নাম রাখেন জগন্নাথ। সেই থেকেই বেলুটি গ্রামের শিবা হয়ে ওঠেন জগন্নাথ। ওই স্কুল থেকে প্রাথমিকের গণ্ডি পার করে সিলুট বসন্তপুর হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং তারপর রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন জগন্নাথ। তারপর দীর্ঘ লড়াইয়ের ফল পান তিনি। ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে বাড়ি থেকে ২ কিমি দূরে জয়কৃষ্ণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি পান। এখন সেখানেই তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন।
সংশয় কাটিয়েছেন নিষ্ঠা দিয়েই:
প্রথম প্রথম স্থানীয় গ্রামবাসীদের মনে সংশয় ছিল দুই হাত ছাড়া কী ভাবে স্কুলের ক্লাস নেবেন তিনি? কিন্তু জগন্নাথ বাউড়ির পড়ানো দেখে সমস্ত সংশয় কেটে গিয়েছিল তাঁদের। খুদে পড়ুয়াদের পড়ানোর প্রতি তাঁর একান্ত নিষ্ঠা দেখেছেন গ্রামবাসীরা। ক্লাসরুমে ব্ল্যাকবোর্ডে পা দিয়েই লেখেন তিনি। এমনকি ফোন ডায়ালও করেন পায়ের আঙুল দিয়ে। জগন্নাথবাবুর সহকর্মী সঞ্জয় ঘোষ বলেন, 'আর পাঁচজন শিক্ষকের থেকে জগন্নাথবাবুর দক্ষতা কোনও অংশে কম নয়। তাঁর বোর্ড ওয়ার্ক অবাক করে দেওয়ার মতো।'
পরিবারের ভরসা:
শুধু শিক্ষকতাই নয়, সংসারেও তিনি এখন বটগাছের মতোই। শিক্ষকতার আয়েই চলে ৮ জনের সংসার। বাড়িতে রয়েছেন বাবা, মা, স্ত্রী ও দুই সন্তান। তাঁর দিদি মারা গিয়েছেন। তারপর থেকে ভাগ্নে-ভাগ্নির দায়িত্বও তাঁর কাঁধে। বাবা লক্ষ্মণ বাউড়ি জনমজুরি করতেন। চাকরি পাওয়ার পর বাবাকে আর জনমজুরি করতে দেন না জগন্নাথবাবু। স্ত্রী লক্ষীদেবী ও মা সুমিত্রাদেবী গৃহবধূ। দুই সন্তান এখন স্কুল পড়ুয়া।
তবে এরপরেও একটা আক্ষেপ রয়েছে তাঁর। যে দেবতার নামে তাঁর নাম। সেই দেবতার রথ টানার ইচ্ছে রয়েছে, কিন্তু তিনি সেটা পারেন না। সেই আক্ষেপের কথাও খোলাখুলিই বললেন জগন্নাথ বাউড়ি।
আরও পড়ুন: করোনা-আতঙ্ক কাটিয়ে ৩৫০ বছরের পুরনো রথ উৎসবে মাতোয়ারা বিষ্ণুপুরের মাধবগঞ্জ
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
![ABP Premium](https://cdn.abplive.com/imagebank/metaverse-mid.png)