Rath Yatra 2025: মহাসমারোহে আজ রথযাত্রা মাহেশে, সকাল থেকেই ভক্তদের ভিড়, কটায় টান পড়বে দড়িতে ?
Mahesh Rath Yatra 2025: আজ সকাল থেকেই উৎসব মুখর পরিবেশ গোটা মাহেশ চত্বর জুড়ে

সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, সোমনাথ মিত্র: হুগলি: নবযৌবন ও নেত্র উৎসবের পর আজই গর্ভগৃহ থেকে বেরিয়ে ভক্তদের দর্শন দিয়েছেন প্রভু জগন্নাথ। সকাল থেকেই শুরু হয়েছে ভক্ত সমাগম। ৬২৯তম বর্ষে পদার্পণ করল পৃথিবীর দ্বিতীয় প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী মাহেশ রথযাত্রা উৎসব। চলছে বিশেষ পুজোপাঠ।
আরও পড়ুন, পণ্যবাহী গাড়ির ধাক্কায় চালক-সহ ৩ স্কুটার আরোহীর মৃত্যু, রথের সকালে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘোলায় !
এবারে রথযাত্রা উৎসব বঙ্গে ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। পুরীর পরেই রথযাত্রায় মাহেশের নাম উঠে আসে। কিন্তু কয়েক মাস আগে দিঘায় জগন্নাথ মন্দির তৈরির পর সেখানেও ভক্ত সমাগম বৃদ্ধি পেয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে সেখানে উপস্থিত থেকে আজ রথযাত্রার সূচনা করবেন। তবে ৬২৯ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য, পরম্পরা ও সংস্কৃতি নির্ভর মাহেশ রথযাত্রা উৎসবে ভাটা পড়েনি এতটুকুও। ইতিমধ্যেই মাহেশ জগন্নাথ মন্দির স্থান পেয়েছে পর্যটন মানচিত্রে।
সম্প্রতি মন্দিরের চূড়ায় বসানো হয়েছে "নীল চক্র"। আজ সকাল থেকেই উৎসব মুখর পরিবেশ গোটা মাহেশ চত্বর জুড়ে। বিকাল ৪টে মাহেশে শুরু হবে রথের দড়িতে টান। জি টি রোড ধরে মাহেশ জগন্নাথ মন্দির থেকে ১ কিলোমিটার দূরে মাসির বাড়িতে পৌঁছতেই কয়েক ঘন্টা সময় অতিবাহিত হয়। দূরদূরান্ত থেকে ভক্তের ভিড় উপচে পড়ে রাস্তার দু ধারে। এই রথযাত্রা কে ঘিরে এক পুণ্যতীর্থ ভূমিতে পরিণত হবে হুগলির মাহেশ।
কথিত আছে, কয়েক শতাব্দী আগে সাধক ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী ঘুরতে ঘুরতে পুরীতে গিয়ে পৌঁছন। তার ইচ্ছা হয় প্রভুকে দর্শন করে ভোগ নিবেদন করার কিন্তু সেখানকার সেবাইতরা তাকে বাধা দেওয়ায় মনের দুঃখে প্রাণ বিসর্জন করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সেই সময় হঠাৎ প্রভু তাকে স্বপ্ন দিয়ে নির্দেশ দেন ফিরে যাবার জন্য এবং বলেন মাহেশের গঙ্গা তীরে অপেক্ষা করতে। সেখানেই একদিন একটি নিম কাঠ ভেসে আসবে, সেই কাঠের টুকরো দিয়ে তার বিগ্রহ তৈরি করে ভোগ নিবেদন করার জন্য আদেশ দেন।
প্রভুর নির্দেশ মতোই সাধক ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী ফিরে আসেন এবং মাহেশের গঙ্গা তীরে অপেক্ষা করতে থাকেন। তারপর সত্যিই দেখা মেলে সেই কাঠের। তা দিয়ে তিনি জগন্নাথ বলরাম শুভদ্রার মূর্তি তৈরি করেন এবং ভোগ নিবেদন শুরু করেন। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সেই মূর্তি আজও বিরাজমান। পুরীতে ১২ বছর অন্তর নব কলেবর এর মাধ্যমে জগন্নাথ দেবের নতুন করে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়। কিন্তু মাহেশ এ জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রার ১৪ দিন পর রথযাত্রার দুদিন আগে নবযৌবন উৎসবের মাধ্যমে জগন্নাথের প্রাণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অভিষেক হয় প্রত্যেক বছর।
এ বছর ও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সেই দিন রাজবেশ ধারণ করে ভক্তদের দর্শন দেন প্রভু। পরের দিন অর্থাৎ গতকাল হয়েছে নেত্র উৎসব । আর আজ রথযাত্রা উৎসব। রথে চেপে মাসির বাড়ি যাবেন প্রভু জগন্নাথ ও তার ভাই বোন। তাই সকাল সকালই গর্ভগৃহ থেকে বাইরে বেরিয়ে এসেছেন জগন্নাথ , বলরাম,সুভদ্রা। চলছে বিশেষ পুজো পাঠ।
চৈতন্য মহাপ্রভু থেকে রামকৃষ্ণ,সারদা দেবী থেকে গিরিশ ঘোষ সহ বহু মনীষীর পদধূলিতে ধন্য এই জগন্নাথ মন্দির । সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্রের স্মৃতি বিজারিত এই রথযাত্রা। এখানকার রথে ও রয়েছে বিশেষ বৈশিষ্ট্য। আগে ছিল কাঠের রথ। বর্তমানে যে রথটি আছে সেটি প্রায় ১৩৯ বছরের পুরনো। তখনকার মার্টিন এন্ড বার্ন কোম্পানির তৈরি এই রথের উচ্চতা ৫০ ফুট। যে রথের প্রধান ১টি চূড়া ও ছোট চূড়া থাকে ৮টি। ১২ টি লোহার চাকা সহ এই রথের ওজন প্রায় ১২৫ টন । বর্তমানে রথ দেখাশোনা করেন কলকাতার শ্যামবাজারের বসু পরিবার। রথযাত্রা ঘিরে গোটা শহর জুড়ে পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।






















