Saline Controversy: প্রসূতি মৃত্যুর কারণ 'সেপটিক শক', এর সঙ্গে কোন ডাক্তার অস্ত্রোপচার করছেন তার কোনও যোগ নেই
Toxic Saline: প্রসূতি মৃত্যুর দায় চিকিৎসকদের উপরই চাপাল নবান্ন। ১২ জন সাসপেন্ড হওয়া চিকিৎসকের বিরুদ্ধে দায়ের এফআইআর। স্যালাইন কি তাহলে ঠিকই ছিল? কী বলছেন সিনিয়র চিকিৎসক তমোনাশ চৌধুরী?

Saline Controversy: মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে মৃত্যু হয়েছে প্রসূতি মামণি রুইদাসের। এই ঘটনার পর প্রকাশ্যে এসেছে আরএল স্যালাইনের নাম। জানা গিয়েছে, নিষিদ্ধ এই স্যালাইন রমরমিয়ে ব্যবহার হচ্ছিল সরকারি হাসপাতালে। তবে সেইসবের ঊর্ধ্বে এখন আলোচনা এসে থেমেছে অন্য জায়গায়। মেদিনীপুর মেডিক্যালে প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনার যাবতীয় দায় চিকিৎসকদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। ১২ জন চিকিৎসককে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে সিআইডি তদন্ত হবে, এই ঘোষণাও করেছে নবান্ন।
মেদিনীপুর মেডিক্যালে যেদিন মামণির অস্ত্রোপচার হয়েছিল সেদিন দায়িত্বে থাকা এক সিনিয়র চিকিৎসকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগ, সরকারি হাসপাতালের অস্ত্রোপচার ছেড়ে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে বেসরকারি হাসপাতালে অন্য অস্ত্রোপচারে উপস্থিত ছিলেন ওই চিকিৎসক। এদিকে সিজারিয়ান অপারেশন ছেড়ে গিয়েছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকদের হাতে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, আরএমও সেদিন অপারেশন থিয়েটারেই নাকি যাননি। যাঁদের যেখানে উপস্থিত থাকার কথা ছিল, তাঁরা সেখানে ছিলেন না। অপটু হাতে অস্ত্রোপচার করেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। আর তাতেই ঘটেছে অঘটন। প্রসূতি মৃত্যুর যাবতীয় দায় চাপিয়ে সিনিয়র-জুনিয়র-সহ মোট ১২ জন চিকিৎসককে কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে। তাঁদের হবে ৬ জন পিজিটি অর্থাৎ জুনিয়র ডাক্তার।
গত ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪- তারিখে আরএল স্যালাইন তৈরিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল রাজ্য সরকার। তাহলে এই স্যালাইনের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি হল না কেন? অন্য রাজ্যে নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়া স্যালাইন কীভাবে এ রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে দেদার ব্যবহার করা হচ্ছিল? প্রশ্ন অনেক, উত্তর নেই একটারও। চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, যদি চিকিৎসকদের গাফিলতিতেই মেদিনীপুর মেডিক্যালে প্রসূতির মৃত্যু হয়ে থাকে, তাহলে রাজ্য সরকার এই নির্দিষ্ট আরএল স্যালাইন তৈরিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল কেন? কেনই বা বেশ কিছু ওষুধ বাতিল করা হয়েছিল? উঠছে একাধিক প্রশ্ন।
এই ঘটনা সম্পর্কিত আলোচনায় 'ঘণ্টাখানেক সঙ্গে সুমন' অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চিকিৎসক তমোনাশ চৌধুরী। ডাক্তারবাবুর বলেন, চিকিৎসায় গাফিলতি থাকলে তা অবশ্যই অন্যায়। অন্যায়ের শাস্তি হওয়া উচিৎ। তদন্ত হওয়া দরকার। কিন্তু গাফিলতি যে হয়েছে সেটা কে বিচার করবেন? বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রয়োজন। সিআইডি এই গাফিলতির বিচার করতে পারবে বলে, দক্ষ বলে মনে করেন না তিনি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালের তৈরি বিষাক্ত স্যালাইন, ওষুধ যার জন্য শুধু এখন নয়, আগেও যে সমস্যা হয়েছে, সর্বাঙ্গে যে চূড়ান্ত অন্যায় তা কী এইভাবে ঢাকা যাবে? এই প্রশ্নও তুলেছেন ডক্টর চৌধুরী।
রাজ্য সরকারের বিশেষ করে শাসকদলের পক্ষে থেকে যুক্তি দেওয়া হচ্ছে যে বিপুল পরিমাণে স্যালাইন যদি বিষাক্ত হয় তাহলে চিকিৎসকরা আগে প্রকাশ্যে কেন মুখ খোলেননি? আর যদি এত পরিমাণ স্যালাইন বিষাক্ত হয় তাহলে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা হওয়া অনেক বেশি সংখ্যক রোগীর উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ত। সেটা হয়নি। অতএব স্যালাইন পরিশুদ্ধ ছিল। এটা মানবেন?
সঞ্চালক সুমন দে'র এই প্রশ্নের জবাবে ডক্টর চৌধুরী বলেছেন, তিনি এই তথ্য একেবারেই মানবেন না। এক একটি স্যালাইনের বোতলে ব্যাকটেরিয়াল টক্সিন এক একরকম। আবার এক একজন মানুষের ইমিউনিটি এক এক ধরনের। তাই কার শরীরে কতটা পরিমাণ বিষাক্ত স্যালাইন গেলে কী প্রতিক্রিয়া হবে, তা নির্ভর করে তাঁর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর। এটা ভাবার কোনও কারণ নেই যে অন্য রাজ্যে যে স্যালাইন নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করা হচ্ছে, তা আমাদের রাজ্যে পরিশুদ্ধ। আর প্রসূতির মৃত্যুর কারণ ময়নাতদন্তের রিপোর্টে স্পষ্ট করে লেখা হয়েছে 'সেপটিক শক'। এর অর্থ ব্যাকটেরিয়াল টক্সিন কারও শরীরে প্রবেশ করে, অতি দ্রুত মাত্রায় ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়লে, তার ফলে মৃত্যু।
ডক্টর তমোনাশ চৌধুরী আরও বলেছেন, সিনিয়র কিংবা জুনিয়র চিকিৎসক কে অস্ত্রোপচার করেছেন তার উপর কিছু নির্ভর করছে না। বরং যা দিয়ে অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে, যে ছুরি-কাঁচি ব্যবহার করা হচ্ছে, যে কাপড় দিয়ে রোগীকে ঢেকে রাখা হচ্ছে, যেসব ওষুধ বা অন্যান্য জিনিস ব্যবহার করা হচ্ছে, তার থেকেই হতে পারে সেপটিক শকের সমস্যা। এইসব জিনিসের মাধ্যমেই রোগীর শরীরে প্রবেশ করতে পারে ব্যাকটেরিয়াল টক্সিন। ডাক্তারবাবু আরও বলেছেন, যদি সত্যিই সেই অস্ত্রোপচারের দিন দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক অন্যত্র গিয়ে অপারেশন করেন, তাহলে অন্যায়কে অন্যায় বলতে তাঁরা দ্বিধাবোধ করবেন না। অন্যায়ের শাস্তিও হবে। কিন্তু এই প্রসঙ্গ তুলে রাজ্য জুড়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় যা চলছে তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা একেবারেই ঠিক নয়।
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
