C V Ananda Bose: ধনকড় অধ্যায় অতীত! হাতেখড়ি অনুষ্ঠানে মমতার সঙ্গে খোশগল্পে রাজ্যপাল, ধারও মাড়ালেন না বিজেপি নেতৃত্ব
Suvendu Adhikari: রাজ্য়পাল যখন হাসি মুখে, উৎসাহের সঙ্গে বাংলায় অক্ষর লিখছেন, তার আগের মুহূর্তেও বিবৃতি দিয়ে রাজভবনে না যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেন শুভেন্দু।
কলকাতা: রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্বগ্রহণের পর কেটে গিয়েছে দু'মাস। কিন্তু পূর্ব সূরি জগদীপ ধনকড়ের মতো সরাসরি সংঘাতের পরিবর্তে এ যাবৎ বাংলার সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্কই বজায় রেখে চলতে দেখা গিয়েছে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। বৃহস্পতিবার, সরস্বতী পুজোয় আরও একবার তা ধরা পড়ল ক্যামেরায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে এ দিন বাংলায় প্রতীকী হাতেখড়ি হল তাঁর। সেখানে রাজ্য বিজেপি-র নেতাদের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। কিন্তু উপস্থিত ছিলেন খোদ মমতা, কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, বিধানসভা অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুও উপস্থিত ছিলেন। তবে রাজ্য বিজেপি-র নেতাদের দেখা যায়নি সেখানে। অথচ ধনকড় থাকাকালীন প্রায়শই রাজভবনে আনাগোনা লেগে থাকত বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, বিজেপি-র রাজ্য় সভাপতি সুকান্ত মজুমদারদের। তাতেই বর্তমান রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্য বিজেপি নেতাদের সমীকরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এর নেপথ্যে অন্য কোনও কারণ রয়েছে কিনা, তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।
কলকাতা তথা বাংলার সঙ্গে নিবিড় যোগের কথা বার বার তুলে ধরেছেন রাজ্যপাল বোস। রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্ব পেয়েই জানিয়েছিলেন, রোজ অন্তত একটি করে নতুন বাংলা শব্দ শিখবেন। তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই এ দিন সরস্বতী পুজোর উপলক্ষ্যকে কাজে লাগিয়ে হাতেখড়ি হল তাঁর। বলা বাহুল্য, রাজ্যের তরফেও সমান উদ্যোগ দেখা গিয়েছে রাজভবনে এই হাতেখড়ি অনুষ্ঠানকে ঘিরে। মমতার সঙ্গে রাজভবনে হাসিমুখে কথা বলতে দেখা যায় রাজ্যপাল, তাঁর স্ত্রীকেও। রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রী বসেনও পাশাপাশি। আর এই হাতেখড়ি অনুষ্ঠানকে ঘিরেই এখন সরগরম বাংলার রাজনীতি। আগাগোড়া এই হাতেখড়ি অনুষ্ঠানকে বিদ্রুপ করে গিয়েছেন শুভেন্দু। রাজ্য বিজেপি-র প্রাক্তন সভাপতি তথা অধুনা সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষও তাচ্ছিল্য করেছেন। হাতেখড়ির জন্য এই সরকার উপযুক্ত শিক্ষক নয়, রাজ্যপালকে এমন পরামর্শও দিতে শোনা গিয়েছে তাঁকে। তাই এ দিনের হাতেখড়ি অনুষ্ঠান থেকে দূরত্ব বজায় রাখেন তাঁরা।
এমনকি রাজ্য়পাল যখন হাসি মুখে, উৎসাহের সঙ্গে বাংলায় অক্ষর লিখছেন, তার আগের মুহূর্তেও বিবৃতি দিয়ে রাজভবনে না যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেন শুভেন্দু। তাঁর বক্তব্য ছিল, 'হাতে খড়ি হল শিক্ষার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক পরিচয়। একজন শিক্ষার্থী তাঁর উপস্থিতিতে, মিষ্টি বাংলা ভাষা শেখার, প্রথম পদক্ষেপ নিতে চাইছেন। কিন্তু আমার মনে হয়, অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তাঁকে অনুচিত শিক্ষা দেওয়া থেকে, নিজেকে বিরত রাখতে পারবেন না। করদাতাদের টাকা খরচ করে, এরকম অসঙ্গত এবং হাস্য়কর পরিস্থিতির সাক্ষী আমি থাকতে পারব না'।
এর আগে, রাজ্যপালের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানেও গরহাজির ছিলেন শুভেন্দু। তাই হাতেখড়ি অনুষ্ঠানেও তাঁর এই অনুপস্থিতি এবং ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। কারণ, ধনকড় রাজ্যপাল থাকাকালীন তাঁর সঙ্গে রাজ্যের সংঘাতে বরাবর ধনকড়েরই পক্ষ নিতেন শুভেন্দু। রাজ্যের বিরুদ্ধে নালিশ জানাতে রাজভবনেও আনাগোনা লেগে থাকত তাঁর। কিন্তু বর্তমান রাজ্যপাল রাজ্য সরকারের সঙ্গে যে ভাবে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলছেন, তাতে রাজ্য বিজেপি-র একাংশ অখুশি বলে শোনা যাচ্ছে। হাতেখড়ি অনুষ্ঠানকে ঘিরে রাজনৈতিক তরজা তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরাও।
এমনিতে কেন্দ্রের প্রতিনিধি হিসেবেই রাজ্যে থাকেন রাজ্যপাল। তাঁর সঙ্গে রাজ্যের সংঘাতের সাক্ষী আগেও হয়েছেন বঙ্গবাসী। কিন্তু বর্তমান রাজ্যপালের সঙ্গে মমতা সরকারের সমীকরণ এখনও পর্যন্ত যে ভাবে এগিয়েছে, তাতে সৌজন্যর আধিক্য রয়েছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তবে রাজনীতিতে যে কোনও মুহূর্তে পরিস্থিতি যে পাল্টে যেতে পারে, তাও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা।