Judiciary to Politics: বিচারবিভাগ থেকে রাজনীতির ময়দান, এর আগে এমন নিদর্শন রেখেছেন কারা?
Justice Abhijit Ganguly: অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি পদে ইস্তফা দিয়ে রাজনীতিতে নামার পর বিচারব্য়বস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে বিতর্ক আরও জোরাল হবে কি? চলছে আলোচনা
কলকাতা: লোকসভা ভোটের (Lok Sabha Election 2024) আগে বড়সড় চমক দিয়ে, রাজনীতিতে আসতে চলেছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়। অবশ্য় বিচারবিভাগ থেকে রাজনীতিতে আসার নজির এর আগেও রয়েছে অনেক। আবার বিচারপতিদের অবসরের পর, সরকারি পদ পাইয়ে দেওয়া নিয়ে, বিতর্কও দানা বেঁধেছে অনেকবার।
একুশের বিধানসভা ভোটের আগে, এক গঙ্গোপাধ্য়ায়ের রাজনীতিতে যোগদানের জল্পনা, সারা দেশে তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল। তিনি সৌরভ গঙ্গোপাধ্য়ায়। শেষ অবধি সেই জল্পনা সত্য়ি হয়নি। তবে এবার লোকসভা ভোটের আগে আরেক গঙ্গোপাধ্য়ায় রাজনীতিতে নেমে বড়সড় চমক দিতে চলেছেন! তিনি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায় (Justice Abhijit Ganguly resignation)।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্য়ায়ের ক্ষেত্রে যে দলে যোগদানের জল্পনা তৈরি হয়েছিল, বড় অঘটন না ঘটলে, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায় (Justice Abhijit Ganguly joins Politics) সেই বিজেপিতেই যোগ দিতে চলেছেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর। আদালত থেকে রাজনীতিতে আসার নজির অবশ্য় এর আগেও রয়েছে বিস্তর।
এ এম থিপসে, বিজয় বহুগুণা,এম রামা জোয়েস, রাজিন্দর সাচার- এই তালিকাটা দীর্ঘ। বিচারবিভাগ থেকে রাজনীতিতে (Judiciary to Politics) আসা বহু নাম নিয়ে অনেক বিতর্কও হয়েছে। যেমন বাহারুল ইসলাম। বিচারপতি বাহারুল ইসলাম ছিলেন কংগ্রেসের সদস্য়। ১৯৬২ এবং ১৯৬৮ সালে তিনি রাজ্য়সভায় নির্বাচিত হন।
১৯৭২ সালে রাজ্য়সভায় ইস্তফা দিয়ে ফের গুজরাত হাইকোর্টের বিচারপতি পদে যোগ দেন। অবসরের ৯ মাস পর তিনি ফের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন। ১৯৮৩ সালে দুর্নীতির মামলায় তাঁর একটি রায়, তদানীন্তন কংগ্রেস শাসিত বিহারের মুখ্য়মন্ত্রী জগন্নাথ মিশ্রর পক্ষে যায়। ১৯৮৩ সালেই বাহারুল ইসলাম কংগ্রেসের মনোনীত সদস্য় হিসেবে রাজ্য়সভায় যান।
আরেকটি নাম হল কে এস হেগড়ে। ১৯৩৫ সালে তিনি কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৫২ এবং ১৯৫৪ সালে দু'বার রাজ্য়সভায় নির্বাচিত হন। পরে আবার রাজ্য়সভায় ইস্তফা দিয়ে প্রথমে মাইসোর হাইকোর্টের বিচারপতি। তারপর সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হন।
১৯৭৩ সালে বিচারপতি কে এস হেগড়ে, বিচারপতি জে এম শেলট এবং বিচারপতি এ এন গ্রোভারকে টপকে বিচারপতি এ এন রায়কে প্রধান বিচারপতি করা হয়। এরপরই এই তিনজন বিচারপতি পদে ইস্তফা দেন।
১৯৭৭ সালেই বিচারপতি কে এস হেগড়ে জনতা পার্টির টিকিটে ভোটে দাঁড়ান। ১৯৭৭ সালে তিনি লোকসভার স্পিকার হন। জনতা পার্টি ভেঙে যাওয়ার পর কে এস হেগড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৬ অবধি বিজেপির সহ সভাপতি ছিলেন। ১৯৮৪ সালে লোকসভা ভোটে দাঁড়ালেও হেরে যান।
সুপ্রিম কোর্টের আরেক প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি কে সুব্বা রাও ১৯৬৭ সালে অবসরের কিছুদিন পরই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তবে জিততে পারেননি।
বিজেপির আইনজীবী নেতা, দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি একবার বলেছিলেন, 'অবসরের পরে নতুন পদ পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বিচারপতিদের অবসরের আগের রায়কে প্রভাবিত করে। এটা বিচারবিভাগের স্বাধীনতার পক্ষে বিপজ্জনক।'
পরে মোদি সরকারের জমানায় বিচারপতিরা অবসর নেওয়ার পরই তাঁদের বিভিন্ন সরকারি পদ পাইয়ে দেওয়া নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, এরফলে বিচারপতিদের একাংশের মধ্য়ে অবসরের আগে, সরকারের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ রায় দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে কিংবা আরও বাড়বে।
সাম্প্রতিক সময়েও এমন উদাহরণ রয়েছে:
২০২৪-এর ২৭ ফেব্রুয়ারি লোকপালের চেয়ারপার্সন নিযুক্ত করা হয় সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এম খানউইলকরকে। আর্থিক নয়ছয় প্রতিরোধ আইনে ED-র যেসব ক্ষমতা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছিল, অবসরের ঠিক আগে তাতেই সিলমোহর দেয় বিচারপতি খানউইলকরের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। ২০০২-এর গুজরাত হিংসায় নিহত কংগ্রেস নেতা এহসান জাফরির স্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূমিকা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যে মামলা করেছিলেন, তা-ও খারিজ করে দিয়েছিলেন এই বিচারপতি খানউইলকরই।
২০১৯ সালের অগাস্টে আর্থিক নয়ছয় প্রতিরোধ আইন অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে মোদি সরকার নিয়োগ করে দিল্লি হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সুনীল গৌড়কে। যিনি অবসরের আগে কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমের আগাম জামিন খারিজ করে দিয়েছিলেন।
২০২২ সালে মোদি সরকার, নয়াদিল্লি ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারের চেয়ারপার্সন নিযুক্ত করে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি হেমন্ত গুপ্তকে। যিনি কর্নাটকের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধ করার পক্ষে রায় দিয়েছিলেন।
সিবিআই প্রধান পদে রাকেশ আস্থানার নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলার মামলা খারিজ করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের যে বিচারপতি, সেই আর কে আগরওয়ালকেই অবসরের পরই জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান করে মোদি সরকার।
বিচারপতি আদর্শকুমার গেয়েল যেদিন সুপ্রিম কোর্ট পদে অবসর নেন, সেদিন সন্ধেয় তাঁকে জাতীয় পরিবেশ আদালতের চেয়ারপার্সন নিযুক্ত করে মোদি সরকারই।
সুপ্রিম কোর্ট থেকে অবসরের পরই মোদি সরকার প্রধান বিচারপতি পি সদাশিবমকে কেরলের রাজ্যপাল নিযুক্ত করে। যা নজিরবিহীন। আদালতের যে বেঞ্চ সোহরাবুদ্দিন শেখ এনকাউন্টার মামলায় অমিত শাহের বিরুদ্ধে দায়ের দ্বিতীয় FIR খারিজ করে দিয়েছিল, তাঁর সদস্য় ছিলেন এই বিচারপতি সদাশিবম।
ঐতিহাসিক অযোধ্য়া মামলার রায় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ। তার মধ্য়ে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ অবসর নেওয়ার পরপরই তাঁকে মনোনীত সদস্য় হিসেবে রাজ্য়সভায় পাঠানো হয়। যা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
বিচারপতি অশোক ভূষণকে জাতীয় কোম্পানি আইন আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়।
বিচারপতি SA নাজিরকে অবসরের পর রাজ্যপাল হিসেবে নিয়োগ করে মোদি সরকার। এই বেঞ্চেরই সদস্য় শরদ অরবিন্দ বোবডে পরে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হন। তিনি একবার নাগপুরে গিয়ে RSS প্রধান মোহন ভাগবতের সঙ্গে দেখাও করেছিলেন।
এবার অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি পদে ইস্তফা দিয়ে রাজনীতিতে নামার পর বিচারব্য়বস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে বিতর্ক আরও জোরাল হতে পারে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
আরও পড়ুন: 'মোদি হিন্দু নন...', পটনার সভা থেকে বেনজির তোপ লালুর